বর্তমানে পিঠে বা কোমরে ব্যথা প্রচলিত সমস্যা। দীর্ঘ সময় কম্পিউটার, ডেস্কটপে বসে কাজ করা কোমর ব্যথা বাড়িয়ে দেওয়ার একটি বড় কারণ। এ ছাড়া পিঠ বা কোমর ব্যথা বাড়ানোর রয়েছে আরও অনেক কারণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বসার ভুলভঙ্গির কারণে কোমরে বা পিঠে ব্যথা হয়। পাশাপাশি ভুলভঙ্গিতে বসার কারণে শ্বাসকষ্ট, বদহজম, সারকুলেটরি সিস্টেম এবং শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দেয়।
দৈনন্দিন জীবনের কয়েকটি বদভ্যাসের কারণে কোমরে ব্যথা হয়। যেমন– পেছনের হিপ পকেটে মানিব্যাগ ব্যবহার করা: পেছনের পকেটে মানিব্যাগ ব্যবহার করলে পেলভিস টুইস্ট হয়। এতে পাইরিফরমিস মাসেলের ওপর চাপ পড়ে। ফলে সায়াটিকা, পাইরিফরমিস সিনড্রোম এবং কোমর ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কাঁধে ভারী ব্যাগ বহন করা: আজকাল অনেকেই কাঁধে ভারী ব্যাগ বহন করেন। ব্যাগে ওয়ালেট, মোবাইল ফোন, নোট বুক, আইপেড, মেকআপ বক্স, ল্যাপটপসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিস থাকে। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও ভারী স্কুলব্যাগ বহনের কারণে পিঠের ব্যথায় ভোগে। গবেষকরা বলছেন, শিশুরা তার ওজনের ১৫ শতাংশের অধিক ওজন কাঁধে বহন করবে না । এতে তাদের মধ্যে টেনশন হেডেক, কাঁধে ব্যথা, ফরোয়ার্ড হেড পোশ্চার ইত্যাদি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সঠিক জুতা ব্যবহার না করা: বর্তমানে অনেক নারীই উঁচু হিল পরেন। এতে ওয়াকিং গেট অর্থাৎ হাঁটার ভঙ্গি পরিবর্তন হয়। সঠিক ভঙ্গিতে না হাঁটার ফলে কোমর, হিপ, হাঁটু এবং পায়ের গোড়ালির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। ফলে কোমর, হাঁটু ও পায়ের গোড়ালি ব্যথা হয়।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা: গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘণ্টা বসে থাকি। আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোক তাঁর জীবনের ৫০-৭০ শতাংশ সময় বসে কাটান। দীর্ঘ সময় বসার ফলে কোমরের অর্থাৎ লামবারের লোরডোটিক কার্ভ কমে যায়, মেরুদণ্ডে সেন্টার অব গ্রাভিটি পরিবর্তনের ফলে স্পাইনের ওপর চাপ পড়ে। স্পাইনের ওপর চাপ পড়ার কারণে ডিক্সে চাপ পড়ে এবং কোমর ব্যথা হয়।
ঠিকভাবে এক্সারসাইজ না করা: অনেকেই না জেনে বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ করেন। অথচ অনেকেই জানেন না কোন ধরনের এক্সারসাইজ কার জন্য ঠিক, কার জন্য ঠিক নয়। সে ক্ষেত্রে কোনো এক্সারসাইজ করার আগে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।v
[মাস্কুলোস্কেলিটাল ডিজঅর্ডারস বিশেষজ্ঞ]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
সিটি করপোরেশন ও পুলিশ কী করছে
রাজশাহী কলেজের সামনে এক মাস ধরে চলছে ফুটপাতের স্ল্যাব চুরির ঘটনা আর এর করুণ পরিণতি হলো একজন শিক্ষার্থীর নালায় পড়ে গুরুতর আহত হওয়া। সম্প্রতি সেখানে একই ধরনের আরও ঘটনা ঘটেছে। এটি আমাদের নগর ব্যবস্থাপনার অবহেলা ও উদাসীনতার উদাহরণ। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ফুটপাত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, প্রায় এক মাস রাজশাহী কলেজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে, যেখানে হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ চলাচল করে, সেখানে ফুটপাতের স্ল্যাব চুরি হচ্ছে। প্রায় ৫০০ মিটার সড়কের দুই পাশে থাকা ফুটপাত থেকে অন্তত ২০টি স্ল্যাব চুরি হয়ে গেছে। গত বছরও শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে স্ল্যাব ও লোহার ফ্রেম চুরি হয়েছিল, কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও স্ল্যাব চুরির ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানা গেছে, কিন্তু সেটি সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।
নালায় পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। স্থানীয় লোকজন গত ১০ দিনে অন্তত চারজনকে এই ফুটপাতে পড়ে যেতে দেখেছেন। এটি স্পষ্ট করে যে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে এবং কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পরও কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একজন কলেজের ফটকের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি নিজের ছেলেকে আহত হওয়ার পর নিজেই চোর ধরার জন্য পাহারা দিচ্ছেন, কিন্তু তাতেও কোনো ফল হচ্ছে না।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল অবিলম্বে এই অরক্ষিত ফুটপাত মেরামত করা এবং স্ল্যাব চুরি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। শুধু কাগজে-কলমে ব্যবস্থা নিয়ে নাগরিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে রাখা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য শহরে আসে, কিন্তু শহরের অব্যবস্থাপনা তাকে হাসপাতালের বিছানায় ঠেলে দেয়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে?
এ ঘটনা একটি সতর্কতা। অবিলম্বে রাজশাহী কলেজের সামনের ফুটপাত সংস্কার করা হোক। একই সঙ্গে নগরজুড়ে এ ধরনের অরক্ষিত স্থানগুলো চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে সেগুলোর মেরামতের ব্যবস্থা করা হোক। নগর কর্তৃপক্ষের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই দায়িত্ব পালনে তাদের ব্যর্থতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। স্ল্যাব চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিন নিয়ে বের হয়ে অনেক অভিযুক্ত ব্যক্তি একই কাজে জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের কীভাবে এ অপরাধকর্ম থেকে বিরত রাখা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।