চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু
Published: 14th, May 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দর সড়কটি মাপামাপির পর প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ছয় মিটার চওড়া জনবহুল সড়কটি আরও ১০ মিটার প্রশস্ত করা হবে। পুরো সড়কটি চারলেনে উন্নত করা না হলেও আলাদাভাবে তিনটি জায়গায় ‘চারলেনের মতোই’ রাস্তা স্থাপন করা হবে। আগামী বছরের জুনে সড়কটির উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
বুধবার (১৫ জুন) সকালে দেখা গেছে-রানীহাটি বাজার সংলগ্ন এলাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। স্কেভেটর দিয়ে মাটি খনন করে রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে। শ্রমিকরাও মনযোগ দিয়ে কাজ করছেন। সড়কটির দুধারে থাকা জেলা পরিষদ ও বিএমডিএ’র গাছগুলো কেটে নেওয়া হয়েছে। সড়কটির প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হওয়ার দৃশ্য দেখে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করা ব্যক্তিদের উচ্ছ্বাস করতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের এপ্রিল মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কটি যথাযথ মান ও প্রশস্তকরণে একনেক সভায় একটি প্রকল্প পাস হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ২০২৬ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কটি ২৮ বছরেরও বেশি পুরাতন। ব্যস্ততম সড়কটির গড় প্রস্থ ৬ দশমিক ২ মিটার। এছাড়া সড়কটির কয়েক জায়গায় আছে দুর্ঘটনাপ্রবণ কয়েকটি বাঁক। সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনায় প্রায় ৩১ দশমিক ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে। এরমধ্যে শিবগঞ্জের বহলাবাড়ি ও বেঁকি মোড়ের বাঁক দুটি সরলীকরণ করা হবে। এছাড়া সড়কটির বিভিন্নস্থানে থাকা কালভার্ট প্রশস্তকরণ, দুটি ইন্টারসেকশন ও রিজিড পেভমেন্ট বাস-বে ও ট্রাক লেন নির্মাণ করা হবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে গোটা সড়কটি চারলেনে উন্নতি করা হবে না। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারঘরিয়া বাজার, রানীহাটি বাজার ও শিবগঞ্জের ছত্রাজিতপুর বাজার সংলগ্ন এলাকাটি চারলেনের মতো করে রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
২০২২ সালের ২৯ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কে ট্রাকচাপায় মুনিরা খাতুন নামে এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়। ওই দিন সড়কটি চারলেনে উন্নীত করার দাবিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে স্থানীয়রা। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয়া হয়। এই দাবিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একাধিকবার মানববন্ধনের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
সচেতন নাগরিক ও যানবাহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটির শেষ মাথায় আছে সোনামসজিদ স্থলবন্দর। ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যসামগ্রী এ সড়ক দিয়ে পাঠানো হয় রাজধানীসহ দূরবর্তী জেলায়। এছাড়া যাত্রীবাহী বাহনে দিনে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে নিয়মিত। অপ্রশস্ত সড়ক হওয়ায় হরহামেশা ঘটে দুর্ঘটনা।
এসব ঘটনা থেকে মুক্তি পেতেই তারা চার লেন সড়কের দাবি করেছিলেন। এরপরেই সড়কটি প্রশস্তকরণের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। সড়কটি প্রশস্ত হলেই দুর্ঘটনা কমবে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনা আর যানজট এড়াতে সড়কটি চারলেন করতে হবে।
শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, ‘‘এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। স্থলবন্দরের পণ্যবোঝাই করে বিভিন্ন পরিবহন দূরদূরান্তে যায়। সড়কটি অপ্রশস্ত হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণহানীসহ বহু মানুষ পঙ্গু হয়ে গেছেন। জনবহুল সড়কটি প্রশস্ত করলেই হবে না। এটিকে চারলেন করতে হবে। না হলে দুর্ঘটনা শূন্যের কোঠায় আসবে না।’’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কটি চারলেন হওয়া উচিত। সড়কটি প্রশস্ত করে দায় সারলে হবে না। প্রশস্তের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় না করে পরিকল্পিতভাবে একবারই চার লেনের জন্য টাকা খরচ করলে এখানকার মানুষ অনেক উপকৃত হবে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহ্ মো.
তিনি আরও বলেন, “সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১ দশমিক ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত। গোটা সড়কটি চারলেন হচ্ছে না। তবে বারঘরিয়া, রানীহাটি ও ছত্রাজিতপুর বাজারের এলাকাটি শুধু চারলেন স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। জেলা পরিষদ ও বিএমডিএ তাদের গাছ কেটে নিয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকেই গোটা সড়কজুড়ে কর্মযজ্ঞ চলবে পুরোদমে।”
প্রকৌশলী শাহ্ মো. আসিফ বলেন, “সড়কটিতে অনেক মানুষের যাতায়াত। তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা এখন মূল সড়কে হাত দিব না। আগে রাস্তা চওড়ার কাজ করা হবে। পরে মূল রাস্তায় হাত দেওয়া হবে। এতে করে দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে না। সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবেন। আগামি বছরের জুন মাসের মধ্যে সড়কটি কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।”
ঢাকা/শিয়াম/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ স ন মসজ দ স র প রশস ত প রকল প দ র ঘটন শ বগঞ জ বগঞ জ র সড়কট র স ত কর দশম ক বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন
সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।
স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, “নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”
মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”
মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”
ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ