কোহলি ‘আপনি ভুল করেছেন, কেন অবসর নিলেন, আমরা আর ক্রিকেট দেখব না’
Published: 14th, May 2025 GMT
ভক্ত ও ক্রিকেটারের সম্পর্ক তো এমনই। কোত্থেকে, কীভাবে যেন একটা অধিকারবোধ জন্মায়!
বিরাট কোহলির ওপরও তেমনই অধিকারবোধ জন্মেছে সেই ভক্তের। কোহলি টেস্ট ছাড়ার পর তাই তাঁকে সামনে পেয়েই সেই ভক্ত হৃদয়ে পুঞ্জীভূত অভিমানের আগল খুলে দিয়েছেন, ‘কেন অবসর নিলেন? আমরা আর ক্রিকেট দেখব না!’
আরও পড়ুনকোহলির অবসর নেওয়ার পেছনে এটাই তাহলে কারণ১৯ ঘণ্টা আগেঘটনাটি ঘটে মুম্বাই বিমানবন্দরে, ঠিক কবে তা জানা যায়নি। তবে গত সোমবার কোহলি টেস্ট থেকে অবসর ঘোষণার পর এবং গতকাল এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কোহলি ও তাঁর স্ত্রী বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মা বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পথে পাপারাজ্জিদের কবলে পড়েন। ভক্তরা তাঁকে ছেঁকে ধরেন। কেউ কেউ ছবিও তোলেন। ভিড়ের মধ্য থেকে একটি কণ্ঠের আওয়াজ কানে বেজেছে সবার।
কোহলির উদ্দেশে ভিড়ের ভেতর থেকে আবেগাক্রান্ত সেই কণ্ঠের আর্তি, ‘স্যার, আপনি ভুল করেছেন। কেন অবসর নিলেন? আমরা এখন থেকে আর ক্রিকেট দেখব না।’ সেই ভিড়ের ভেতর থেকে আরেকটি আবেগাক্রান্ত কণ্ঠের আর্তি, ‘শুধু আপনার জন্য আমি টেস্ট ক্রিকেট দেখতাম।’
ভক্তদের এমন মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই কোহলিকে ছুঁয়ে যায়। কিন্তু স্বাভাবিক থেকেই তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাঁদের প্রতি এবং খুব বিনয়ের সঙ্গে সবাইকে বের হওয়ার পথ করে দিতে বলেন। তখনই ভিড়ের ভেতর থেকে আরেক ভক্ত ছবি তোলার আবদার জানালে কোহলি বলেন, ‘আজ একটু তাড়া আছে। কথা দিচ্ছি পরেরবার হবে।’
আরও পড়ুনকোহলির অবসর নিয়ে বোমা ফাটালেন রঞ্জি কোচ, ‘সে ইংল্যান্ড সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিল’১৩ মে ২০২৫কিন্তু আবেগাক্রান্ত কণ্ঠগুলো এরপরও থামেনি। আনুশকাকে নিয়ে কোহলি গাড়িতে ওঠার পর যখন দরজা বন্ধ করবেন, ঠিক তখনই আরেক ভক্ত বলেন, ‘স্যার, আমরা আর ক্রিকেট দেখব না। আপনার জন্য আমরা ক্রিকেট দেখতাম।’ কোহলি একটু হেসে বুড়ো আঙুল তুলে ইতিবাচক ভঙ্গি করেন এর জবাবে। কিন্তু ভক্তদের আর্তি তখনো থামেনি। ভিড়ের ভেতর থেকেই ভেসে এল কোহলির জন্য অপেক্ষা করার কথা, ‘আমরা আপনার (ফেরার) অপেক্ষায় থাকব। এখন শুধু ওয়ানডে দেখব। এবার আরসিবি (আইপিএল) জিতবে।’
ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ জানিয়েছে, টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার এক দিন পর আনুশকাকে নিয়ে বৃন্দাবনে গিয়েছিলেন কোহলি। সেখানে আধ্যাত্মিক নেতা প্রেমানন্দ গোবিন্দ শরণজী মহারাজের আশীর্বাদ নেন এই জুটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অনুসারীদের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, আত্মার শান্তি ও ভক্তির ক্ষমতা নিয়ে প্রেমানন্দ গোবিন্দর বলা কথাগুলো তাঁরা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছেন।
গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে নিজের হ্যান্ডলে টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন কোহলি। তাঁর এ সিদ্ধান্তে অনেকেই অবাক হয়েছেন। ভারতের সাবেক স্পিনার রবিচন্দ্র অশ্বিন যেমন বলেছেন, টেস্টে কোহলি আরও এক বা দুই বছর খেলতে পারতেন। অনেক ভক্তও তাঁর এ সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আবেদনের সময় যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অধীন এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৮২২ জন শিক্ষক নিয়োগে আবেদন শুরু হয়েছে। আবেদন করা যাবে আগামী ১৩ জুলাই পর্যন্ত।
বিপুলসংখ্যক বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাঁরা এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হতে আগ্রহী, তাঁদের উচিত বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান–সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জেনেবুঝে বাস্তবতার আলোকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা। কেননা, অতি আবেগতাড়িত হয়ে বা অন্য চাকরি না পেয়ে অথবা ভিন্ন কোনো কারণে সবকিছু না জেনে না বুঝে বেসরকারি শিক্ষক হয়ে নিজের কর্মের ওপর সন্তুষ্ট থাকতে না পারলে ব্যক্তিগত সফলতা অর্জন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধন মোটেও সম্ভব নয়।
ভিন্ন ভিন্ন ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত প্রতিটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পৃথক, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পদ সম্পূর্ণ পৃথক, চাকরির আবেদনের চয়েস লিস্টের প্রতিটি চয়েস পৃথক। পদ শূন্য থাকলে নিজের যোগ্যতা ও ইচ্ছা অনুসারে বাড়ির পাশে বা দূরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করা যায়। এ ক্ষেত্রে একজন প্রার্থী তাঁর পছন্দের ক্রমানুসারে অনেকগুলো (ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে ৪০টি) প্রতিষ্ঠানে চয়েস দিয়ে স্বেচ্ছায় আবেদন করতে পারেন। পছন্দের তালিকার যেকোনো একটিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পেতে পারেন। কর্তৃপক্ষ প্রার্থীর পছন্দের তালিকার বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানে কাউকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে পারেন না।
এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে সরাসরি বদলি হওয়ার বা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ এখনো অত্যন্ত সীমিত। তাই দ্রুত বদলি হওয়ার মানসিকতা পরিহার করে যেখানে নিয়োগ পাবেন, সেখানেই দীর্ঘদিন চাকরি করবেন, এমন মানসিকতা নিয়ে আবেদন করা উচিত। কেউ কোনো দিন প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ পেলেও সেটি তাঁর পছন্দমতো না–ও হতে পারে। আবারও অনেকগুলো চয়েস দিয়ে কোনো একটিতে সুযোগ পেতে পারেন। তখনো তাঁকে অন্য একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই যেতে হবে এবং সেটির ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির অধীন হয়েই চাকরি করতে হবে।
মোট শূন্য পদের বিপরীতে মোট প্রার্থীসংখ্যা যা–ই থাকুক না কেন ভালো, সচ্ছল, সুবিধাজনক প্রতিষ্ঠানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। নিবন্ধন পরীক্ষায় বেশি নম্বরপ্রাপ্ত হয়ে থাকলেও ভালো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে চাইলে একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার প্রয়োজন হবে। যাঁদের নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর তুলনামূলক কম, তাঁদের আরও বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার প্রয়োজন হবে। সে ক্ষেত্রে নিজের বাড়ির আশপাশে অবস্থিত একাধিক প্রতিষ্ঠানে এবং অনেক দূরদূরান্তে অবস্থিত একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারেন।
যে প্রতিষ্ঠানেই আবেদন করুন না কেন; ধরে নিতে হবে ওই প্রতিষ্ঠানেই আপনার চাকরি হবে এবং আপনি অবশ্যই সেখানে চাকরি করতে যাবেন। নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর বেশি বা মেরিট পজিশন আগে না থাকলে বেশি ভালো বা সুবিধাজনক প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। সে ক্ষেত্রে অধিকসংখ্যক আবেদন করার প্রয়োজন হতে পারে।
নিজের এলাকায় ও কম দূরে অবস্থিত যাতায়াত সুবিধা আছে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে পছন্দের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষ করে যাঁদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা আছে এবং যাঁরা নারী প্রার্থী, তাঁদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের বাড়িতে থেকে কম বেতন পেলেও টিকে থাকা যায় এবং অন্যান্য অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।
প্রতিষ্ঠানের সুনাম, অবস্থা, অবস্থান, কর্মপরিবেশ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আর্থিক সচ্ছলতা ও শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি সন্তোষজনক কি না, তা জেনে নেওয়া। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধার পরিমাণও সাধারণত কম থাকে।
আবেদনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত পদটি এমপিওভুক্ত শূন্য পদ কি না, এ পদের বিপরীতে কাম্য শিক্ষার্থী আছে কি না, কোনো মামলা–মোকদ্দমা আছে কি না, এমপিওভুক্ত হবে কি না, হলে কত দিন লাগতে পারে, তা নিশ্চিত হওয়া।
কোনো কারণে নন-এমপিও পদে আবেদন করতে চাইলে তা জেনেবুঝেই করা। প্রতিষ্ঠানের সচ্ছলতা নিশ্চিত হওয়া এবং প্রতিষ্ঠান থেকে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় কি না, তা নিশ্চিত হওয়া। কারণ, সরকারি আদেশ থাকার পরও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান থেকেই নন-এমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমপরিমাণ আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয় না।
দূরবর্তী কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হলে সেই প্রতিষ্ঠান ও এলাকা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে, শুনে, দেখে নেওয়া। তদুপরি সেখানে যাতায়াত সুবিধা কেমন, থাকা-খাওয়ার সুবিধা আছে কি না, নিরাপত্তাব্যবস্থা কেমন, ছুটিতে বা প্রয়োজনে নিজের আপনজনের কাছে যাওয়া-আসা করা যাবে কি না, যেসব অসুবিধা আছে, সেগুলো সহজে মেনে নেওয়া যাবে কি না, তা–ও বিবেচনা করা। প্রার্থী মহিলা হলে এসব বিষয় অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা।
যে পদে আবেদন করবেন সেই পদের মর্যাদা কতটুকু, সরকারি বেতন স্কেল, বর্তমান মূল বেতন, অন্যান্য ভাতা, মাসিক কর্তনের পরিমাণ, বিভিন্ন বোনাসের পরিমাণ, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতির সুযোগ আছে কি না, অবসরকালে কী পরিমাণ আর্থিক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে এবং অন্যান্য পেশার তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কতটুকু কমবেশি ইত্যাদি জেনে নেওয়া।
একাধিক স্তরবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত পদে যোগদান করলে কোন কোন স্তরে ক্লাস নিতে হবে, তা জেনে নেওয়া এবং সেই স্তরে ক্লাস নেওয়ার জন্য নিজের ইচ্ছা ও যোগ্যতা আছে কি না বা থাকবে কি না তা ভেবে নেওয়া।
আপনার আইসিটি দক্ষতা আছে কি না বা আইসিটি দক্ষতা অর্জনে সক্ষমতা আছে কি না এবং দক্ষতা প্রয়োগ করে পাঠদান করতে আগ্রহী কি না, তা ভেবে নেওয়া। কেননা, এখনই পাঠদানে এআইয়ের ব্যবহার শুরু হয়েছে।
বর্তমানে এমপিওর মাধ্যমে সরকার মাধ্যমিক স্তরের একজন প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষককে মূল বেতন দেয় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের একজন প্রভাষককে প্রাথমিক মূল বেতন দেওয়া হয় ২২ হাজার টাকা। এ ছাড়া সব স্তরের শিক্ষকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট অনধিক ৫ শতাংশ, বাড়ি ভাড়া ভাতা এক হাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশ, বাংলা নববর্ষ ভাতা ২০ শতাংশ দেওয়া হয়। অপর দিকে এই মূল বেতন থেকে অবসর ও কল্যাণ তহবিলের জন্য ১০ শতাংশ টাকা জমা রাখা হয়। নিয়মিত ২৫ বা ততোধিক বছর চাকরি করে অবসরে গেলে কল্যাণ ও অবসর তহবিল থেকে সর্বশেষ মূল বেতনের প্রায় ১০০ গুণ টাকা পাওয়ার বিধান বিদ্যমান। তবে তা পেতে অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়।
মো. রহমত উল্লাহ্
অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা