আইএমএফকে বলেছি, এই মুহূর্তে ঋণের কিস্তির দরকার নেই: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 9th, November 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে এই মুহূর্তে ঋণের কিস্তির দরকার নেই বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আইএমএফকে আমরা বলেছি, এই মুহূর্তে আমাদের ঋণের কিস্তির দরকার নেই। তারা বরং আগে পর্যালোচনা করুক।’
আইএমএফের সঙ্গে চলমান ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ পাওয়া প্রসঙ্গে আজ রোববার প্রথম মুখ খুললেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এদিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করবে আইএমএফ। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সংস্থাটির আরেকটি মিশন বাংলাদেশে আসবে। ওই সময় তারা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেবে।
নির্বাচিত সরকার কতটা ঋণ চায়, তা নিয়ে ফেব্রুয়ারির মিশনে আলোচনা করবে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশ ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। তবে তাদের কিছু পরামর্শ আছে। যেমন বাংলাদেশকে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে এবং ব্যয় বাড়াতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী সরকারকে আইএমএফের ঋণ, সংস্কারের শর্তসহ সব বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ তৈরি করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। পরে এ বছরের জুন মাসে আইএমএফের পর্ষদ বাংলাদেশের ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ বাড়িয়েছে ছয় মাস এবং বাড়তি ৮০ কোটি ডলার যুক্ত করেছে। এভাবেই ঋণ কর্মসূচির মোট আকার এখন ৫৫০ কোটি ডলার।
আইএমএফ থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার, ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার এবং ২০২৫ সালের জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩৩ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ পাঁচ কিস্তিতে বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে পেয়েছে ৩৬৪ কোটি ডলার। বাকি আছে ১৮৬ কোটি ডলার।
গত ২৯ অক্টোবর থেকে দুই সপ্তাহের সফরে আইএমএফের একটি মিশন রয়েছে ঢাকায়। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করছে এ মিশন। ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ ‘পরিমাণগত কর্মক্ষমতা মানদণ্ড’ (কোয়ান্টিটেটিভ পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়া বা কিউপিসি) কতটা পূরণ করছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
কিউপিসি হচ্ছে আইএমএফের বাধ্যতামূলক শর্ত। গত মে মাসে কিউপিসির কিছু শর্ত যুক্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ, জ্বালানি ও সার আমদানির বকেয়া পরিশোধ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ। এ তালিকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্তও আছে। এসব শর্ত পূরণ না হলে আইএমএফ পরের কিস্তি দেয় না। তবে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ চাইলে কোনো কোনো শর্তের বিষয়ে পূর্ণ বা আংশিক অব্যাহতি দিতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী সরকার: অর্থ উপদেষ্টা
নতুন পে কমিশন গঠনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে আগামী সরকার-এ কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
রবিবার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “পে কমিশনের বিষয়ে আমরা এখন কিছু বলতে পারছি না। বিষয়টি আগামী সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তবে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, প্রাথমিক কাজগুলো শুরু হয়েছে। পরবর্তী সরকার চাইলে এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে।”
আইএমএফ আলোচনা ও সংস্কার অগ্রগতি
আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) সঙ্গে চলমান আলোচনার প্রসঙ্গে তিনি জানান, আগামী ১৫ নভেম্বর সংস্থাটির সঙ্গে তার চূড়ান্ত আলোচনা হবে। “আইএমএফের সঙ্গে আমার জুম মিটিং হয়েছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। তারা মনে করছে আমরা যেভাবে সংস্কার ও সমন্বয়ের কাজ করছি, সেটা ইতিবাচক,” বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, “ওদের কিছু সুপারিশ আছে, যেমন রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। এটা আমি স্বীকার করি—আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত এখনো কম। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। অনেক মানুষ ট্যাক্স দিতে চায় না, আবার এনবিআর দুই মাস বন্ধ থাকার কারণে রাজস্ব আয়ে ধাক্কা লেগেছে। আমরা এখন তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।”
অর্থ উপদেষ্টা জানান, আইএমএফ সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছে। “বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ও খাদ্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে তারা। খাদ্যখাতে আমরা তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছি,” বলেন তিনি।
নির্বাচনের আগে সংস্কারের অবস্থা
নির্বাচনের তিন মাস বাকি, এমন প্রেক্ষাপটে সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে আমরা যা করেছি, সেটাকে সুসংগঠিত করাই এখন লক্ষ্য। সংস্কার তো একদিনে শেষ করা যায় না, এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমরা এটিকে একটি সমন্বিত প্যাকেজ আকারে সাজিয়ে আগামী সরকারের কাছে হস্তান্তর করব।”
তিনি আরও জানান, রাজস্ব সংস্কারের জন্য একটি স্বতন্ত্র কমিটি ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। “কিছু অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদকে নিয়ে কমিটি করেছি, তারা স্বাধীনভাবে সুপারিশ দেবেন,” বলেন তিনি।
ব্যাংকিং খাতই বড় চ্যালেঞ্জ
দেশের ব্যাংকিং খাতকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ব্যাংকিং সেক্টরে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও আমরা পদক্ষেপ নেব। এসব কার্যক্রম পরবর্তী সরকারের জন্য একটি দিকনির্দেশনা তৈরি করবে।”
আইএমএফের পরবর্তী কিস্তি
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আইএমএফের ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি পাওয়া যাবে কিনা—এমন প্রশ্নে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি যে, এখন কিস্তি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আইএমএফ চায় নতুন রাজনৈতিক সরকার আসার পর তারা রিভিউ সম্পন্ন করুক। ফেব্রুয়ারির দিকে, নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে, তারা পুনরায় পর্যালোচনায় আসবে এবং এরপর সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিনি বলেন, “আমরা যা যা সংস্কার করছি, আইএমএফ তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা দেখতে চায় নতুন সরকার কতটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। সেটিই এখন মূল বিষয়।”
ঢাকা/এএএম//