উত্তরে বিএনপি নেতাদের পকেটে, দক্ষিণে অনিশ্চিত চার হাট
Published: 28th, May 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র ১০ দিন বাকি। তবে এখনও রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটের ইজারা কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার সাতটি হাটের ইজারার দর উন্মুক্ত হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। গত ১৬ বছরের ধারাবাহিকতায় এবার পশুর হাটের ইজারায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেউ অংশ নেননি। সর্বোচ্চ দর দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরাই হাটের ইজারা পাচ্ছেন।
এদিকে ১৩ দিন ধরে বিএনপি নেতা ইশরাককে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন তাঁর সমর্থকরা। এতে দক্ষিণের চারটি পশুর হাটের ইজারা কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ বছর ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ১১টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর জন্য গত ২১ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসসিসি। আর ডিএনসিসি তিন দফায় ১২টি হাটের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়। এ ছাড়াও নতুন আরও দুইটি পশুর হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে ডিএসসিসির আফতাবনগর ও মেরাদিয়ার পশুর হাট এবং ডিএনসিসির বাড্ডা ইস্টার্ন হাউস ও বনরূপা আবাসিক এলাকার হাট জনবহুল স্থানে হওয়ায় আদালত বাতিল করে দিয়েছেন। এ ছাড়া দুই সিটিতে মিরপুর গাবতলী ও ডেমরা সারুলিয়ায় দুইটি স্থায়ী পশুর হাট আছে।
ডিএনসিসি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৫ মে ৮টি পশুর হাটের প্রথম পর্যায়ের উন্মুক্ত ইজারা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে গত শনিবার যাচাই-বাছাই শেষে খিলক্ষেত মস্তুল চেকপোস্ট-সংলগ্ন খালি জায়গায় সুরমি ইন্টারপ্রাইজের নামে মজিবুল্লা খন্দকার হাটের ইজারা নিয়েছেন। তবে হাটটি পরিচালনা করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আকতার হোসাইন। ঢাকা পলিটেকনিকের খেলার মাঠের হাটটি ইজারা পুনির্বিবেচনা করছে করপোরেশন। এ হাটটিতে সর্বোচ্চ ২ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জায়ান এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী যুবদল নেতা মনিরুজ্জামান পাচ্ছেন বলে কর্পোরেশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। বাকি ছয়টি হাট দ্বিতীয় পর্যায়ের ইজারার জন্য পুনর্বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
গতকাল ডিএনসিসির এই ছয়টি হাটসহ মোট সাত হাটের ইজারার দর উন্মুক্ত হয়েছে। মিরপুর কালশী বালুর মাঠের খালি জায়গা সংলগ্ন হাটটি পেয়েছেন ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান। সরকারি মূল্যের চেয়ে ৫০ লাখ টাকা কমে ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন তিনি। সমকালকে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘হাটের জায়গাটি অত্যন্ত কম।’
ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে উত্তরা রানাভোলা সুইচগেট পর্যন্ত হাটটির সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৯৫ লাখ টাকা। মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আতিকুর রহমান এ দর দিয়েছেন। মিরপুর ইন্টার্ন হাউজিং হাটটি দ্বিতীয় পর্যায়ে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা সর্বোচ্চ দরে পেয়েছেন মের্সাস সোহাগ এন্টারপ্রাইজের রতন মিয়া। রতন মিয়া সমকালকে বলেন, হাটের সঙ্গে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা যুক্ত আছেন।
বছিলার পশুর হাটটি সর্বোচ্চ ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা দর দিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক জালাল মৃধা। ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের রহমান নগর আবাসিক এলাকার হাটটি সর্বোচ্চ দর উঠেছে ১৩ লাখ টাকা। আরহাম এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী বিএনপি নেতা শাহ মিরাজ এ দর দিয়েছেন। ভাটারা সুতিভোলা খাল সংলগ্ন হাটটিতে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা দর দিয়েছেন।
উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটটি পে-অর্ডার সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে গেছে। আজ বুধবার মিরপুর গাবতলী স্থায়ী হাট ও খিলক্ষেত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের খালি জায়গার হাটটির ইজারার দর উন্মুক্ত হবে। এ ছাড়াও মেরুলবাড্ডা কাঁচাবাজার ও বালুর মাঠের পাশে পূ্র্ব হাজীপাড়ার খালি জায়গার এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আরও দুইটি হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্পোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ।
ডিএনসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা ফারজানা খানম সমকালকে বলেন, মঙ্গলবার সাতটি হাটের ইজারা উন্মুক্ত হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যেই এসব হাটের কার্যাদেশ দেওয়া হবে।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, তাদের ৯টি হাটের মধ্যে পাঁচটির ইজারাদার চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি চারটির জন্য দুই দফায় দরপত্র আহ্বান করেও ইজারাদার চূড়ান্ত করা যায়নি। সব শেষ তৃতীয় দফার দরপত্র জমার সময়সীমাও গত বৃহস্পতিবার পার হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক রব ন র হ ট দর দ য় ছ ন র উন ম ক ত র ইজ র র র রহম ন ড এসস স ড এনস স ব এনপ র র জন য ত হয় ছ ন ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় কিলোমিটারে জ্বলে না বাতি চুরি হয়েছে সেতুর রেলিং
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই এলাকায় প্রায় ছয় কিলোমিটারজুড়ে এক বছর ধরে জ্বলছে না অধিকাংশ সড়কবাতি। ফলে কচমচ থেকে নবীনগরের নিরিবিলি পর্যন্ত সড়কের বড় অংশ অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকছে। ইসলামপুর-নয়ারহাট বংশী নদীর ওপর নতুনটিসহ চার সেতু ও ফুট ওভারব্রিজে জ্বলছে না বাতি। ফলে ব্যস্ততম মহাসড়কসহ শিল্পসমৃদ্ধ এলাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে এসব সড়কবাতি বন্ধ থাকায় বৈদ্যুতিক তার, ফুট ওভারব্রিজের টিন ও সেতুর এসএস পাইপ (রেলিং) চুরি হয়ে গেছে। এখন শুধু তারবিহীন সড়কবাতির ল্যাম্পপোস্ট দাঁড়িয়ে রয়েছে। স্থানীয় কারখানার শ্রমিক সাহিদা আক্তার, কল্পনা রানীসহ কয়েকজনের ভাষ্য, ইসলামপুর কর্মস্থল থেকে রাত ১০টায় ছুটির পর মহাসড়ক ঘেঁষে হেঁটে বাসায় ফিরতে হয়। বাতি বন্ধ থাকায় তাদের চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। কখন দুর্ঘটনার শিকার হন, সে ভয়ে থাকেন।
তার চুরি হয়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। সড়ক বিভাগ থেকে জানা গেছে, দুই বছর আগে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগরের নিরিবিলি বাসস্ট্যান্ড থেকে ধামরাইয়ের কচমচ পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও চার লেন আবার কোথাও ছয় লেন করা হয়েছে। এ সড়কের ইসলামপুর-নয়ারহাট বংশী নদীর ওপর একটি নতুনসহ পাশে চারটি সেতু রয়েছে।
এ সেতু থেকে কচমচ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সার্ভিস লেন রয়েছে। এখানে মধ্যবর্তী স্থানে সড়ক বিভাজক দেওয়া হয়েছে দুটি করে। প্রায় দেড় বছর আগে মহাসড়কের প্রতিটি বিভাজকে ও ফুট ওভারব্রিজে বসানো হয় সড়কবাতি। বুধবার রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, কচমচ থেকে নিরিবিলি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটারে তারবিহীন সড়কবাতি থাকলেও তা জ্বলছে না। স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্যে ও সরেজমিনে চার শতাধিক ল্যাম্পপোস্ট অকেজো।
রাতে ইসলামপুর-নয়ারহাট বংশী নদীর ওপর নতুন সেতুসহ ঢুলিভিটা, ধামরাই থানা, নয়ারহাট ও নিরিবিলি বাসস্ট্যান্ডসহ চারটি ফুট ওভারব্রিজ পার হন পথচারীরা। নয়ারহাট সেতুর অনেক অংশের এসএস পাইপের রেলিংও কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। থানা বাসস্ট্যান্ডে পরিবহন কাউন্টার ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, প্রায় এক বছর ধরে সড়কবাতিগুলো বন্ধ থাকায় রাতে পথচারীদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আলোস্বল্পতার কারণে যেকোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হযরত আলী। তিনি বলেন, তাদের ছেলেমেয়েরা প্রায়ই ইসলামপুর-নয়ারহাট বংশী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর ওপর দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। রেলিং চুরি হওয়ায় শিশু শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় রেলিংয়ের ফাঁকা স্থান দিয়ে নদীতে পড়ে যেতে পারে। দ্রুত এগুলো সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সড়কবাতি বন্ধ থাকার সুযোগে ও ঈদ সামনে রেখে দুর্বৃত্তরা মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ যেকোনো ধরনের অপরাধ করে সহজেই পালিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ধামরাই শাখার সভাপতি মো. নাহিদ মিয়া। তিনি বলেন, যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, সড়কবাতি সচল থাকলে মহাসড়কে তেমন অপরাধ করার সাহস পাবে না দুর্বৃত্তরা। অপরাধপ্রবণতা রোধে মহাসড়কের ধামরাই অংশে প্রতি রাতে সাতটি স্থানে পুলিশি চেকপোস্ট বসানো হয়।
বিদ্যুৎ সংযোগের তার দুর্বৃত্তরা চুরি করে নেওয়ায় বাতিগুলো বন্ধ রয়েছে জানিয়ে মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আলম বলেন, জিডি করা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এগুলো সচলের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।