চট্টগ্রামের ট্রেন ভাড়া ১০৫ টাকা স্টেশনে যেতে লাগে ৩০০ টাকা
Published: 10th, May 2025 GMT
দুপুর সাড়ে ১২টা, লোহাগাড়া রেলস্টেশন। কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম অভিমুখী প্রবাল এক্সপ্রেস স্টেশনে পৌঁছার কথা ১২টা ১১ মিনিটে, ২ মিনিট বিরতির পর ছাড়ার কথা। ইতোমধ্যে ১৯ মিনিট লেট, তবু ট্রেন আসেনি। ১২টা ৪৫ মিনিটে স্টেশনে ঢুকল প্রবাল এক্সপ্রেস। মাত্র ৪ জন যাত্রী উঠলেন ট্রেনে, নামলেন ২ জন। ২ মিনিট দাঁড়ানোর কথা থাকলেও ১৫ মিনিট পর ট্রেনটি চট্টগ্রামের দিকে যাত্রা করে। এ একটি ট্রেনই লোহাগাড়া স্টেশনে দিনে দুইবার থামে। এটি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে কক্সবাজার স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে এবং বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অভিমুখে ছাড়ার কথা। তবে ট্রেনটি প্রায় প্রতিদিনই ৩০ থেকে ৫০ মিনিট লেট করে। কখনও তা ঘণ্টার কাঁটা পার করে দেয়।
সরেজমিন দেখা গেল, রেলস্টেশনের সব কক্ষে তালা ঝোলানো। শুধু স্টেশনমাস্টারের কক্ষটি খোলা ছিল। স্টেশনমাস্টার মুহাম্মদ লোকমান বলেন, ‘লোহাগাড়া স্টেশনে যাত্রী তেমন নেই। স্টেশনে যাতায়াতের সংযোগ সড়কটি নির্মাণ না হওয়ায় যাত্রী মিলছে না। লোহাগাড়া সদর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে যাত্রীদের আসতে হয় স্টেশনে, গুণতে হয় ৩০০ টাকা, যা চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনের ভাড়ার প্রায় তিনগুণ। এই অবস্থায়ও যারা ট্রেনে চড়েন তারা আসলে শখের বশে আসেন।’
প্রসঙ্গত, লোহাগাড়া থেকে চট্টগ্রামের ট্রেন ভাড়া প্রথম শ্রেণি চেয়ার ১০৫ টাকা ও শোভন চেয়ার ৮৫ টাকা। কক্সবাজার পর্যন্ত ভাড়া প্রথম শ্রেণি চেয়ার ১৪০ টাকা ও শোভন চেয়ার ১২৫ টাকা। লোহাগাড়া সদর থেকে বাসে চট্টগ্রামের ভাড়া ১০০ টাকা ও কক্সবাজারের ভাড়া ১৪০ টাকা। অথচ সদর রেলস্টেশনে আসা-যাওয়ায় খরচ হয় ৩০০ করে ৬০০ টাকা।
স্টেশনমাস্টার আরও জানান, রেলস্টেশন এখনও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপ রেল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়নি। এ স্টেশনের কারণে কক্ষগুলোতে তালা ঝোলানো রয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন কক্ষে শ্রমিকরা কাজ করছেন। নিচে এলোমেলোভাবে বিদ্যুতের তার পড়ে আছে। লোহা, কংক্রিট, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ছড়ানো-ছিটানো এখানে সেখানে। যাত্রীদের বিশ্রামাগারে নেই কোনো আসবাব।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের লোহাগাড়া রেলস্টেশন চালু করা হলেও এখনও চালু হয়নি যাতায়াতের সড়ক। উপজেলার হাজী রাস্তা নামক এলাকার পশ্চিম দিকে রেলস্টেশনে যাওয়ার সড়ক। সড়ক নয় যেন মেঠোপথ, পাড়া-মহল্লার মধ্য দিয়ে ছোট এ সড়ক দিয়ে যেতে হয় রেলস্টেশনে। তবে স্টেশনে পৌঁছার আগে সড়কে একটি কালভার্ট এক বছর ধরে নির্মাণাধীন। সে কারণে স্টেশন পর্যন্ত যানবাহন পৌঁছাতে পারে না।
তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কর্মকর্তা মো.
চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক এ বি এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘লোহাগাড়া রেল স্টেশনের ফিনিশিং কাজ চলছে। খুব শিগগিরইই আমরা স্টেশন বুঝে নেব। এরপর যাত্রীরা স্টেশনের সকল সুযোগ সুবিধা পাবেন।’
যাত্রী মাওলানা মকছুদ বলেন, ‘শখ করে ট্রেনে চট্টগ্রাম যাচ্ছি। সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় স্টেশন পর্যন্ত গাড়ি আসে না। ৩০০ টাকা দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে স্টেশনে এসেছি।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সদর থেকে এত দূরে কেন রেল স্টেশন করা হলো? কার স্বার্থে করা হলো?’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লোহাগাড়া রেল স্টেশনে যাতায়াতের দুটি সড়ক রয়েছে। যেটি মানুষ বেশি ব্যবহার করেন সেটা হলো– আধুনগর খান হাট থেকে চুনতি হাজির রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়কটি। এ সড়ক উন্নয়নে বরাদ্দ হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। সড়ক উন্নয়নের কাজ পেয়েছেন বান্দরবান জেলার ঠিকাদার ইউ টি মং।
জানা যায়, ঠিকাদার নিজে সড়কের কাজ না লোহাগাড়ার স্থানীয় ঠিকাদারদের সাব–কন্ট্রাক দিয়েছেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ঠিকাদাররা নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করেন। স্থানীয়রা সড়কটির নির্মাণ কাজ নিয়ে বিভিন্ন সময় অনিয়মের অভিযোগ তুলেন। তারপরও ঠিকাদার কাউকে তোয়াক্কা না করে কাজ চালিয়ে যান। তবে একবছর আগে কালভার্টের কাজ অর্ধসমাপ্ত রেখে লাপাত্তা হয়ে যান ঠিকাদার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারায় গত বছরের ৩১ মে সড়কের কাজ পরিমাপ করা হয়। সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সুমন তালুকদারকে আহবায়ক ও উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইফরাদ বিন মুনীরকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা সড়কের বাকি অংশটুকুর কাজ না করার জন্য নির্দেশ দেন। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে কমিটি পরবর্তী ৭ দিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও দেয়নি।
লোহাগাড়া উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশল মুহাম্মদ ইফরাদ বিন মুনীর বলেন, ‘আগের ঠিকাদারকে কাজ না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন
সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।
স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, “নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”
মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”
মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”
ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ