ভক্ত ও ক্রিকেটারের সম্পর্ক তো এমনই। কোত্থেকে, কীভাবে যেন একটা অধিকারবোধ জন্মায়!

বিরাট কোহলির ওপরও তেমনই অধিকারবোধ জন্মেছে সেই ভক্তের। কোহলি টেস্ট ছাড়ার পর তাই তাঁকে সামনে পেয়েই সেই ভক্ত হৃদয়ে পুঞ্জীভূত অভিমানের আগল খুলে দিয়েছেন, ‘কেন অবসর নিলেন? আমরা আর ক্রিকেট দেখব না!’

আরও পড়ুনকোহলির অবসর নেওয়ার পেছনে এটাই তাহলে কারণ১৯ ঘণ্টা আগে

ঘটনাটি ঘটে মুম্বাই বিমানবন্দরে, ঠিক কবে তা জানা যায়নি। তবে গত সোমবার কোহলি টেস্ট থেকে অবসর ঘোষণার পর এবং গতকাল এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কোহলি ও তাঁর স্ত্রী বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মা বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পথে পাপারাজ্জিদের কবলে পড়েন। ভক্তরা তাঁকে ছেঁকে ধরেন। কেউ কেউ ছবিও তোলেন। ভিড়ের মধ্য থেকে একটি কণ্ঠের আওয়াজ কানে বেজেছে সবার।

কোহলির উদ্দেশে ভিড়ের ভেতর থেকে আবেগাক্রান্ত সেই কণ্ঠের আর্তি, ‘স্যার, আপনি ভুল করেছেন। কেন অবসর নিলেন? আমরা এখন থেকে আর ক্রিকেট দেখব না।’ সেই ভিড়ের ভেতর থেকে আরেকটি আবেগাক্রান্ত কণ্ঠের আর্তি, ‘শুধু আপনার জন্য আমি টেস্ট ক্রিকেট দেখতাম।’

ভক্তদের এমন মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই কোহলিকে ছুঁয়ে যায়। কিন্তু স্বাভাবিক থেকেই তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাঁদের প্রতি এবং খুব বিনয়ের সঙ্গে সবাইকে বের হওয়ার পথ করে দিতে বলেন। তখনই ভিড়ের ভেতর থেকে আরেক ভক্ত ছবি তোলার আবদার জানালে কোহলি বলেন, ‘আজ একটু তাড়া আছে। কথা দিচ্ছি পরেরবার হবে।’

আরও পড়ুনকোহলির অবসর নিয়ে বোমা ফাটালেন রঞ্জি কোচ, ‘সে ইংল্যান্ড সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিল’১৩ মে ২০২৫

কিন্তু আবেগাক্রান্ত কণ্ঠগুলো এরপরও থামেনি। আনুশকাকে নিয়ে কোহলি গাড়িতে ওঠার পর যখন দরজা বন্ধ করবেন, ঠিক তখনই আরেক ভক্ত বলেন, ‘স্যার, আমরা আর ক্রিকেট দেখব না। আপনার জন্য আমরা ক্রিকেট দেখতাম।’ কোহলি একটু হেসে বুড়ো আঙুল তুলে ইতিবাচক ভঙ্গি করেন এর জবাবে। কিন্তু ভক্তদের আর্তি তখনো থামেনি। ভিড়ের ভেতর থেকেই ভেসে এল কোহলির জন্য অপেক্ষা করার কথা, ‘আমরা আপনার (ফেরার) অপেক্ষায় থাকব। এখন শুধু ওয়ানডে দেখব। এবার আরসিবি (আইপিএল) জিতবে।’

ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ জানিয়েছে, টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার এক দিন পর আনুশকাকে নিয়ে বৃন্দাবনে গিয়েছিলেন কোহলি। সেখানে আধ্যাত্মিক নেতা প্রেমানন্দ গোবিন্দ শরণজী মহারাজের আশীর্বাদ নেন এই জুটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অনুসারীদের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, আত্মার শান্তি ও ভক্তির ক্ষমতা নিয়ে প্রেমানন্দ গোবিন্দর বলা কথাগুলো তাঁরা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছেন।

গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে নিজের হ্যান্ডলে টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন কোহলি। তাঁর এ সিদ্ধান্তে অনেকেই অবাক হয়েছেন। ভারতের সাবেক স্পিনার রবিচন্দ্র অশ্বিন যেমন বলেছেন, টেস্টে কোহলি আরও এক বা দুই বছর খেলতে পারতেন। অনেক ভক্তও তাঁর এ সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবসর ন ক হল র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের

প্রাচীন গ্রিসে ক্ষুদ্র অসংখ্য নগররাষ্ট্র ছিল। সেখানে নগরের অধিবাসীকেই বলা হতো নাগরিক, যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল নাগরিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা সেই সব ব্যক্তিকে নাগরিক বলব, যাদের আইন প্রণয়ন ও বিচারিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ক্ষমতা আছে।’ তাঁর মতে, যে ব্যক্তি নগররাষ্ট্রের শাসনকাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে অক্ষম, তিনি প্রকৃত নাগরিক নন।

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা নাগরিককে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে—যেকোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন, রাষ্ট্র প্রদত্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করেন এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য ন্যায়ের সঙ্গে পালন করেন, তাঁকেই নাগরিক বলা যায়। একই সঙ্গে নাগরিককে অবশ্যই অন্য মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন না করার ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে।

প্রতিটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো সৎ, যোগ্য ও নীতিবান নাগরিক। রাষ্ট্রের কাঠামো ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নাগরিকের চরিত্র ও আচরণের ওপর। তাই রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন সচেতন নাগরিক—যিনি নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত। এ জ্ঞান ও সচেতনতাই রাষ্ট্রকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে বলা হয় জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের কল্যাণে পরিচালিত শাসনব্যবস্থা; কিন্তু প্রশ্ন হলো যদি জনগণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন থাকেন, তবে কি গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ অক্ষুণ্ণ থাকে? বাস্তবতা হলো নাগরিকের অজ্ঞতা ও উদাসীনতাই স্বৈরতন্ত্রকে জন্ম দেয়।

প্রথমত, যেখানে মানুষ নিজের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ, সেখানে শাসকগোষ্ঠী সহজেই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে। ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন—এসব বিষয়ে নাগরিক উদাসীন থাকলে শাসকের জবাবদিহি বিলীন হয়ে যায়, তখন গণতান্ত্রিক কাঠামো টিকে থাকলেও এর প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, নাগরিকেরা ভয়, অজ্ঞতা বা উদাসীনতার কারণে যখন অন্যায় ও অনিয়ম মেনে নেন, তখনই স্বৈরতন্ত্র শিকড় গাড়ে। শাসকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত তারা অন্ধভাবে মেনে নিলে সরকার জবাবদিহি এড়িয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে; কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—শক্তিশালী শাসকের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয় কেবল তখনই, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। জার্মানি থেকে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের অতীত—সবখানেই দেখা যায়, নাগরিক–সচেতনতার অভাবেই স্বৈরতন্ত্রের বিস্তার ঘটেছিল।

তৃতীয়ত, নাগরিক সমাজ দুর্বল হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন কিংবা নাগরিক সংগঠনগুলোও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। তখন শাসকেরা সহজেই বিকল্প কণ্ঠরোধ করে ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অর্থাৎ, নাগরিকের নীরবতাই শাসকের জন্য সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রে পরিণত হয়।

অতএব, স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নাগরিক শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা। পরিবার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মানুষকে জানতে হবে তাদের অধিকার, কর্তব্য ও রাষ্ট্রের কাছে দাবি করার উপায়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হতে হবে সত্য প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম, তোষণ বা প্রোপাগান্ডার যন্ত্র নয়। মনে রাখতে হবে—অধিকার চর্চা না করলে অধিকার হারিয়ে যায়। তাই প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হলো নিজের অধিকার সম্পর্কে জানা ও তা প্রয়োগ করা।

সবশেষে বলা যায়, নাগরিকের অধিকার বিষয়ে অসচেতনতা কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়; বরং তা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর। সচেতন নাগরিক সমাজই পারে জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র গড়ে তুলতে আর অসচেতন নাগরিক সমাজই সৃষ্টি করে স্বৈরতন্ত্রের জন্মভূমি।

ইসরাত জাহান

শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আমরা তখনই বিজয়ী হব, যখন এই লজ্জা বহন করা বন্ধ করব’
  • স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের