চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দর সড়কটি মাপামাপির পর প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ছয় মিটার চওড়া জনবহুল সড়কটি আরও ১০ মিটার প্রশস্ত করা হবে। পুরো সড়কটি চারলেনে উন্নত করা না হলেও আলাদাভাবে তিনটি জায়গায় ‘চারলেনের মতোই’ রাস্তা স্থাপন করা হবে। আগামী বছরের জুনে সড়কটির উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

বুধবার (১৫ জুন) সকালে দেখা গেছে-রানীহাটি বাজার সংলগ্ন এলাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। স্কেভেটর দিয়ে মাটি খনন করে রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে। শ্রমিকরাও মনযোগ দিয়ে কাজ করছেন। সড়কটির দুধারে থাকা জেলা পরিষদ ও বিএমডিএ’র গাছগুলো কেটে নেওয়া হয়েছে। সড়কটির প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হওয়ার দৃশ্য দেখে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করা ব্যক্তিদের উচ্ছ্বাস করতে দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের এপ্রিল মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কটি যথাযথ মান ও প্রশস্তকরণে একনেক সভায় একটি প্রকল্প পাস হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ২০২৬ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কটি ২৮ বছরেরও বেশি পুরাতন। ব্যস্ততম সড়কটির গড় প্রস্থ ৬ দশমিক ২ মিটার। এছাড়া সড়কটির কয়েক জায়গায় আছে দুর্ঘটনাপ্রবণ কয়েকটি বাঁক। সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনায় প্রায় ৩১ দশমিক ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে। এরমধ্যে শিবগঞ্জের বহলাবাড়ি ও বেঁকি মোড়ের বাঁক দুটি সরলীকরণ করা হবে। এছাড়া সড়কটির বিভিন্নস্থানে থাকা কালভার্ট প্রশস্তকরণ, দুটি ইন্টারসেকশন ও রিজিড পেভমেন্ট বাস-বে ও ট্রাক লেন নির্মাণ করা হবে। 

এই প্রকল্পের মাধ্যমে গোটা সড়কটি চারলেনে উন্নতি করা হবে না। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারঘরিয়া বাজার, রানীহাটি বাজার ও শিবগঞ্জের ছত্রাজিতপুর বাজার সংলগ্ন এলাকাটি চারলেনের মতো করে রাস্তা নির্মাণ করা হবে।

২০২২ সালের ২৯ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কে ট্রাকচাপায় মুনিরা খাতুন নামে এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়। ওই দিন সড়কটি চারলেনে উন্নীত করার দাবিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে স্থানীয়রা। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয়া হয়। এই দাবিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একাধিকবার মানববন্ধনের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। 

সচেতন নাগরিক ও যানবাহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটির শেষ মাথায় আছে সোনামসজিদ স্থলবন্দর। ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যসামগ্রী এ সড়ক দিয়ে পাঠানো হয় রাজধানীসহ দূরবর্তী জেলায়। এছাড়া যাত্রীবাহী বাহনে দিনে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে নিয়মিত। অপ্রশস্ত সড়ক হওয়ায় হরহামেশা ঘটে দুর্ঘটনা। 

এসব ঘটনা থেকে মুক্তি পেতেই তারা চার লেন সড়কের দাবি করেছিলেন। এরপরেই সড়কটি প্রশস্তকরণের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। সড়কটি প্রশস্ত হলেই দুর্ঘটনা কমবে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনা আর যানজট এড়াতে সড়কটি চারলেন করতে হবে।

শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, ‘‘এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। স্থলবন্দরের পণ্যবোঝাই করে বিভিন্ন পরিবহন দূরদূরান্তে যায়। সড়কটি অপ্রশস্ত হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণহানীসহ বহু মানুষ পঙ্গু হয়ে গেছেন। জনবহুল সড়কটি প্রশস্ত করলেই হবে না। এটিকে চারলেন করতে হবে। না হলে দুর্ঘটনা শূন্যের কোঠায় আসবে না।’’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কটি চারলেন হওয়া উচিত। সড়কটি প্রশস্ত করে দায় সারলে হবে না। প্রশস্তের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় না করে পরিকল্পিতভাবে একবারই চার লেনের জন্য টাকা খরচ করলে এখানকার মানুষ অনেক উপকৃত হবে।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহ্ মো.

আসিফ বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কটি প্রস্থ ৬ দশমিক ২ মিটার। সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে বারঘরিয়া বাজার থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত আরও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত করা হবে। শিবগঞ্জে ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের বহালাবাড়ি ও শিবগঞ্জ পৌরএলাকার বেঁকির মোড়টির বাঁক সরলীকরণ করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১ দশমিক ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত। গোটা সড়কটি চারলেন হচ্ছে না। তবে বারঘরিয়া, রানীহাটি ও ছত্রাজিতপুর বাজারের এলাকাটি শুধু চারলেন স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। জেলা পরিষদ ও বিএমডিএ তাদের গাছ কেটে নিয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকেই গোটা সড়কজুড়ে কর্মযজ্ঞ চলবে পুরোদমে।”

প্রকৌশলী শাহ্ মো. আসিফ বলেন, “সড়কটিতে অনেক মানুষের যাতায়াত। তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা এখন মূল সড়কে হাত দিব না। আগে রাস্তা চওড়ার কাজ করা হবে। পরে মূল রাস্তায় হাত দেওয়া হবে। এতে করে দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে না। সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবেন। আগামি বছরের জুন মাসের মধ্যে সড়কটি কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।”

ঢাকা/শিয়াম/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ স ন মসজ দ স র প রশস ত প রকল প দ র ঘটন শ বগঞ জ বগঞ জ র সড়কট র স ত কর দশম ক বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না: শেখ বশিরউদ্দীন

ভারত আরও চারটি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, এমন কোনো বিষয়ে ছাড় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়নি। দুই দেশের মধ্যে খাদ্য ও কৃষিপণ্যের আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি মেটানো হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে দর–কষাকষি চালিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে ১৫ শতাংশের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ।

আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা থাকলেও এতটা অস্থিতিশীল নয় যে ব্যবসা–বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। তাই রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে তাতে সমস্যা হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের নতুন বিধিনিষেধের আওতায় সে দেশের ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটের পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারবেন না। শুধু দেশটির মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানির সুযোগ আছে। এমন বিধিনিষেধ দিয়ে গতকাল সোমবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালকের কার্যালয় (ডিজিএফটি) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে গত কয়েক মাসে কয়েক দফায় অশুল্ক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। এর আগে গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দেয় দেশটি। তার আগে ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করে দেশটি।

এদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভারত বাতিল করার এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করেছে। এর আগে বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক সংস্কারে জরুরি টেন্ডার দাবি শিক্ষার্থীদের
  • ব্যাংক একীভূত হবেই, আতঙ্কের কিছু নেই-গভর্নর
  • ৪ মাস পর হিলি বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু
  • ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের উদ্বেগজনক ধারা চলছে
  • ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না: শেখ বশিরউদ্দীন
  • ভাঙ্গা–বরিশাল মহাসড়কের ৪৯ কিলোমিটার বেহাল, ‘ভরসা’ জোড়াতালির মেরামত