পদ্মার চরে পুলিশ, র‍্যাব ও এপিবিএন সদস্যদের যৌথ অভিযান ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইটে’ মোট ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র। রাজশাহীর বাঘা, পাবনার বেড়ার আমিনপুর ও ঈশ্বরদী, নাটোরের লালপুরে পদ্মার চরে আজ রোববার ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এই অভিযান চালানো হয়।

অভিযান শেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শকের (ডিআইজি) সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, পদ্মার চরে কাকন বাহিনীসহ মোট ১১টি বাহিনী সক্রিয় আছে। এই অভিযানে তাদের সদস্যদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা চরের সক্রিয় সন্ত্রাসী ছিলেন। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টিমের ১ হাজার ২০০ সদস্য অভিযানে অংশ নেন।

সম্প্রতি পদ্মার চরকেন্দ্রিক অপরাধ বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে ‘কাকন বাহিনী’র নাম আসে। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কথায় কথায় গুলি করে, মানুষ হত্যা করে, চরের বালু ও ফসল লুট করে, অপহরণ ও চাঁদাবাজি করে।

শেষ গত ২৭ অক্টোবর চরে ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে ‘কাকন বাহিনী’র গুলিতে তিন কৃষক নিহত হন। এ ঘটনায় বাহিনীর প্রধান হাসিনুজ্জামান কাকনসহ কয়েকজনের নামে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় একটি মামলা হয়। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও কুষ্টিয়ায় মোট ছয়টি মামলা হয়েছে এই বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে।

সক্রিয় ১১টি বাহিনী

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আপনারা জানেন যে সাম্প্রতিকালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পদ্মার চরাঞ্চল বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পুলিশ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করছে, এ রকম একটা অভিযোগ ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি সেই অভিযোগ খণ্ডন করার জন্য।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা বাহিনীগুলোর নাম উল্লেখ করে বলেন, হাসিনুজ্জামান কাকন ইঞ্জিনিয়ার কাকন হিসেবে পরিচিত। তাঁর বাহিনীর নির্মমতায় চরাঞ্চলবাসী উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায় আছেন। এই চরে আরও যেসব বাহিনী আছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মন্ডল বাহিনী, টুকু বাহিনী, সাইদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরিফ তাগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী, বাহান্ন বাহিনী, শুকচাঁদ ও গাহারুর বাহিনীসহ মোট ১১টি।

আরও পড়ুনচার জেলায় পদ্মার চরে হঠাৎ কেন দেড় হাজার পুলিশের বিশেষ অভিযান৭ ঘণ্টা আগে

নাম কেন ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’

অভিযানের নামের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ডিআইজি বলেন, তাঁরা রাতে গিয়ে অবস্থান নিয়েছেন, কিন্তু চরে নামেননি। ভোরের দিকে আকাশে যে আলো দেখা দেয়, তখন অভিযান শুরু করেছেন। এই আলো সকালকে ডাকে, মানুষের জন্য স্বপ্ন হয়ে আসে। সে জন্য তাঁরা অভিযানের নাম দিয়েছেন ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’। তিনি মনে করেন, এই অভিযানের মাধ্যমে ওই এলাকার মানুষের জীবনে স্বস্তি আসবে।

অভিযানের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল রাজশাহী, নাটোর ও পাবনার বিস্তীর্ণ পদ্মা চরের বাসিন্দাদের বিভিন্ন বাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতনের হাত থেকে নিরাপত্তা দিতে কাজ করা। এটা শেষ নয়, শুরু। তিন জেলায় মোট গ্রেপ্তার হয়েছে ৫৮ জন। এ ছাড়া ১০টি অস্ত্রসহ গুলি, হাঁসুয়া, ডেগার, ছোরা, চাকু, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাজা, মোটরসাইকেল, লোহার পাইপ, টিউবওয়েল জব্দ করার তথ্য জানান তিনি।

কুষ্টিয়ায় গ্রেপ্তার আরও ৯

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরেও পদ্মার চরে পুলিশ পৃথক অভিযান চালায়। বিকেল চারটার দিকে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস্) ফয়সাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ৩১৫ জন পুলিশ সদস্য ১০ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। চরের গভীর থেকে দুটি অস্থায়ী তাঁবু, একটি স্পিডবোট, দুটি নৌকা, তিনটি মোটরসাইকেল, তিনটি মুঠোফোন ও অস্ত্র রাখার জন্য বিশেষভাবে তৈরি দুটি চেম্বার উদ্ধার করা হয়।

এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার মো.

মিজানুর রহমান। তদারক করেন খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন) শেখ জয়নুদ্দীন। পুলিশ কর্মকর্তা ফয়সাল মাহমুদ বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা কাকন বাহিনী বা অন্য কোনো বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, তা এখনো জানা যায়নি। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে কুষ্টিয়ার অভিযান সম্পর্কে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, গতকাল শনিবার রাতে একই সময়ে কুষ্টিয়া জেলায় এ রকম একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। যেহেতু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অভয়ারণ্য দৌলতপুর, কুষ্টিয়া জেলার একটি থানা; তাই সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে।

আরও পড়ুনকথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল৩১ অক্টোবর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদস য ড আইজ

এছাড়াও পড়ুন:

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমের হাইকোর্টে জামিন

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আগামীকাল সোমবার শুনানির জন্য নির্ধারণ করেছেন চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক আজ রোববার এ আদেশ দেন।

ওই মামলায় ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আবেদন করে, যা চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খন্দকার বাহার রুমি ও রেজা মো. সাদেকীন। মঞ্জুরুল আলমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন ও রমজান আলী শিকদার এবং আইনজীবী প্রিয়া আহসান চৌধুরী। লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খন্দকার বাহার রুমি প্রথম আলোকে বলেন, চেম্বার আদালত আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আগামীকাল সোমবার শুনানির জন্য নির্ধারণ করেছেন।

আটকের ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পর গত ২৮ আগস্ট দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। রাজধানীর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

গত ২৮ আগস্ট সকালে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমানসহ অন্যরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে যান। ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন শেখ হাফিজুর রহমান। শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। এ সময় তাঁরা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

একপর্যায়ে তাঁরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল এলে তাঁরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন।

আরও পড়ুনলতিফ সিদ্দিকী বললেন, আদালতের প্রতি আস্থা নেই, কী হলো এজলাসে২৯ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ