জানুয়ারি থেকে মার্চে রাজনৈতিক সংঘাতে ৬৭ জন নিহত
Published: 15th, May 2025 GMT
রাজনৈতিক সহিংসতায় গত জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে সারাদেশে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ১৩ জন করে নিহত হন। সর্বোচ্চ ৪১ জন মারা যান মার্চে। এ ছাড়া ১ হাজার ৯৯৯ জন সহিংসতায় আহত হয়েছেন।
গতকাল বুধবার মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ প্রকাশিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকারকর্মীদের পাঠানো তথ্য এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই তিন মাসে নানা ধরনের সহিংসতায় ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া নিম্ন আদালত থেকে ২৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে আটটি। এর মধ্যে পিটিয়ে মারা হয় তিনজনকে, নির্যাতনে মারা যান দু’জন আর গুলিতে নিহত হন তিনজন। কারাগারে মারা যান ১৯ জন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ছয় বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া চোর-ডাকাতসহ বিভিন্ন সন্দেহে ৩৩ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে ৬৪টি। এর মধ্যে আহত হয়েছেন ৪৭ জন, লাঞ্ছিত হয়েছেন ১০ জন, আক্রমণ ও গ্রেপ্তার হয়েছেন একজন করে। এ ছাড়া হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন পাঁচজন।
নারীর ওপর সহিংসতার তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌতুকের কারণে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৪ জন। এই ক’মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৫৭ নারী। তাদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু ১৫০ জন এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারী ৫৩ জন। বয়স জানা যায়নি ৫৩ নারীর। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২ নারী।
প্রতিবেদনে একগুচ্ছ সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে– আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করা; নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ বাস্তবায়ন করাসহ নির্যাতনবিরোধী জাতিসংঘ সনদের অপশনাল প্রোটোকল অনুমোদন করা; গুমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করাসহ ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া; কারা কর্মকর্তাদের অনিয়ম, অবহেলা ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া; সর্বস্তরে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬, সন্ত্রাস দমন আইন, ২০০৯ ও সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩সহ সব নিবর্তনমূলক আইন অবিলম্বে বাতিল; নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে দ্রুততার সঙ্গে অপরাধীদের বিচার করে শাস্তি দেওয়া এবং সীমান্তে বিএসএফের সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করাসহ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক মেনে চলা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দুই সীমান্তে ৬০ জনকে পুশইন করল বিএসএফ
মৌলভীবাজার ও সিলেট সীমান্ত দিয়ে বুধবার নতুন করে ৬০ জনকে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এদিকে ঠাকুরগাঁও সীমান্ত থেকে এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ ৪৪ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। বুধবার ভোরে বিএসএফ তাদের ঠেলে পাঠায়। এ সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের আটক করেছে। তারা বাংলাদেশি নাগরিক বলে বিজিবি নিশ্চিত হয়েছে। এর আগে ৬ ও ৭ মে শতাধিক মানুষকে বিএসএফ ঠেলে পাঠালেও বিজিবি ৫৯ জনকে আটক করে।
উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, আজ আটকদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ১৩ শিশু রয়েছে। আটকরা জানিয়েছেন, তারা কাজের জন্য অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি ভারতীয় পুলিশ তাদের আটক করে। তারা জানান, সীমান্তের ওপারে আরও মানুষকে আটক করে রেখেছে বিএসএফ। তাদেরও অবৈধভাবে পাঠানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে তারা।
বিজিবি ৫২-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান জানান, পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা বাংলাদেশি। তাদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এ ছাড়া সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আটগ্রাম সীমান্তে ১৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এদিন সকালে তাদের আটক করেছে বিজিবি। নাগরিকত্বের বিষয়টি যাচাই-বাছাই চলছে। প্রাথমিকভাবে তারা চুয়াডাঙ্গা ও নীলফামারীর বাসিন্দা বলে জানা গেছে। আটকদের মধ্যে আট পুরুষ, ছয় নারী ও দুই শিশু রয়েছেন। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানিয়েছেন কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আউয়াল।
বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার জানিয়েছেন, তারা ৮-১০ বছর ধরে ভারতে অবস্থান করছিলেন। সীমান্তে ভারতীয় অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, অনুপ্রবেশ ও পুশইন ঠেকাতে বুধবার সকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বালুজুরীতে বিজিবির বিওপি ক্যাম্প উদ্বোধন করা হয়েছে। এ সময় সেক্টর কমান্ডার কর্নেল রেজাউল কবির বলেন, কাঁটাতারের বেড়া নেই কিংবা বাঁশের বেড়া আছে, সেখান থেকেও কোনো তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল সীমান্তে ঘাস কাটতে গিয়ে এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ। এদিন দুপুরে ধর্মগড় বিওপির সীমান্ত পিলার ৩৭৩/১-এস-এর বিপরীতে এ ঘটনা ঘটে।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, শাহানাবাদ গ্রামের চার বাংলাদেশি সীমান্তে ঘাস কাটছিলেন। বিষয়টি ভারতের ১৮৪ আমবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্পের টহল দলের নজরে এলে তারা তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। তিনজন দ্রুত পালিয়ে আসে। একজনকে আটক করে বিএসএফ। আটক আজিজুর রহমান শাহানাবাদ গ্রামের মরতুজার ছেলে।
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজীর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের নাগরিককে নিরাপদে ফেরত আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি, পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান হবে।’
(সংশ্লিষ্ট ব্যুরো, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদন)