কেন ফুটবলাররা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কথা বলেন
Published: 17th, May 2025 GMT
‘কী কথা তাহার সাথে? তার সাথে!’—জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত এক কবিতার লাইন। উদ্দেশ্য যা–ই হোক, দুজন মানুষের গোপন আলাপ জানার অদম্য আগ্রহ এখানে স্পষ্ট। গোপন কথা বা কানে কানে বলা কথা জানার যে তাড়না, সেটা মানুষের স্বভাবজাত। কিন্তু গোপন কথা তো শেষ পর্যন্ত গোপনই। দুজন মানুষ গোপনে কথা বলছেন মানে তাঁরা সচেতনভাবেই চান না, এই আলাপে অন্য কারও অংশগ্রহণ থাকুক।
এর ফলে কারও গোপন কথা থেকে দূরে থাকাই ভালো। এটাও ঠিক যে সব গোপন কথা আবার জানার সুযোগও থাকে না। যেমন ফুটবল মাঠে দুজন মানুষ যখন মুখে হাত দিয়ে কথা বলেন, তখন টেলিভিশনের পর্দার সামনে বসে সেটা শোনার সুযোগ থাকে না। খেলার মাঠে মুখে হাত দিয়ে বলা সেই কথা হতে পারে দুজন সতীর্থের মধ্যে, কোচ ও শিষ্যদের মধ্যে, দুই দলের খেলোয়াড়ের মধ্যে কিংবা খেলোয়াড় ও রেফারির মধ্যে।
মাঠে বলা প্রায় প্রতিটি কথাই আসলে গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য এভাবেও বলা যায় যে গুরুত্বপূর্ণ বলেই এই কথাগুলো গোপন। একজন কোচ যখন শিষ্যকে রণকৌশল বুঝিয়ে দেবেন, তিনি নিশ্চয়ই চাইবেন না, প্রতিপক্ষ সেটা শুনে যাক বা ঠোঁটের নড়াচড়া দেখে বুঝে যাক। অথবা রেফারির সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে তর্কের সময় একজন খেলোয়াড় চাইবেন না, সাংবাদিকেরা তাঁর কথা শুনে মুখরোচক কোনো খবর তৈরি করুক। এক সময় অবশ্য এসব নিয়ে কারও মাথাব্যথা ছিল না। তবে এখনকার ফুটবলে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। টেলিভিশনে যদিও সেসব আলাপ এমনিতেও শোনা সম্ভব নয়।
কিন্তু কেউ না কেউ যে ঠিকই বসে থাকেন লিপ রিড বা ঠোঁট পড়বেন বলে। ঠোঁট পড়ার এই কাজ যেমন সংবাদমাধ্যমগুলো করে থাকে, একইভাবে প্রতিপক্ষ দলও অনেক সময় এই কাজ করে। আর এ কারণেই কথা বলার সময় হাতটা মুখের সামনে রাখতেই হয়। যাতে মাঠে যাঁরা আছেন, তাঁরা তো বটেই, যাঁরা মাঠের বাইরে আছেন, তাঁরাও যেন ঠোঁট পড়ে কিছু বুঝতে না পারেন।
তবে শুধু গোপনীয়তা রক্ষার জন্য মাঠে কথা বলার সময় মুখে হাত রাখা হয়, তা নয়। এর পেছনে অনেক সময় ভিন্ন কারণও থাকে এবং সেটা বৈজ্ঞানিক। যেমন গ্যালারির শব্দের কারণে কথা বোঝা না গেলে মুখে হাত দিয়ে কথা বলেন খেলোয়াড়েরা। যাতে একজনের কথা ঠিকঠাক বাতাসে ভেসে অন্যজনের কাছে পৌঁছাতে পারে।
আরও পড়ুনআর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের কোচরা কে কত টাকা বেতন পান১৫ মে ২০২৫বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন প্রিমিয়ার লিগের বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে পিআর পরামর্শক হিসেবে কাজ করা ফিল হল। তাঁর মতে, কথা ঠিকঠাক বুঝতে পারার জন্যই মুখে হাত রেখে আলাপ করা হয়। তিনি উদাহরণ হিসেবে ২০১৭ সালে নাথান রেডমন্ডের সঙ্গে পেপ গার্দিওলার কথা বলার বিষয়টিও সামনে আনেন।
এক ফুটবলারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন খেলোয়াড় একবার আমাকে বলেছিলেন, “আমরা মুখ ঢেকে কথা বলি তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অনেক সময় যখন কাউকে কাছ থেকে কিছু বলি, তখন মুখের কাছে হাত রাখলে কণ্ঠস্বর জোরে শোনা যায়, অর্থাৎ শব্দটা বেশি স্পষ্ট হয়, যাতে তারা ঠিকভাবে শুনতে পারে।’”
ফুটবল–দুনিয়ায় লিপ রিডারদের গুরুত্ব বাড়ছে। মাঠে কিছু একটা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই কে কাকে কী বলেছেন, তা জানতে সবাই শুনতে চান লিপ রিডারদের ব্যাখ্যা।কোলাহলপূর্ণ মাঠে এই টোটকা কতটা কার্যকর, সেটা ব্যাখ্যা করে ফিল আরও যোগ করেন, ‘স্টেডিয়াম ও মাঠের চারপাশে প্রচণ্ড শব্দ থাকে, তাই কণ্ঠস্বর জোরে শোনানোর জন্য তাদের এই কাজ করতে হয়। একটি কোলাহলপূর্ণ স্টেডিয়ামে যখন আপনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলেন, তখন সেই শব্দ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে কথাগুলো অনেক অস্পষ্ট শোনায়। আর এ সময় আপনি যদি মুখের ওপর হাত রেখে সেই হাতটা যার সঙ্গে কথা বলছেন তাঁর দিকে নির্দেশ করেন, তাহলে কথা অনেক বেশি স্পষ্ট শোনা যায়।’
এটি অবশ্য মুদ্রার একটি পিঠ। অন্য পিঠে কাইল ওয়াকার বলেন ভিন্ন কথা। সাবেক ম্যানচেস্টার অধিনায়ক ওয়াকার নিজের যুক্তি তুলে ধরেন এভাবে, ‘এটা করা হয় (মুখে হাত দিয়ে কথা বলা) যেন ক্যামেরায় কিছু ধরা না পড়ে। তুমি হয়তো কাউকে গালমন্দ করছ, অথবা স্রেফ মজা-মশকরা করছ। হতে পারে আগের সপ্তাহে রাতের কোনো আয়োজনে তুমি তাকে (অন্য খেলোয়াড়কে) দেখেছ, আর এখন স্রেফ একটু ঠাট্টা-তামাশা করছ। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।’
আরও পড়ুন২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজনে সৌদি আরবের প্রতিদ্বন্দ্বী নেই কেন১২ ডিসেম্বর ২০২৪ঠোঁট পড়ে সব জেনে যাওয়ার বিষয়ে কাইল ওয়াকার বলেন, ‘এখন আমরা যে পৃথিবীতে বাস করি, সেখানে তো ঠোঁট পড়ার লোকও আছে। দুনিয়াটা কী হয়ে যাচ্ছে বলুন তো?’ শেষের লাইনটা ওয়াকার আক্ষেপ করেই বলেছেন। এই আক্ষেপের অবশ্য কারণও আছে। ২০২৩–২৪ মৌসুমে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার সিটির ৩-১ গোলে জয় পাওয়ার ম্যাচে এমন একটি ঠোঁট পড়ার ঘটনায় ব্রিবতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যান তিনি। সেদিন ম্যাচের একপর্যায়ে ব্রেন্টফোর্ডের ফরোয়ার্ড নিল মাউপের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান ওয়াকার।
ম্যাচ শেষে প্রফেশনাল লিপ-রিডার জেরেমি ফ্রিম্যান মেইল অনলাইনকে জানান, ওয়াকার ম্যাচ চলাকালে মাউপেকে হুমকি দিয়ে বলেন যে তিনি তাঁকে ‘এক ঘুষিতে ফেলে দেবেন।’ এ ঘটনা নিয়ে সে সময় বেশ আলোচনা হয়েছিল। এর মধ্যে অবশ্য অন্য এক প্রশ্নও সামনে এসেছে। লিপ রিডিংয়ের কারণে ফুটবল মাঠে কথোপকথনের গোপনীয়তা লঙ্ঘন হচ্ছে কি না এবং এই কাজ নৈতিকভাবে সঠিক কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।
নানামুখী আলাপের মধ্যেও অবশ্য থেমে নেই লিপ রিডিং। ফুটবল–দুনিয়ায় লিপ রিডারদের গুরুত্বও বাড়ছে। মাঠে কিছু একটা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই কে কাকে কী বলেছেন, তা জানতে সবাই শুনতে চান লিপ রিডারদের ব্যাখ্যা।
অন্যদিকে ভাইরাল হওয়া থেকে বা বিপদে পড়া থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফুটবলাররা, সে জন্যই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে এভাবে কথা বলা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য এই ক জ ফ টবল ক সময় অবশ য
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে