চল‌তি মাসের শুরুর দি‌কে ভারত থে‌কে বাংলা‌দে‌শে পুশ ইনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে দি‌ল্লি‌কে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ মে পুশইনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতকে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ৭ ও ৮ মে দুই দফায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে পুশইন করে বলে অভিযোগ উঠে।

পত্রে বলা হয়, সম্প্রতি পুশইন প্রক্রিয়াগুলো গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সীমান্ত অঞ্চলে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে।

আরো পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের সমাধান করবে: আমীর খসরু

ভারতের রোহিঙ্গাদের পুশইন প‌রিক‌ল্পিত: বিজিবি মহাপরিচালক

বাংলাদেশ জানায়, ভারতীয় এই কার্যক্রম ১৯৭৫ সালের ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নির্দেশিকা, ২০১১ সালের সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (CBMP) এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে গৃহীত পারস্পরিক সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন।

ঢাকার পাঠানো কূটনৈতিক বার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশি নাগরিকদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বিদ্যমান প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাদের ফেরত নেওয়া হবে। কিন্তু তার ব্যতিক্রম ঘটালে দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে।

বাংলাদেশ আরো বলেছে, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে নয়, তাদের আদি নিবাসে (মিয়ানমারে) ফেরত পাঠানো উচিত। একইসঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশইন করাও অনুচিত।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বিষয়টি আলোচিত
এদিকে সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় পুশইন ইস্যুটি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়। সভায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, “সীমান্তে পুশইন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ইস্যু। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক টন ত ক প শইন

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের কর্মপ্রচেষ্টা ও পরিণতির পথ

সুরা লাইল, পবিত্র কোরআনের ৯২তম সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ। এতে ২১টি আয়াত রয়েছে। ‘লাইল’ অর্থ রাত্রি, যা সুরার প্রথম আয়াতে উল্লেখিত। এই সুরা মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার বৈচিত্র্য, দানশীলতা ও কৃপণতার পরিণতি, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ বর্ণনা করে। সুরাটি দুই ধরনের মানুষের চিত্র তুলে ধরে: যারা দান করে ও ভালোকে গ্রহণ করে, তাদের জন্য সুখকর পথ সহজ হয়; আর যারা কৃপণতা ও অহংকারে ভালোকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য কঠোর পরিণতি অপেক্ষা করে।

 সুরার প্রধান বিষয়

সুরা লাইল রাত, দিন এবং নর-নারীর সৃষ্টির শপথ দিয়ে শুরু হয়, যা মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার বৈচিত্র্যের দিকে ইঙ্গিত করে, ‘শপথ রাত্রির, যখন সে ঢেকে ফেলে! আর শপথ দিনের, যখন সে আলোয় উজ্জ্বল! আর শপথ তাঁর, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টার তো বিভিন্ন গতি।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১-৪)

আরও পড়ুনবিপদের সময় বলতে হবে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাতকে জাহেলিয়াতের অন্ধকার এবং দিনকে ইমানের আলোর সঙ্গে তুলনা করা যায়। নর-নারীর সৃষ্টি সব সৃষ্টির জোড়ার বৈচিত্র্য প্রকাশ করে। এই বৈচিত্র্য মানুষের কাজেও প্রতিফলিত হয়। (মাওলানা মুহাম্মদ শফি, মা’আরিফুল কোরআন, সুরা লাইল)

দানশীলতা ও সৎকর্মের পথ

সুরায় দানশীল ও সাবধানী মানুষের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে: ‘তাই কেউ দান করলে, সাবধানী হলে, ও যা ভালো তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুখকর পরিণামের পথ সহজ করে দেব।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ৫-৭)

এই ব্যক্তিরা ভালোকে সত্য হিসেবে মেনে নেয়, অহংকার থেকে মুক্ত থাকে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে। তারা জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে থাকবে: ‘তার থেকে দূরে রাখা হবে সেই সাবধানীকে, যে ধনসম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির জন্য, আর কারও প্রতি অনুগ্রহের প্রতিদানের প্রত্যাশায় নয়, কেবল তার মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য। সে তো সন্তুষ্ট হবেই।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১৭-২১)

কৃপণতা ও অহংকারের পরিণতি

বিপরীতে, কৃপণ ও অহংকারী ব্যক্তির পরিণতি ভয়াবহ: ‘আর কেউ ব্যয়কুণ্ঠ হলে, নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, ও যা ভালো তা বর্জন করলে, তার জন্য কঠোর পরিণামের পথ সহজ করে দেব। এবং যখন তার পতন ঘটবে, তখন ধনসম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ৮-১১)

এই ব্যক্তিরা ভালোকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং অহংকারে আল্লাহর পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের জন্য লেলিহান অগ্নি অপেক্ষা করে: ‘আমি তোমাদেরকে লেলিহান অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি। সেখানে সে-ই প্রবেশ করবে, যে নিতান্ত হতভাগ্য, যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১৪-১৬)

আরও পড়ুনসুরা গা’শিয়ার সারকথা০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আল্লাহর পথনির্দেশ

সুরায় আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন যে পথনির্দেশ দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর: ‘আর কাজ তো কেবল পথের নির্দেশ দেওয়া। আর আমিই (মালিক) ইহকাল ও পরকালের।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১২-১৩)

এই আয়াত মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এবং আল্লাহর হিদায়াতের মধ্যে ভারসাম্য তুলে ধরে। মানুষ তার পথ বেছে নেয়, কিন্তু আল্লাহই চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করেন।

 সুরার তাৎপর্য

সুরা লাইল রাত ও দিনের শপথ দিয়ে মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার দ্বৈততা তুলে ধরে। রাত জাহেলিয়াতের অন্ধকার এবং দিন ইমানের আলোর প্রতীক। দানশীলতা, সাবধানিতা এবং ভালোকে গ্রহণ করা মানুষকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়, যেখানে কৃপণতা ও অহংকার জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। এই সুরা মানুষকে চিন্তাশীল হতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে উৎসাহিত করে। (তাফসির ইবনে কাসির, সুরা লাইলের ব্যাখ্যা)

 মুহাম্মদ আসাদ, দ্য মেসেজ অব দ্য কোরআন, সুরা লাইল

আরও পড়ুনসুরা নাজিআতের সারমর্ম০২ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ