‘অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস’ অর্থ কী, নামটা এল কোথা থেকে
Published: 10th, May 2025 GMT
পাকিস্তানে বিনা প্ররোচনায় গত মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর ভারতের হামলা চালানোর জবাবে আজ শনিবার দেশটির বিরুদ্ধে ‘বুনইয়ান-উন-মারসুস’ নামে একটি পাল্টা সামরিক অভিযান শুরু করেছে পাকিস্তান। এর অংশ হিসেবে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মজুতাগার ও একাধিক সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে।
পাকিস্তানের এই পাল্টা হামলার আগে দেশটি দাবি করেছে যে আজ ভোরে তিনটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ভারত। এর একটি রাজধানী ইসলামাবাদের কাছাকাছি ছিল। তবে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র আটকে দিয়েছে।
ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি বন্দুকধারীদের এক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার জেরে গত মঙ্গলবার পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিযান চালায় ভারত। এরপর দুদেশই পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে আজ ভারতের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’ নামে নতুন মাত্রায় সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। এর আগে ইসলামাবাদ ভারতের হামলার সমুচিত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল।
পাকিস্তানের নতুন অভিযানের নামকরণ ‘বুনইয়ান-উন-মারসুস’ করা হয়েছে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত থেকে। এর অর্থ ‘গলিত সিসা দিয়ে গড়া এক প্রাচীর’, যা মুসলিমদের শক্তি, ঐক্য ও দৃঢ়তার প্রতীক।পাকিস্তানের নতুন অভিযানের নামকরণ ‘বুনইয়ান–উন–মারসুস’ করা হয়েছে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত থেকে। এর অর্থ ‘গলিত সিসা দিয়ে গড়া এক প্রাচীর’, যা মুসলিমদের শক্তি, ঐক্য ও দৃঢ়তার প্রতীক।
এই অভিযানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান তার মাটিতে ভারতের হামলায় নিহত শিশুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের সুপারসনিক ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্রের মজুতাগারে হামলার দাবি পাকিস্তানের১ ঘণ্টা আগেসামরিক যানে পাকিস্তানের কয়েকজন সেনাসদস্য। সম্প্রতি পাকিস্তানে ভারতের হামলায় নিহত কয়েক শিশুর নামসংবলিত ব্যানার টানানো হয়েছে যানটিতে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিরল গাছ কৃষ্ণবট
সারা পৃথিবীতে বটের কত যে ভাইবোন আছে, কে জানে! এ দেশেই আছে অন্তত ১৫ রকমের বট। এগুলোর একটি কৃষ্ণবট। এ গাছের অন্য নাম কৃষ্ণডুমুর। বট একান্তই বাংলার গাছ, সে অর্থে কৃষ্ণবটও এ অঞ্চলের গাছ।
বট ও কৃষ্ণবট—দুটিই মোরেসি গোত্রের গাছ, ডুমুরও এ গোত্রের। বটের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ficus benghalensis এবং কৃষ্ণবটের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ficus krishnae। তৎকালীন বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, কলকাতার পরিচালক ডেভিড প্রেইন ১৮৯৬ সালে হাওড়ার আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেনের কাছে থাকা একজনের ব্যক্তিগত বাগানে এই প্রজাতির দেখা পান। সেই গাছের দুটি ডাল কেটে এনে তিনি বাগানে পুঁতে দেন, যা থেকে দুটি গাছের জন্ম হয়। পরবর্তী সময়ে ওই দুটি গাছ থেকে আবার ডাল কেটে কেটে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে ও ওয়ারীতে বলধা গার্ডেনে দুটি কৃষ্ণবটগাছ লাগানো হয়। গাছ দুটি বেশ বড়, তবে অন্য বটের মতো বিশাল নয়। কৃষ্ণবটের ঝুরি অন্য বটের মতো নামে না, পাতাগুলোও অন্য রকম, উচ্চতাও কম। কৃষ্ণবটের পাতা যেন ঝালমুড়ি খাওয়ার ঠোঙা, বোঁটার কাছে দুই পাশ থেকে পত্রফলক কেউ যেন টেনে আঠা দিয়ে জুড়ে পকেট তৈরি করে দিয়েছে। এই অদ্ভুত আকৃতিই কৃষ্ণবটকে অন্যান্য বটগাছ থেকে আলাদা করে দিয়েছে।
পাতার এই ঠোঙার মতো গড়ন অনেক লোককাহিনির জন্ম দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় কাহিনির একটি হলো, শ্রীকৃষ্ণ মাখন খেতে খুব পছন্দ করতেন। তাই তিনি প্রায়ই শিকেয় তুলে রাখা মাখনের ভাণ্ড থেকে মাখন চুরি করে খেতেন। একবার যখন মা যশোদা তাঁকে মাখন চুরি করার সময় ধরে ফেললেন, তখন তিনি এই বটের পাতাকে ঠোঙার মতো করে তার মধ্যে মাখন লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। তখন থেকেই এ গাছের পাতার এরূপ গড়ন। এ কাহিনি কৃষ্ণবটের নামকরণের পেছনেও ভূমিকা রাখতে পারে। এ থেকে হিন্দিতে এ গাছের নাম রাখা হয়েছে ‘মাখন কোটরি’। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এ গাছ আছে।
ঢাকা শহরে আর কোথাও কৃষ্ণবটগাছ চোখে পড়েনি। তবে ২০২৪ সালের জুনে অনুষ্ঠিত আগারগাঁওয়ে বৃক্ষমেলায় কয়েকটি নার্সারিতে বিদেশ থেকে আমদানি করা বেশ কিছু কৃষ্ণবটের চারা বিক্রি করতে দেখা গেছে। তাতে মনে হয়, এখন দেশের আরও অনেক জায়গায় এ গাছ ছড়িয়ে পড়েছে।
বলধা গার্ডেনের কৃষ্ণবটগাছের নামফলকে লেখা আছে, ‘পাতা মুড়ির ঠোঙার মতো ফোল্ডিং হয়ে থাকে। টুনটুনি পাখি অনায়াসে এই পাতায় বাসা করতে পারে। ধারণা করা হয়, বটের এই পাতায় কৃষ্ণ মাখন চুরি করে খেত বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে কৃষ্ণবট।’
বলধা গার্ডেনের নামফলকে কৃষ্ণবটের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম লেখা রয়েছে Ficus benghalensis var. krishnae; অর্থাৎ কৃষ্ণবটকে বটের একটি জাত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কলকাতার আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেনের তথ্যমতে, কৃষ্ণবটের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ficus krishnae। কৃষ্ণবট পাতা দিয়েই যে বটগাছের থেকে আলাদা, শুধু তা–ই নয়,Ñ এ দুটি প্রজাতির ক্রোমোজোম, ডিএনএ গঠন ইত্যাদির বিচারেও পৃথক। তাই এটিকে আলাদা একটি প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করাই সংগত, জাত নয়।
কৃষ্ণবটগাছের পাতা বটের মতো সম্পূর্ণ ঝরে যায় না, আবার বটের মতো অনেক পাতা নিয়ে ডালপালা ছায়া তৈরি করে না, গাছ চিরসবুজ বৃহদাকারের বৃক্ষ, ৮ থেকে ২২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। ডালপালাগুলো এলোমেলেভাবে ছড়ায়, স্বল্প কিছু ঝুরি নামে বয়স্ক ডাল থেকে। পাতা দেখতে অনেকটা কাঁঠালপাতার মতো হলেও তার গোড়া কাপ বা ঠোঙার মতো। পাতা ৮ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার চওড়া। পাতার বোঁটা ভাঙলে সেখান থেকে সাদা দুধের মতো আঠালো কষ ঝরে। ফল খুব ছোট, আকার মাত্র ১ থেকে ৩ মিলিমিটার। ফল পাকলে লাল হয়ে যায়।
কৃষ্ণবটগাছের ঔষধি গুণ রয়েছে। এ গাছের শিকড়, ডালপালা, পাতা ও ফল থেকে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করা হয়। বিশেষ করে আলসার বা ক্ষত, জ্বর, কুষ্ঠ, বমি, আমাশয়, সিফিলিস, যকৃতের প্রদাহ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয় বলে বিভিন্ন গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে।
মৃত্যুঞ্জয় রায়: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক