রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুষ্কৃতকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্যের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে সাম্যের মরদেহ সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়া ইউনিয়নের সরাতৈল গ্রামে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। এ সময় গোটা গ্রামে শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জানাজা শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্রামের কবরস্থানে সাম্যর মরদেহ দাফন করা হয়। 

কৃতি শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য ঢাবির স্যার এফ রহমান হলে থেকে লেখাপড়া করতেন। তিনি ছাত্রদলের হল শাখা কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। অত্যন্ত বিনয়ী ও মেধাবী শিক্ষার্থী সাম্যের এই অকাল মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। স্বজন ও গ্রামবাসীর একটাই প্রশ্ন, কেন হত্যা করা হলো নম্র ভদ্র ছেলেটিকে! 

আজ বৃহস্পতিবার সরাতৈল গ্রামে সাম্যের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শেকস্তব্ধ গোটা পরিবার। বাড়ির আঙ্গিনায় বসে কাঁদছিলেন বাবা হাজী ফকরুল আলম ফরহাদ। বারান্দায় নির্বাক হয়ে বসে সাম্যের বড় ভাই আমিরুল ইসলাম ও চাচা হাজী কায়সারুল আলম। কথা হয় সাম্যের বাবা ফকরুল আলম ফরহাদের সঙ্গে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘একজন সন্তানকে শিশুবেলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়া করানো অনেক কষ্টসাধ্য। প্রত্যেক বাবা-মা চান সন্তানকে মানুষ করে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে। কারণ এই সন্তানই এক সময় পরিবারের হাল ধরবে। অথচ সাম্য অকালে চলে গেল। পরিবার, গ্রাম, সমাজ কোথাও তার কোনো শত্রু ছিল বলে আমাদের জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতা হিসেবেও কখনো কারও সঙ্গে গোলযোগের কথা শুনিনি। একজন স্বচ্ছ ও ভালো মানুষ হিসেবে সবার কাছে সাম্য ছিল অনেক প্রিয়। ছুরিকাঘাতে তার এই মর্মান্তিক মৃত্যু কিছুতেই আমরা মেনে নিতে পারছি না। এভাবে যেন আর কোন মায়ের কোল খালি না হয়। পুত্রের মরদেহ যেন আর কোনো বাবার কাঁধে না ওঠে।’ তিনি সাম্য হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। 

সাম্যের চাচা হাজী কায়সারুল আলম বললেন, ‘২০১৫ সালে মা মারা যাবার পর আমরা সাম্যকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। ওরা ৪ ভাই। সাম্য সবার ছোট। সে বাবার মতো দেখতো আমাকে। অথচ আমাদের কলিজার টুকরা ছেলেটি আজ শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলো।’ তিনিও সাম্য হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। 

সাম্যের বড় ভাই সরদার আমিরুল ইসলাম জানান, ‘বিএনপি পরিবার হিসাবে আমরা এলাকায় স্বীকৃত। সেই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল সাম্য। কখনও কাউকে কটূক্তি করতে ওকে দেখিনি আমরা। বরং মানুষের উপকার করতে পারলে খুব আনন্দ পেত। সদালাপী ও হাসি-খুশি ছেলেটি এভাবে খুনের শিকার হবে তা আমাদের স্বপ্নেও ধারণা ছিল না।’ 

সাম্য হত্যা জড়িত সন্দেহে আটক তিন ব্যক্তি সম্পর্কে ব্যাপক অনুসন্ধান প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আটক ব্যক্তিরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা তা অবশ্যই দেখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাহবাগ থানা পুলিশকে। সাম্যের পরিবার কখনোই চায় না কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির শাস্তি।’ তিনি ভাইয়ের আত্মার শান্তির জন্য সবার কাছে দোয়া চান। 

কথা হয় সরাতৈল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানের সঙ্গে। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, সাম্যের খুনের বিষয়টি তারা কেউ সহ্য করতে পারছেন না। গোটা গ্রাম সাম্যের শোকে মুহ্যমান। সবাই উপযুক্ত বিচার চায়।

ধুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সাম্যের মৃত্যু সবার হৃদয়ে মারাত্মকভাবে নাড়া দিয়েছে। ছোটবেলা থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এই মিষ্টভাষী ছেলেটিকে আমরা ভুলতে পারছি না।’
 
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, জেলা ছাত্রদল সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ সংগঠনের নেতারা এরইমধ্যে সাম্যের বাড়িতে এসে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ হত য র ল ইসল ম ছ ত রদল র ল আলম র মরদ হ পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন

সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।

স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, ‍“নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”

মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।” 

পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”

কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”

মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”

ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ