পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধে নতুন পরিকল্পনা ভারতের
Published: 16th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের কৃষিজমিতে পানি সরবরাহ বন্ধে সীমান্তবর্তী একটি নদীর পানি সংগ্রহের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধির পরিকল্পনা বিবেচনা করছে। সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতের ২৬ পর্যটক নিহত হয়। এ ঘটনায় পাকিস্তানের মদদ রয়েছে অভিযোগ করে ভারত। ওই দিনই ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় দিল্লি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা। এই সিন্ধু পানি চুক্তির বদৌলতে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ খামার সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানি ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের অধিকাংশ হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্প এই জলব্যবস্থার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে।
চারটি সূত্র জানিয়েছে, চুক্তি স্থগিতের পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কর্মকর্তাদের সিন্ধু নদী ব্যবস্থার তিনটি জলাশয় চেনাব, ঝিলাম ও সিন্ধু নদীর উপর প্রকল্পের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন দ্রুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আলোচনার অধীনে থাকা মূল পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, চেনাব নদী থেকে প্রবাহিত রণবির খালের দৈর্ঘ্য দ্বিগুণ করে ১২০ কিলোমিটার করা। এই চেনাব নদী ভারতের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের কৃষিক্ষেত্র পাঞ্জাবে চলে গেছে। ১৯ শতকে খনন করা রণবির খালটি ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
সিন্ধু পানি চুক্তিতে ভারতকে সেচের জন্য চেনাব থেকে সীমিত পরিমাণে জল নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে চেনাব নদী থেকে রণবির খালে প্রতি সেকেন্ডে ৪০ ঘণমিটার পানি প্রবাহিত হয়। ভারত খালটি সম্প্রসারিত করলে তা কয়েক গুণ বেড়ে হবে ১৫০ ঘণমিটার। অবশ্য এই খালটি সম্প্রসারণ করতে কয়েক বছর সময় লাগবে ভারতের।
এ ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ রয়টার্সের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি।
রয়টার্সের দেখা দুটি সরকারি নথি এবং বিষয়টির সাথে পরিচিত পাঁচজনের সাক্ষাৎকার অনুসারে, রণবির খাল সম্প্রসারণের পরিকল্পনার পাশাপাশি, ভারত এমন প্রকল্পও বিবেচনা করছে যা সম্ভবত পাকিস্তানে বরাদ্দকৃত নদী থেকে পানি প্রবাহ হ্রাস করবে।
একটি নথিতে দেখা গেছে, সিন্ধু, চেনাব এবং ঝিলামের পানি ‘সম্ভাব্যভাবে তিনটি উত্তর ভারতীয় রাজ্যে প্রবাহিত নদীতে বিতরণ করা হবে।’
একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, নথিটি ২২ এপ্রিলের হামলার পরে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
ভারতের অন্যান্য সম্ভাব্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, এমন বাঁধ নির্মাণ করা যা প্রচুর পরিমাণে পানি সঞ্চয় করতে পারে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নথি অনুসারে, ভারত কমপক্ষে পাঁচটি সম্ভাব্য জলাধার প্রকল্প চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে চারটি চেনাব এবং ঝিলাম নদীর উপনদীতে অবস্থিত।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রণব র খ ল প রব হ ত চ ন ব নদ প রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প পিছু হটায় কি মন্দার কবল থেকে বাঁচবে যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে স্বপ্রণোদিত মন্দা ও সরবরাহব্যবস্থা ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে ৯০ দিনের বিরতি দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, উভয় দেশই উচ্চ শুল্কের পথ থেকে ফিরে আসবে। শুল্ক ও পাল্টা শুল্কের এই খেলায় বিশ্বের প্রধান দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র-চীনের শুল্কযুদ্ধে এই নাটকীয় বিরতি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অন্তত গত এক মাসের পরিস্থিতি বিবেচনায়। এ সমঝোতা ওয়াল স্ট্রিটে আশাবাদ সঞ্চার করেছে। আশা জাগিয়েছে, শুল্ককেন্দ্রিক দুঃস্বপ্ন হয়তো এড়ানো সম্ভব হবে।
অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুরোপুরি বিপদমুক্ত—এ কথা এখনই বলা যাবে না। মন্দার ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে, যদিও অর্থনৈতিক পতনের আশঙ্কা কিছুটা কমেছে।
শুল্ক এখনো বেশি। গত কয়েক দশকে এমন উচ্চ শুল্ক ছিল না। অনিশ্চয়তা এর চেয়ে বেশি। আস্থা ও বাণিজ্যপ্রবাহের যে ক্ষতি হয়েছে, তা রাতারাতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
এ ছাড়া ভবিষ্যতে কী ঘটবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এত অল্প সময়ে একের পর এক অর্থনৈতিক ধাক্কার পর কোনো আধুনিক অর্থনীতি কীভাবে তা সামাল দেয়, তার নজির নেই।
আমেরিকান অ্যাকশন ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকানদের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ডগলাস হোল্টজ-ইকিন বলেন, ‘আমরা এখনো বিপদ কাটিয়ে উঠিনি।’ অনেকে বলছেন, ট্রাম্প উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। এখনো যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্বহার শতবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুল্ক অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, তা ছিল একেবারে অস্বাভাবিক। এটা কার্যত চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একপ্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো। সরবরাহব্যবস্থা–বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন, এতে দোকানের তাক খালি হয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা হতে পারে।
বিশ্লেষকে বলেন, ট্রাম্পের এই ফিরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে আপাতত রক্ষা করেছে। তাঁরা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন যখন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক থেকে সরে আসে, তখন বোঝা যায় যে তারা উপলব্ধি করেছে, এই হারে শুল্ক থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।
ট্রাম্প বেশ কিছু ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, যেমন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘শিশুদের আসলে কতগুলো পুতুল দরকার?’ তারপরও দোকানের তাক খালি হয়ে যাওয়া বা বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন তিনি। ট্রাম্প প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন।
‘শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষই সৌভাগ্যক্রমে ক্রিসমাসটা বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ বলে মনে করেন ব্লিকলি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা পিটার বুকভার। তাঁর মতে, ‘ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ব্যবসাগুলো হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছিল’; শেষমেশ ট্রাম্প তা শুনেছেন এবং গুরুত্ব দিয়েছেন।
সোমবার শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তের পরও চীনের পণ্যে এখনো ৩০ শতাংশ করা হলেও—কমপক্ষে ৯০ দিনের জন্য—এই হার এখনো চলতি বছরের শুরুর তুলনায় অনেক বেশি।
চীন ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যচুক্তির কাঠামো অনুযায়ী মুডিজ অ্যানালিটিকস হিসাব করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর শুল্কহার ২১ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তারপরও এই হার এখনো ১৯১০ সালের পর সর্বোচ্চ।
মুডিজ অ্যানালিটিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি সিএনএনকে বলেন, এ হারে শুল্ক থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার ১ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। শুধু তা–ই নয়, মোট দেশজ উৎপাদনও (জিডিপি) একই হারে কমতে পারে।
কমেছে মন্দার আশঙ্কা
মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ কিছুটা প্রশমিত হওয়ায় মন্দার আশঙ্কা কিছুটা কমেছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস। মুডিজ অ্যানালিটিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরে মন্দার আশঙ্কা ৪৫ শতাংশ, যদিও তা আগে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
জান্ডি আরও বলেন, ‘অর্থনীতির জন্য বছরটা কঠিন হবে, যদিও মন্দা এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে। তবে এটাও ঠিক, অর্থনীতি এখন যেকোনো নতুন ধাক্কায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’ অর্থাৎ বাণিজ্যযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ‘ভুল করার অবকাশ’ বা সহনশীলতা অনেক কমিয়ে ফেলেছে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জাস্টিন উলফার্স এক্সে লেখেন, ‘এটা ঠিক, আজকের দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি ও অর্থনীতির সম্ভাবনা আগের গত কয়েক দিন আগের তুলনায় অনেক ভালো দেখাচ্ছে।’ আবারও এটাও ঠিক, ‘বর্তমান পরিস্থিতি এখনো ট্রাম্পের অভিষেক দিবসের চেয়ে অনেক খারাপ।’ এই দ্রুত পরিবর্তন আর অস্থিরতাই ট্রাম্প ২.০ যুগের বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু অনিশ্চয়তা শেষ হচ্ছে না। ট্রাম্প নিজেও স্বীকার করেছেন, চীনের পণ্যে শুল্ক আবার বাড়তে পারে। ৯০ দিনের মধ্যে চুক্তি না হলে শুল্ক আবার ১৪৫ শতাংশে ফিরে যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘না, তবে অনেকটাই বেড়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত চুক্তি একটা হবেই।’
সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি, যদিও উত্তেজনা কিছুটা কমেছে। খাতভিত্তিক শুল্ক (যেমন কাঠ, সেমিকন্ডাক্টর, ওষুধ, খনিজ ইত্যাদি) আরোপের সম্ভাবনা এখনো আছে। সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ, যেমন বিমান ও যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর নিরাপত্তা তদন্ত ভবিষ্যতে আরও শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দেয় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
এসব অনিশ্চয়তার কারণে অর্থনীতিবিদ জো ব্রুসুয়েলাস আগামী এক বছরে মন্দার ঝুঁকি দেখছেন ৫৫ শতাংশ। ডয়েচে ব্যাংকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি কিছুটা নমনীয় হয়েছে। ফলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কিছুটা বেড়েছে। কমেছে বাণিজ্যযুদ্ধজনিত অনিশ্চয়তা।
অভূতপূর্ব অনিশ্চয়তা
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পারস্পরিক শুল্ক হ্রাস কিছুটা স্বস্তি আনলেও বাণিজ্য নীতিগত অনিশ্চয়তা সম্প্রতি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রে বলা হচ্ছে, ১৯৬০-এর দশকের পর এই অনিশ্চয়তা সর্বোচ্চ। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এটা ‘অচল করে দেওয়ার মতো অনিশ্চয়তা’।
বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, এটা সম্পূর্ণ কৃত্রিম বা তৈরি করা সংকট। ব্যবসা ও বিনিয়োগ মহলে এখনো আতঙ্ক রয়ে গেছে—পরবর্তী ধাক্কা কবে আসবে, তা নিয়ে। শুল্কনীতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বাজারে স্থায়ীভাবে আস্থার অভাব তৈরি করেছে। এখন সবার প্রশ্ন, এই অস্থিরতা কি সাময়িক, নাকি নতুন কোনো অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত সামনে আসছে?