দেশে প্রয়োজনের চেয়ে ৮২ শতাংশ নার্স কম
Published: 12th, May 2025 GMT
জনসংখ্যার বিবেচনায় দেশে এখন ৩ লাখ ১০ হাজার ৫০০ নার্স থাকা দরকার। আছে ৫৬ হাজার ৭৩৪ জন। যা প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় ৮২ শতাংশ কম। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের চিকিৎসাসেবার মান অসন্তোষজনক হওয়ার অন্যতম একটি কারণ নার্স–সংকট।
এই পরিস্থিতিতে আজ সোমবার আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছরের নার্স দিবসে নার্সদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, নার্সরা সুরক্ষিত থাকলে, তাঁদের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন ৫ মে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতে জনবল সমস্যা ব্যাখ্যা করার সময় নার্স–সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন হাসপাতালে নার্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর্মীর শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে।
রোগগ্রস্ততা ও মৃত্যুহার কমানো, হাসপাতালে রোগীর সন্তুষ্টি, আবার হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া বা রোগের ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করতে নার্সদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু বাংলাদেশে সম্মানজনক পেশা হিসেবে নার্সিংকে এখনো আকর্ষণীয় করে তোলা যায়নি। পাশাপাশি নার্সিং শিক্ষার ক্ষেত্রেও দেশ পিছিয়ে আছে।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) শিক্ষার্থী মল্লিকা বানু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের একমাত্র কাজ ওষুধ খাওয়ানো ও ইনজেকশন দেওয়া।মৌলিক নার্সিং সেবার তালিকা বেশ লম্বা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার হয়তো ছয়জন রোগীকে সেবা দেওয়ার কথা, কিন্তু দিতে হয় ৫০ জনকে। স্বাভাবিকভাবেই সব রোগীকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। এতে রোগী সন্তুষ্ট হয় না। অন্যদিকে আমরাও বার্ন আউট (অতিরিক্ত কাজের চাপে ক্লান্ত) হয়ে যাই। সেবার মান কমে যায়। এটাই হচ্ছে।’
আমার হয়তো ছয়জন রোগীকে সেবা দেওয়ার কথা, কিন্তু দিতে হয় ৫০ জনকে। স্বাভাবিকভাবেই সব রোগীকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া সম্ভব হয় না।মল্লিকা বানু, সিনিয়র স্টাফ নার্স, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসংখ্যা কম, চাপ বেশিবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সেবার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হওয়া উচিত ১: ৩। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কাজ করবেন তিনজন নার্স। এবং তাঁদের সঙ্গে থাকবেন আরও পাঁচজন সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী। এই অনুপাত ঠিক থাকলে চিকিৎসাসেবা সর্বাঙ্গীণ সুষ্ঠু ও মানসম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
বাংলাদেশে এই অনুপাত ঠিক নেই। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ১৮ কোটি মানুষের দেশে ১ লাখ ৩ হাজার ৫০০ জন চিকিৎসক, ৩ লাখ ১০ হাজার ৫০০ নার্স এবং ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ জন সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই জনবল কম আছে। ২০২১ সালের হিসাব তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসক ৮৬ হাজার ৬৭৫ জন (প্রয়োজনের ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ কম), নার্স ৫৬ হাজার ৭৩৪ জন (৮২ শতাংশ কম) এবং সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী ২ লাখ ৩০ হাজার ২১৯ জন (সাড়ে ৫৫ শতাংশ কম)। শতাংশের হিসাবে নার্সই সবচেয়ে কম। এবং চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত ১: শূন্য দশমিক ৭।
একজন নার্স নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে নার্সের সংখ্যা কম দেখানো হয়েছে। কারণ, কমিশন পুরোনো পরিসংখ্যান ব্যবহার করেছে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রায় ৯০ হাজার নার্স কাজ করছেন। তবে এই সংখ্যাও প্রয়োজনের চেয়ে কম।
দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রয়োজনের চেয়ে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ কম, নার্স ৮২ শতাংশ কম এবং সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী সাড়ে ৫৫ শতাংশ কম বলে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।একাধিক নার্স প্রথম আলোকে বলেছেন, হাসপাতালের সেবা একটি দলবদ্ধ কাজ। প্রত্যেকের কাজই নির্দিষ্ট। জনবল স্বল্পতার কারণে অন্যের কাজও নিজের ঘাড়ে নিতে হয়। অন্যদিকে হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে একাধিক আত্মীয়স্বজন থাকেন। তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গেই নার্সদের কথা বলতে হয়। অকারণে সময় নষ্ট ও শক্তি ক্ষয় হয়।
কেন এই পরিস্থিতিযুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থার ‘সেজ’-এর ‘পলিসি, পলিটিকস অ্যান্ড নার্সিং প্র্যাকটিস’ সাময়িকীতে ২০২১ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে নার্সিং পেশা পিছিয়ে বা অবহেলায় থাকার কিছু কারণ তুলে ধরা হয়েছে।
প্রবন্ধে বলা হয়, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অসম্মান থেকে এই পেশার প্রতি একধরনের অশ্রদ্ধা লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে নার্সিং পেশাকে নিম্নমানের কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের এই পেশায় আসতে দেখা গেছে। এমনকি এই পেশাকে ‘অনৈতিক’ হিসেবে দেখার প্রবণতাও আছে। অনেকে মনে করেন, নোংরা শরীর স্পর্শ করা ভালো মানুষের কাজ না। আবার কেউ কেউ মনে করেন, মেয়েদের বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করা বা অন্য লিঙ্গের মানুষের শরীর স্পর্শ করা ঠিক না। এসব কারণে এই পেশা সমাজে সম্মান অর্জনে বাধা পেয়েছে।
নার্সদের সংখ্যা বাড়ানো, তাঁদের বেতন বাড়ানো, তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় বসানো—এগুলো সব সরকারের দায়িত্ব। ক্লান্ত, অসন্তুষ্ট নার্সের কাছ থেকে মানসম্পন্ন সেবা আশা করা ঠিক না।ইসমত আরা পারভীন, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা নার্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনঅন্যদিকে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নার্সরা যুক্ত থাকেন না। প্রাধান্য থাকে চিকিৎসকদের। নার্সিং শিক্ষার চাহিদা কম থাকায় বেসরকারি উদ্যোক্তারা নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বিশেষ উৎসাহ পান না।
ওই প্রবন্ধে আরও বলা হয়, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিচে (ব্যতিক্রম ইউনিয়ন উপকেন্দ্র) নার্সদের জন্য কোনো পদ নেই, এবং পদায়নের কোনো ব্যবস্থাও নেই। নার্সদের চেয়ে কম ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ ও একাডেমিক যোগ্যতা থাকার পরও সাব–অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সাকমো) রোগীর চিকিৎসা দিতে পারেন এবং ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখতে পারেন; কিন্তু নার্সরা তা পারেন না।
গবেষকেরা কয়েকজন পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়া নার্সের সন্ধান পেয়েছেন। তবে তাঁরা দেখেছেন, ডিগ্রি নেওয়ার আগে ও পরে তাঁদের পদ ও বেতন একই আছে। এর কারণ হচ্ছে এই যে, সরকার নার্সদের উচ্চশিক্ষার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা রাখেনি।
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা নার্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইসমত আরা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নার্সদের সংখ্যা বাড়ানো, তাঁদের বেতন বাড়ানো, তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় বসানো—এগুলো সব সরকারের দায়িত্ব। ক্লান্ত, অসন্তুষ্ট নার্সের কাছ থেকে মানসম্পন্ন সেবা আশা করা ঠিক না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ যকর ম প রথম আল ক হ জ র ৫০০ চ ক ৎসক ব সরক র অন প ত এই প শ সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
ফের আইটেম কন্যা সামান্থা?
জনপ্রিয় অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভু। আল্লু অর্জুন অভিনীত ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ সিনেমার আইটেম গানে প্রথমবার কোমর দুলিয়েছেন তিনি। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর গানটির একটি লিরিক্যাল ভিডিও ইউটিউবে মুক্তি পায়। ‘ও আন্তাভা, ও ও আন্তাভা’ শিরোনামের এই গান মুহূর্তের মধ্যেই আলোচনায় চলে আসে। সামান্থার এই আইটেম গান বিশ্বের সেরা ১০০ মিউজিক ভিডিওর তালিকায় সবার উপরে জায়গা করে নেয়। দর্শকপ্রিয়তা এতটাই বেড়েছিল যে, ৮-৮০ বছর বয়সি মানুষও এই গানে নেচেছেন।
এরপর ‘পুষ্পা টু’ সিনেমা নির্মিত হয়েছে। এতেও একটি আইটেম গান রাখা হয়। এ গানেও তাকে পারফর্ম করার প্রস্তাব দিলে তা ফিরিয়ে দেন। কেবল ‘পুষ্পা টু’ নয়, তাছাড়াও বেশ কটি সিনেমার আইটেম গানে নাচতে প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা গ্রহণ করেননি এই অভিনেত্রী। এবার জানা গেল, ফের আইটেম গানে দেখা যাবে সামান্থাকে।
সিয়াসাত ডটকম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তিন বছর পর, সামান্থা আবারো একটি আইটেম গানে ঝড় তুলতে প্রস্তুত বলে জানা যাচ্ছে। রাম চরণের পরবর্তী সিনেমা ‘পেদ্দি’। সম্ভবত স্পোর্টস-ড্রামা ঘরানার এ সিনেমার আইটেম গানে পারফর্ম করতে দেখা যেতে পারে সামান্থা রুথ প্রভুকে।
আরো পড়ুন:
আলিয়া-দীপিকা-রাশমিকাকে টপকে শীর্ষে সামান্থা
প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে প্রচারে অংশ নেবেন সামান্থা?
এটি যদি সত্যি হয়, তাহলে দীর্ঘ দিন পর ‘রাঙ্গাস্থালাম’ তারকাদের একসঙ্গে দেখা যাবে। ‘পেদ্দি’ সিনেমার আইটেম গানে সামান্থার পারফর্মের বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে সিনেমা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, নির্মাতারা সামান্থার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আশির দশকে অন্ধ্রপ্রদেশের গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠেছে ‘পেদ্দি’ সিনেমার কাহিনি। সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন রাম চরণ। শক্তিশালী এক শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য খেলাধুলার মাধ্যমে গ্রামের মানুষদের একত্রিত করেন তিনি। এতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করছেন শ্রীদেবী কন্যা জাহ্নবী কাপুর।
তাছাড়াও সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন শিবা রাজকুমার, জগপতি বাবু, দিব্যেন্দু শর্মা প্রমুখ। সিনেমাটির সংগীত পরিচালনা করছেন এ. আর. রহমান। এরই মধ্যে সিনেমাটির চারটি গানের শুটিং শেষ করেছেন নির্মাতারা। এখন হায়দরাবাদে জোর গতিতে শুটিং চলছে। খুব শিগগির সেখানে যোগ দেবেন জাহ্নবী কাপুর।
২৫০-৩০০ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ‘পেদ্দি’ সিনেমা। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের ২৭ মার্চ সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পরিকল্পনা করেছেন নির্মাতারা।
সামান্থা রুথ প্রভু অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিরিজ ‘সিটাডেল: হানি বানি’। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত মার্কিন সিরিজের হিন্দি রিমেক এটি। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যাকশন-ড্রামা ঘরানার এ সিরিজ পরিচালনা করেন রাজ ও ডিকে। এতে সামান্থার বিপরীতে অভিনয় করেন বরুণ ধাওয়ান।
ঢাকা/শান্ত