ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে পুলিশের হেফাজত থেকে আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমানকে ছাত্রদল নেতা জয়নাল ভূঁইয়া ও তার সঙ্গীরা ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ধস্তাধস্তির মধ্যে পড়ে স্থানীয় চাতলপাড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রফিকুল ইসলাম আহত হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছাত্রদল নেতাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার চাতলপাড় পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী চলমান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর অংশ হিসেবে চাতলপাড় ইউনিয়নে অভিযান চালায় পুলিশ। চাতলপাড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুপ রায় ও যুগ্ম সম্পাদক মশিউর রহমানকে চাতলপাড় বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তারের পরপরই চাতলপাড় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল ভূঁইয়া ও তার সঙ্গীরা পুলিশের গতিরোধ করে তাকে ছিনিয়ে নেন। এ সময় পুলিশ সদস্যদের ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন এসআই রফিকুল ইসলাম আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে জয়নাল ভূঁইয়াকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আহত এসআই রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। তবে জয়নালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে।’

আটক আওয়ামী লীগ নেতা অরুপ রায় চাতলপাড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং একই গ্রামের অবনী রায়ের ছেলে। ছাত্রদল নেতা জয়নাল ভূঁইয়া একই গ্রামের আসাদুজ্জামান ভূঁইয়ার ছেলে। পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মশিউর রহমানও আসাদুজ্জামানের ছেলে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সমীর চক্রবর্তী বলেন, পারিবারিক কলহের কারণে পুলিশ তাদের বাড়িতে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। আওয়ামী লীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের সঙ্গে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি তার।

নাসিরনগর থানার ওসি মো.

খায়রুল আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজনকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়েছি। তবে ছাত্রদল নেতারা কাউকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন, এমন তথ্য আমার জানা নেই।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ব এনপ ছ ত রদল ন ত আওয় ম ল গ ছ ত রদল ন ত জয়ন ল ভ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

জামিনে মুক্ত ৩ পুলিশ সদস্য, পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কা নিহতের মায়ের

সিলেটে পুলিশ হেফাজতে নিহত রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যা মামলার আসামিদের একে একে জামিন হওয়ায় ক্ষোভ ও আতঙ্ক প্রকাশ করেছে পরিবার। রায়হানের মা সালমা বেগমের দাবি, এতে করে আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

মামলাটি থেকে সর্বশেষ গত রোববার প্রধান আসামি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আকবরের জামিনের পর একই মামলায় আরও দুই পুলিশ সদস্য জামিনে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। তাঁরা হলেন কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস (৩৮) ও হারুন অর রশিদ (৩২)। ২০ ফেব্রুয়ারি টিটু এবং ১৭ এপ্রিল হারুন অর রশিদ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

আরও পড়ুনসিলেটে পুলিশ হেফাজতে রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামি এসআই আকবরের জামিন১১ আগস্ট ২০২৫

এর আগে ২০২২ সালের ১২ জুন জামিন পেয়ে পলাতক আছেন এসআই হাসান উদ্দিন (৩২)। এ ছাড়া মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের আগেই দেশের বাইরে পালিয়ে যান আবদুল্লাহ আল নোমান নামের আরেক আসামি। তিনি সম্পর্কে আকবরের আত্মীয়।
সালমা বেগম গতকাল সোমবার বিকলে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার অভিযুক্তরা একে একে জামিনে বের হয়ে যাচ্ছেন। গত রোববার আকবর হোসেন জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন। বিষয়টি তিনি গতকাল আদালতে গিয়ে জানতে পেরেছেন। এর আগে জামিন পাওয়া দুজন মামলার তারিখে আদালতে হাজির হচ্ছেন না। আসামিরা উল্টো বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আবুল ফজল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ৬৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বর্তমানে মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে আছে। সর্বশেষ গত ১৫ জুলাই সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আংশিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। আদালত আগামী ৩ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করেছেন। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন।

আরও পড়ুনএসআই আকবরের হুমকি—বুকে গুলি করব, পিঠ দিয়ে বের হবে২৪ অক্টোবর ২০২০

এই আইনজীবী বলেন, মামলায় অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী (৪৩)।

এ বিষয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২–এর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, উচ্চ আদালত থেকে আকবর হোসেনের জামিন মঞ্জুরের পর নিম্ন আদালত থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পরে এ–সংক্রান্ত তথ্যের নথি কারাগারে পাঠানো হলে গত রোববার সন্ধ্যায় তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল একই কারাগার থেকে হারুনুর রশীদ জামিনে বের হয়েছেন। গত ২৫ মার্চ থেকে তাঁরা সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন।

আরও পড়ুন‘আমার রায়হানই যেন পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর শেষ নাম হয়’২৩ অক্টোবর ২০২০

অভিযোগ আছে, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয়। পরে ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর অভিযোগের সত্যতা পায় সিলেট মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ওই বছরেই ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রধান অভিযুক্ত আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন।

২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্য অভিযুক্তরা এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ ও টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির ‘টু-আইসি’ পদে থাকা এসআই হাসান উদ্দিন ও আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান।

আরও পড়ুন‘টাকা নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আসো, আমাকে বাঁচাও’১২ অক্টোবর ২০২০আরও পড়ুনপুলিশের দাবি করা গণপিটুনির চিত্র মেলেনি সিসি ক্যামেরায় ১২ অক্টোবর ২০২০আরও পড়ুনইনচার্জসহ বরখাস্ত ৪, প্রত্যাহার ৩ পুলিশ১২ অক্টোবর ২০২০আরও পড়ুনপুলিশ ফাঁড়িতে যুবকের মৃত্যু: আসামি উল্লেখ না করে মামলা১২ অক্টোবর ২০২০

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রংপুরে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
  • দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তারাগঞ্জের ২ এসআই ও ৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার
  • বন্দরে নারী মাদক কারবারিসহ গ্রেপ্তার ২, ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার
  • জামিনে মুক্তির পরই ভারতে পালিয়েছেন এসআই আকবর, দাবি নিহতের মায়ের
  • বন্দরে ২ নারীসহ ৫ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
  • জামিনে মুক্ত ৩ পুলিশ সদস্য, পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কা নিহতের মায়ের
  • চট্টগ্রামে এসআইকে কুপিয়ে আহত, আটক ১৮
  • চট্টগ্রামে এসআইকে ছুরিকাঘাত করে পালাল আসামি, আটক ১৬
  • সিলেটে পুলিশ হেফাজতে রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামি এসআই আকবরের জামিন