মণিপুরে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১০ জন নিহত
Published: 15th, May 2025 GMT
ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যের চান্দেল জেলায় গতকাল বুধবার আসাম রাইফেলসের সদস্যদের গুলিতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড দাবি করেছে।
সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ওই ১০ জন নিহত হয়েছেন। যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁরা ‘জঙ্গি’ ছিলেন। নিহত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাঁদের পরিবার বা আইনজীবীদের তরফে এখনো গণমাধ্যমে কিছু জানানো হয়নি।
সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করেছে, দক্ষিণ মণিপুরের ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের চান্দেল জেলার নতুন সামতাল গ্রামের কাছে এই সংঘর্ষ হয়েছে। জঙ্গিরা প্রথমে গুলি চালালে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। এই বন্দুকযুদ্ধে ১০ জন নিহত হয়েছেন।
অবশ্য জঙ্গিদের পাল্টা গুলি চালানো নিয়ে বা এই সংঘর্ষ নিয়ে কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর তরফে এখনো কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড এক্সের বিবৃতি বলেছে, ‘ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে নিউ সামতাল গ্রামের কাছে সশস্ত্র ক্যাডারদের গতিবিধির খবর সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পাওয়া গিয়েছিল। আসাম রাইফেলস ১৪ মে সেখানে অভিযান চালায়।’
এ অভিযানেই ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়ে সামাজিক যোগাযোমাধ্যমে সেনাবাহিনীর তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই অঞ্চল থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চান্দেল জেলা প্রধানত কুকি, জো, নাগাসহ অন্যান্য আদিবাসী সমাজের মানুষ বসবাস করেন। তবে কোন জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে এবং তাঁরা কারা, সে সম্পর্কে সেনাবাহিনী বা সরকার এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
মণিপুরে ধারাবাহিক গ্রেপ্তার, হত্যা
২০২৩ সালের মে মাস থেকে মণিপুরে মেইতেই ও আদিবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষে ২৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়। কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হাতে নেয়।
এরপর ধারাবাহিকভাবে রাজ্যে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন সংঘর্ষে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। ১০ মে মণিপুরে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে কমপক্ষে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে রাজ্য পুলিশ জানিয়েছিল। তাঁদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।
মণিপুরে স্বাধীনতাকামী পুরোনো জঙ্গিদের এখনো বেশ কিছু গোষ্ঠী যথেষ্ট সক্রিয়। এর মধ্যে অন্যতম নিষিদ্ধ সশস্ত্র সংগঠন কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি। ১৯৮০ সালে গঠিত এই মার্ক্সসিস্ট-লেনিনিস্ট-মাওবাদী ভাবধারার সশস্ত্র সংগঠন মণিপুরের অন্যতম পুরোনো সংগঠন। কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে আরও অন্তত ২০টি সংগঠন গঠিত হয়েছে। কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টির অধীনও একাধিক সশস্ত্র সামরিক গেরিলা বাহিনী রয়েছে।
তবে কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান সংগঠন কতটা শক্তিশালী বা তার শাখা সংগঠনগুলো কতটা মজবুত, তা জোর দিয়ে বলা মুশকিল। গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, এদের অধিকাংশই অত্যন্ত ছোট ও অসংগঠিত।
তবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সময়ে রাজ্য পুলিশের এক উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের হাতে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র রয়েছে, যেটা বেশ উদ্বেগের বিষয়।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেছিলেন, এই সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব প্রধানত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যে কারণে তাদের পক্ষে আন্দোলন চলাকালে আরামবাই টেঙ্গোল নামে তাদের একটি অস্বীকৃত নিরাপত্তা প্রদানকারী সংগঠনের হাতে প্রভূত অস্ত্র তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।
ওই কর্মকর্তার বক্তব্য অনুসারে, সরকারের লক্ষ্য ছিল এই পুরোনো মাওবাদী ভাবধারার সংগঠনগুলোকে কুকি বা নাগা বিদ্রোহী সংগঠনের পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় করা। সেই কাজ সেনাবাহিনী শুরু করে। এর ফলেই মণিপুরে নতুন করে শুরু হয় বন্দুকযুদ্ধ, যাতে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও তাঁদের মধ্যে কতজন আসলেই জঙ্গি, সে সম্পর্কে সার্বিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
১০ মে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুলিশ তাঁদের পরিচয় জানিয়েছে। পুলিশের তরফে বলা হয়েছিল, ওই দিন গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মধ্যে কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি (পিপলস ওয়ার গ্রুপ) নামে এক উপদলের দুই সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তাঁদের নামও প্রকাশ করা হয়েছিল। তাঁরা হলেন নিংথৌজাম কিরণ মেইতেই ওরফে বোইনাও (২৯) এবং সোরোখাইবাম ইনাওচা সিং (৪৫) নামে দুজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার।
এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো গত দেড় বছরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে তারা জোর করে টাকা তুলতে শুরু করেছিল বলে পুলিশের অভিযোগ।
তবে এই মুহূর্তে মণিপুরে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং কর্মীরা যথেষ্ট সক্রিয় না থাকায় ‘জঙ্গি’ বলে যাঁদের পরিচয় দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের সম্পর্কে বিশেষ কোনো তথ্য স্থানীয় বা জাতীয় প্রচারমাধ্যমে আসছে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর সশস ত র কম ন ড স ঘর ষ ন ন হত মণ প র স গঠন র তরফ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমের টানে চীনা যুবক দিনাজপুরে, মুসলিম হয়ে করলেন বিয়ে
প্রেম মানেনা জাতি, কুল বা কোন বাঁধা। এমনই আরো একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশি প্রেমিকা এক তরুণীর সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন সুদুর চীন থেকে আসা প্রেমিক যুবক ইয়ং সং সং (২৬)।
এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ১০ নম্বর রাণীপুকুর ইউপির কাজিপাড়া শিমুলতলা গ্রামে। খবরটি ছড়িয়ে পড়ায় প্রেমিক চীনা যুবককে এক নজর দেখার জন্য প্রেমিকার বাড়িতে উৎসুক জনতা ভিড় করছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় প্রেমিকা সুরভী আক্তারের বাড়িতে এসে পৌঁছান ওই চীনা যুবক।
আরো পড়ুন:
চীন-বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা উন্নয়ন প্রদর্শনীর উদ্বোধন
‘আলোকিত স্বার্থবোধের’ ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি নিয়েছি আমরা: তৌহিদ হোসেন
স্থানীয়রা জানান, চীনা যুবক ইয়ং সং সং পেশায় একজন নির্মাণকর্মী। তার বাড়ি চীনের তাইকো জিয়াংসু এলাকায়। তার বাবা মৃত ইউয়ান সিকি এবং মা লিউ ফেনহং। প্রায় ১ বছর আগে কাজিপাড়া শিমুলতলা গ্রামের অটোচালক নুর হোসেনের (বাবু) মেয়ে সুরভী আক্তারের (১৯) সঙ্গে ভার্চুয়াল হ্যালো ট্যাগ অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের দুইজনের পরিচয় হয়।
এরপর ভার্চুয়াল যোগাযোগের মাধ্যমে দুইজনের মধ্যে শুরু হয় বন্ধুত্ব, যা গড়ায় ভালোবাসায়। একপর্যায়ে প্রেমিক ইয়ং সং সং গত ৪ আগস্ট সুদুর চীন থেকে প্রেমিকা সুরভী আক্তারের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসেন। এরপর তাদের বিয়ে হয়।
সুরভীরা দুই বোন। মা সাথী আক্তার গৃহিনী। সুরভী আক্তার বলেন, “হ্যালো ট্যাগ নামে একটি অ্যাপসের মাধ্যমে আমাদের পরিচয় হয়। সেখানে আস্তে আস্তে আমাদের কথা চলে, পরিচয় রূপ নেয় ভালোবাসায়। আমাদের এই সম্পর্ক ১ বছরের। পরে সে বাংলাদেশে এসে আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি তাকে জানাই, যদি আমার ধর্ম গ্রহণ করতে পারলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি আছি। পরে সে বাংলাদেশে আসে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এখন আমি তাকে বিয়ে করেছি। আমার পরিবার ও এলাকাবাসী অত্যন্ত খুশি।”
সুরভীর বাবা নুর হোসেন বাবু বলেন, “আমার দুই মেয়ে। তারা মায়ের সঙ্গে ঢাকায় থাকে। আমার বড় মেয়ের সঙ্গে চীনা নাগরিকের পরিচয় হয়েছে মোবাইলের মাধ্যমে। তারা একে অপরকে পছন্দ করেছে। বাংলাদেশে এসে চীনা জামাই আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে। ৯ আগস্ট আমি তাদেরকে ঢাকার গাজীপুর থেকে দিনাজপুরে নিয়ে এসেছি।”
ঢাকা/মোসলেম/মেহেদী