উদ্বোধনের আগেই কালভার্টের সংযোগ সড়কে ধস
Published: 9th, May 2025 GMT
কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের দ্বীপপুর গ্রামে নির্মিত বক্স কালভার্ট দিয়ে এখনও গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি। এর আগেই ধসে পড়তে শুরু করেছে দুই পাশের সংযোগ সড়ক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণকাজের ত্রুটির কারণেই এমন অবস্থা। এতে সরকারি লাখ লাখ টাকা খরচ হলেও গ্রামীণ জনপদের চাহিদা মেটানোর আগেই কালভার্টটি অচল হতে বসেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, চিকনটুপ গারামপাড়া থেকে দ্বীপপুর গ্রাম পর্যন্ত খালের ওপর নির্মিত ৯ দশমিক ৭৫ মিটার দীর্ঘ বক্স কালভার্টটির দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটি সরে গিয়ে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির পানির স্রোতে মাটি সরে যাওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে। যানবাহন চলাচলের উপযোগিতা হারিয়েছে কালভার্টটি।
স্থানীয় বাসিন্দা পিটারসন কুবি পিটার জানান, অনেক আবেদন-নিবেদনের পর কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন দেখছেন কাজ শেষ না হতেই ধসে পড়ছে দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটি। মেরামত না করলে কালভার্টটি তাদের কোনো কাজেই আসবে না। ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত সড়ক মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, ৩৬ লাখ ৫৫ হাজার ১৮ টাকা ব্যয়ে বক্স কালভার্টটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। কাজ করেছে মদন উপজেলার মেসার্স মীম কনস্ট্রাকশন। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ, কালভার্টটির নির্মাণকাজে নয়ছয় করেছেন ঠিকাদার। এ কারণেই গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ার আগেই দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটি ধসে গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, পরিকল্পনা ও তদারকি ছাড়া এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সরকারি অর্থ অপচয় হবে, আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে সাধারণ মানুষকে।
অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ঠিকাদারকে পাওয়া যায়নি। পরে কথা হয় উপসহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, নির্মাণকাজ পুরাপুরি শেষ হয়নি। সংযোগ সড়ক কিছুটা ধসে গেছে। এটি সাময়িক, দ্রুত মেরামত করা হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান পাঠানের ভাষ্য, এই কালভার্টটি এলাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ ই প শ র স য গ সড়ক র আগ ই
এছাড়াও পড়ুন:
মামদানিকে ঠেকাতে নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন রিপাবলিকানরা, তা কি সম্ভব
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের প্রথম মুসলিম মেয়রের পদে বসছেন জোহরান মামদানি। শহরটিতে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রথম মেয়রও হচ্ছেন তিনি। এটি মোটেও মেনে নিতে পারছেন না মামদানির রিপাবলিকান নিন্দুকেরা। যেকোনো মূল্যে তাঁর মেয়র পদে বসা ঠেকাতে চাচ্ছেন তাঁরা। তাই এবার মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন।
নির্বাচনের আগে থেকে মামদানিকে নিয়ে নানা কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ৩৪ বছর বয়সী এই মুসলিমকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এমনকি হুমকি দিয়ে এ–ও বলেছেন, মামদানি মেয়র হলে নিউইয়র্কে কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ করে দেবেন।
ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে রিপাবলিকান কয়েকজন আইনপ্রণেতা মামদানির নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রক্রিয়া তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। কয়েকজন আবার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার কথা বলেছেন। এই আইনপ্রণেতাদের অভিযোগ মামদানি কমিউনিস্ট এবং ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। যদিও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তাঁরা।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে মামদানির নাগরিকত্বের বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেছিলেন প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য অ্যান্ডি ওগলেস। পরে গত ২৯ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘মামদানি যদি নাগরিকত্ব–সংক্রান্ত নথিপত্রে মিথ্যা বলে থাকেন, তাহলে তিনি নাগরিক থাকতে পারবেন না। আর অবশ্যই নিউইয়র্ক শহরের মেয়র নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’
জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডায়। ১৯৯৮ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। ২০১৮ সালে দেশটির নাগরিকত্ব পান।মামদানিকে কমিউনিস্ট ও সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ওগলেস আরও বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সমাজতন্ত্র বা সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করতে হয়। আমার সন্দেহ আছে তিনি (মামদানি) এগুলো প্রকাশ করেছিলেন কি না। আমার এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে উগান্ডায় যাওয়া প্রথম ফ্লাইটেই তাঁকে ফেরত পাঠান।’
মামদানির নাগরিকত্ব নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন প্রতিনিধি পরিষদে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সদস্য রেন্ডি ফাইন। ফাইন ও ওগলেস—দুজনের কাছেই তাঁদের বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য চেয়েছিল মার্কিন ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট পলিটিফ্যাক্ট। তবে কোনো জবাব দেননি তাঁরা। আর মামদানি তাঁর নাগরিকত্বের আবেদনে মিথ্যা বলেছিলেন—এমন কোনো তথ্যও পায়নি ওয়েবসাইটটি।
জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডায়। ১৯৯৮ সালের মাত্র সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। ২০১৮ সালে দেশটির নাগরিকত্ব পান। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, দেশটির নাগরিকত্ব পেতে একজন বিদেশি প্রাপ্তবয়স্ককে অবশ্যই আইন মেনে টানা পাঁচ বছর বসবাস করতে হবে। আর মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করলে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য দেশটিতে অন্তত তিন বছর টানা বসবাস করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল শুধু দেশটির আদালত করতে পারেন। মামদানির নাগরিকত্বের আবেদন দিয়ে ওগলেস ও ফাইন যে অভিযোগ এনেছেন, তার পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখছেন না অভিবাসী আইনবিশেষজ্ঞরা। অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবী জেরেমি ম্যাককিনলে বলেন, ‘মামদানি নাগরিক হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় অযোগ্য ছিলেন বা নথিতে কোনো কিছু লুকিয়েছেন—এমন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আমার চোখে পড়েনি।’
মামদানি একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী। তিনি ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট অব আমেরিকা নামের একটি সংগঠনের সদস্যও।রিপাবলিকানদের অভিযোগ পুরোনোগত গ্রীষ্মে মামদানি যখন ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন থেকে তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেন রিপাবলিকানরা। গত জুনে পাম বন্ডিকে লেখা একটি চিঠিতে মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ওগলেস। তিনি বলেছিলেন, মামদানি হয়তো ‘নাগরিকত্ব গ্রহণের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য বিকৃত করেছিলেন বা সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের কথা গোপন করেছিলেন।’
‘হোলি ল্যান্ড ফাইভের’ প্রতি সমর্থন জানিয়ে মামদানির লেখা একটি র্যাপ সংগীতের কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন ওগলেস। হোলি ল্যান্ড ফাইভের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে মুসলিম দাতব্য সংস্থা ‘হোলি ল্যান্ড ফাউন্ডেশনের’ পাঁচ ব্যক্তিকে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রতি সমর্থনের জন্য ২০০৮ সালে তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। যদিও ওই মামলায় উপস্থাপন করা প্রমাণ ও গুজবের ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন কয়েকজন আইনজীবী।
নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে বিরল হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে তা প্রায়ই ঘটছে বলে উল্লেখ করেছেন নিউইয়র্কের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক ইরিনা মান্ত্রা।মা, বাবা ও স্ত্রীর সঙ্গে জোহরান মামদানি