ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোড এখন ‘শহীদ ফারহান ফাইয়াজ’ সড়ক
Published: 17th, May 2025 GMT
রাজধানীতে ধানমন্ডির পুরাতন ২৭ নম্বর সড়ককে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ‘ফারহান ফাইয়াজ’ এর নামে নামকরণ করে সড়কের ফলক উন্মোচন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
শনিবার (১৭ মে) নামফলকটি উদ্বোধন করেন ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া।
এ সময় শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা আলহাজ্ব শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
শ্রীপুরে স্পিড ব্রেকারের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ
বাবাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মেয়ে নিহত
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ধানমন্ডির পুরাতন ২৭ নম্বর রোডে রাপা প্লাজা এবং জেনেটিক প্লাজার মাঝামাঝি স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া (ফারহান ফাইয়াজ) বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
ফলক উন্মোচন শেষে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শাহজাহান বলেন, “ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের মেধাবী ছাত্র শহীদ ফারহান ফাইয়াজ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এখানে শহীদ হন। বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেসব ছাত্র-জনতা শাহাদত বরণ করেছেন ফারহান ফাইয়াজ তাদের মধ্যে অন্যতম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ধানমন্ডির পুরাতন ২৭ নম্বর সড়কটির নাম পরিবর্তন করে আজ শহীদ ফারহান ফাইয়াজের নামে নামকৃত ফলক উন্মোচন করা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদরা বৈষম্যবিরোধী একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার যে মহৎ উদ্দেশ্যে জীবন দিয়েছেন, সে মহৎ উদ্দেশ্য যতদিন না বাস্তবায়ন হয় ততদিন আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা আলহাজ্ব শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একমাত্র ছেলে শহীদ হওয়ায় আমার যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। ফাইয়াজের নামে এই সড়কটি নামকরণ করায় আমি অন্তর্বর্তী সরকার ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে যারা ভূমিকা রেখেছেন পর্যায়ক্রমে তাদের সবাইকে স্মরণীয় করে রাখা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন জ ল ই গণঅভ য ত থ ন ধ নমন ড র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০৪ বছর অতিক্রম করেছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিপাদ্য ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। কাঙ্ক্ষিত সমাজের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্যই এই প্রতিপাদ্যে ফুটে উঠেছে। জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটি এমন সময়ে উদযাপিত হচ্ছে, যার ঠিক এক বছর আগে জুলাই আন্দোলনের ভিন্নমাত্রার সূচনা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সারাদেশের শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, আপামর জনসাধারণ অংশগ্রহণ করে। সেই আন্দোলনের পথ ধরেই অর্জিত হয় ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। কোনো সরকারের এমন পতন মানুষ আগে দেখেনি, যার নেতৃত্বে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বস্তুত চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানই নয়, ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে।
এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই, দেশের যোগ্য শিক্ষার্থীরাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। এই শিক্ষার্থীরাই বর্তমানে যেমন দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন, তেমনি ভবিষ্যতেও এ ধারা নিশ্চয় অব্যাহত থাকবে। এই শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের স্বপ্ন দেখছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য অংশই গ্রাম থেকে আসা। সবচেয়ে বড় বিষয়, নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে এখানে সবাই পড়ার সুযোগ পান বলে গ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীর পক্ষেও পড়াশোনা খুব কঠিন হয় না। আবাসিক হলেও অনুরূপ প্রায় বিনামূল্যে থাকার সুযোগ মেলে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হওয়ার পর এখানকার পরিবেশই শিক্ষার্থীদের বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন স্বপ্ন দেখায়, তেমনি অনেকের স্বপ্নভঙ্গের কারণও হতে পারে। প্রথমত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, অন্য যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পর সুযোগ যেমন অনেককে ‘এলিট’ বানায়, তেমনি তাদের প্রতি এক ধরনের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও তৈরি হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে এক ধরনের চাপে ফেলে। সে জন্য ভর্তির পর থেকেই দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনেকের মধ্যে চাকরিকেন্দ্রিক উদ্বেগ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলোতে তাই যতটা একাডেমিক পড়াশোনার চর্চা হয়, তার চেয়ে বেশি দেখা যায় চাকরিকেন্দ্রিক ব্যস্ততা। যার কারণে স্ববিষয়ে কতজন বিশেষজ্ঞ বা স্কলার হয়ে ওঠেন, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। অথচ কিছু শিক্ষার্থী থাকতেই হবে, যারা স্বীয় বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবেন, গবেষণা করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন জ্ঞান সৃষ্টির দায়িত্ব পালন করবেন।
দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেছেন, আমাদের রাজনীতি হবে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। অর্থাৎ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ রক্ষা ও পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিতে রাজনীতির কথা বলেছেন। ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি কীভাবে লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে কলুষিত করেছিল। কীভাবে হলগুলো ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন দখল করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করেছিল। গণরুম ও গেস্টরুমের নামে কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল বানিয়েছিল। বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রাতভর নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।
স্বস্তির বিষয়, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাঙ্গনে আবাসিক হলগুলো প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং নিয়মানুযায়ী শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দিচ্ছে। শঙ্কা জাগে, অন্তর্বর্তী সরকারের পর রাজনৈতিক সরকার এলে হলগুলো কি আগের বীভৎসতায় ফিরে যাবে? যে দল ক্ষমতায় আসবে সে দলের ছাত্র সংগঠন এভাবে হল দখল করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করবে? আমাদের প্রত্যাশা, সেই পরিবেশ যাতে ফিরে না আসে। সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের আগেই অঙ্গীকার করতে হবে– তারা শিক্ষার্থীদের লাঠিয়াল বাহিনী বানাবে না।
শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু রাজনীতি ফিরিয়ে আনার অন্যতম মাধ্যম ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনের কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে সফল হলে তা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও উদাহরণ তৈরি হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে উপাচার্য যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানে গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রশংসনীয় কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার খরা কাটিয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস। বিশ্ববিদ্যালয়টি আমাদের আলমা মাতের– এর চেয়ে গর্বের বিষয় আর কী হতে পারে!
মাহফুজুর রহমান মানিক:
জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.manik@gmail.com