বিগত বছরগুলোতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোরবানির পশুর হাটগুলো ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের কবজায়। এবার সব হাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপির নেতারা। এর মধ্যে নিয়ম ভেঙে সরকারি দরের চেয়ে অর্ধেক দামে বিএনপির নেতারা দুটি হাটের ইজারা বাগিয়ে নিয়েছেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় ১১টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত ছিল। এর মধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশে আফতাবনগর ইস্টার্ন হাউজিং ও মেরাদিয়া বাজারের পূর্ব পাশের খালি জায়গায় হাট না বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যাশিত দর না পাওয়ায় শ্যামপুর–কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ডের খালি জায়গায় হাট বাতিল করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি। এই তিন হাট বাদে এবার আটটি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসবে।

আরও পড়ুনঢাকা উত্তরে গরুর ৮ হাটের ইজারাদারই বিএনপি নেতা৩ ঘণ্টা আগে

ঢাকা দক্ষিণ সিটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আটটি হাটের সব কটির ইজারা বিএনপির নেতারা পেয়েছেন। তবে ইজারা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির পদস্থ নেতাদের মাধ্যমে দরপত্র জমা না দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে বিএনপি–সমর্থিত ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দরপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। পরে স্থানীয় বিএনপি ও দলটির অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা মিলেমিশে হাট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

যেমন উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গার ইজারা কাগজে–কলমে বিএনপি–সমর্থিত ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান পেয়েছেন। তবে এর নেপথ্যে রয়েছেন শাহজাহানপুর থানা বিএনপি ও দলটির অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

গত বছর এ হাটের ইজারা পেয়েছিলেন সেখানকার আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর হামিদুল হক।

এর আগে সাত বছর ধরে শাহজাহানপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল লতিফের নিয়ন্ত্রণে ছিল এ হাট।

ডেমরার আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পাশের খালি জায়গায় স্থাপিত অস্থায়ী হাটের ইজারা পেয়েছেন জয়নাল আবেদীন রতন। তিনি ডেমরা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি। গত বছর এ হাটের ইজারা পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এস এম নেওয়াজ সোহাগ।

পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পশ্চিম পাশে নদীর পাড়ে খালি জায়গায় এবার পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মুহাম্মদ আলী। নেপথ্যে রয়েছেন ওই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের বড় ছেলে ও স্থানীয় বিএনপির নেতা–কর্মীরা।

গত বছর এ হাটের ইজারা পেয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মইন উদ্দিন চিশতী।

দনিয়া ক্লাবের পূর্ব পাশে ও ছনটেক মহিলা মাদ্রাসার পশ্চিমের খালি জায়গায় পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতা তারিকুল ইসলাম তারেক। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক নেতা নবীউল্লাহ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক কাউন্সিলর জুম্মন মিয়া মিলেমিশে হাটটি নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নেতা কামরুজ্জামান গত বছর এ হাটের ইজারাদার ছিলেন।

লালবাগের পোস্তা এলাকায় রহমতগঞ্জ ক্লাবের খালি জায়গায় এবার কোরবানির পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি টিপু সুলতান। তিনি চকবাজার থানা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি।

গত বছর হাটটির ইজারা পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিম।

হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গায় স্থাপিত অস্থায়ী হাটটির ইজারা পেয়েছেন মেসার্স সাফি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নাফিজ কবির। কাগজে–কলমে নাম তাঁর হলেও বাস্তবে হাটটির কর্তৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীরা।

অর্ধেকেরও কম দরে দুটি হাট

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ইতিহাসে এই প্রথম সরকারি মূল্যের চেয়ে অনেক কম দরে দুটি পশুর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে।

দুটি হাটের মধ্যে একটি হলো রাজধানীর নারিন্দায় সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল। অস্থায়ী এ হাটের সরকারি মূল্য ছিল ৪ কোটি ৬৪ লাখ ১৫ হাজার ২৮০ টাকা। কিন্তু হাটটি ২ কোটি ২৫ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। হাটটির ইজারা নিয়েছেন সৈয়দ মাসুদ রেজা। তিনি প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার গোপীবাগের বাসা দেখভাল করেন বলে স্থানীয় বিএনপির নেতারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।

সৈয়দ মাসুদ রেজা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সব নিয়মকানুন মেনে হাটের ইজারা নিয়েছেন।  রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সরকারি মূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে ইজারা নিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গার সরকারি মূল্য ছিল ৩ কোটি ৭৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা। অথচ এ হাট ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। এ হাটের ইজারা পেয়েছেন মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিএনপি–সমর্থিত সাবেক একজন কাউন্সিলর।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক মো.

শাহজাহান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি মূল্যের চেয়ে কম দর পাওয়া দুটি হাটের অনুমোদন পেতে তাঁরা আইন অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে তাঁদের কার্যাদেশ দেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন য় ব এনপ র ব এনপ র ন ত র শ হজ হ ন র জন ত প রথম সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিতে গলে পড়ছে ভবনের ইট

টোকা দিলে খসে পড়ছে পলেস্তারা। কাঁচা ইটের গাঁথুনি দেওয়ায় বৃষ্টির পানিতে গলে পড়ছে। দেয়ালের উচ্চতা ১০ ফুট দেওয়ার কথা; কিন্তু দেওয়া হয়েছে সাড়ে ৯ ফুট। অনিয়ম ধরিয়ে দিলেই অশালীন আচরণ করেন ঠিকাদার আবু জাফর তালুকদার। 
অনিয়মের এ অভিযোগ করেন পটুয়াখালীর বাউফলের দাসপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধা ও পৌরশহরের শেরেবাংলা সড়কের মৃত আব্দুল মন্নান সিকদারের ছেলে মো. রিয়াজ সর্দার। বীর নিবাসের সুফলভোগীদের পক্ষে গত ২৪ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এ অভিযোগ করেন তারা।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও সরেজমিন নির্মাণাধীন বীর নিবাস পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ পান। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন ব্যয়ে স্বচ্ছতার অভাব, নকশা পরিবর্তন ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার। এরপর ২৩ এপ্রিল অনিয়মের বিষয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঠিকাদারকে জবাব দিতে বলা হয়। ঠিকাদার নোটিশের জবাব না দিয়ে কাজ বন্ধ করে ফেলে রেখেছেন। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে। 
তালুকদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু জাফর বলেন, দরপত্র অনুযায়ী কাজ করছি। এরপরও অভিযোগ করা হচ্ছে। নোটিশের জবাব কেন দেননি– প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। 
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের থাকার জন্য ২ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৫টি বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাজটি পায় মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজ। কাজ শুরু হয় ২০২৫ সালের ২৫ মার্চ। মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ৩০ জুন। কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪৫ ভাগ। 
দরপত্র অনুযায়ী বীর নিবাসটি দৈর্ঘে ৩২ ফুট এবং প্রস্থে ২৪ ফুট হওয়ার কথা। ৪ ফুট ১২ ইঞ্চি ভিটির ওপর ১০ ফুট উঁচু করে ইটের দেয়ালের ওপর রড দিয়ে ছাদ ঢালাই দেওয়া হবে। প্রতিটি ঘরের জন্য ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দ পেয়ে ঠিকাদার আবু জাফর প্রথমেই পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবদুল মান্নান সর্দার ও দাসপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধার বাড়িতে কাজ শুরু করেন। এর আগে মালপত্র পরিবহন বাবদ ১০ হাজার টাকা করে নেন। টাকা দেওয়ার পর তাদের পুরোনো টিনের ঘর ভেঙে ইটের গাঁথুনি দেওয়া শুরু করেন। ছয় বস্তা বালুতে এক বস্তা সিমেন্ট দেন। ব্যবহার করেন দুই নম্বর ইট। বালুর মানও ছিল খুবই খারাপ। এভাবে কাজ করায় গাঁথুনি ঠিকমতো হয়নি। বৃষ্টি হলেও ইট গলে হলুদ পানি বের হচ্ছে। অনিয়মে বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিয়াজ সর্দারের সঙ্গে ঠিকাদার অশালীন আচরণ করেন। একপর্যায়ে কাজ বন্ধেরও হুমকি দেন।
মো. রিয়াজ জানান, কাজ শুরুর আগে ঠিকাদার ট্রলি ভাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা নেন। এরপরও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, সরকার ঘর দিয়েছে। কিন্তু সেই ঘরে শান্তিতে থাকতে পারব কিনা জানি না। সব মালপত্র নিম্নমানের। জানানোর পর ঠিকাদার আজেবাজে কথা কয়। কাজ ফেলে চলে যাবে বলে হুমকি দেয়।
দাসপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধা বলেন, তাদের জন্য বরাদ্দ ওই ঘরের নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট, বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। বুঝতে পেরে তিনবার ইট পরিবর্তন করেও ঠিক করতে পারিনি। দেয়াল থেকে ভিটির উচ্চতা কম। ঢালাইয়ের রড কত মিলি দেওয়া হয়েছে, ফোনে ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসা করলে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনার পাওয়ার দেহি বাড়ছে, বেশি ট্যাং ট্যাং করেন’– এই বলে ফোন কেটে দেন। 
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মস্তফা মৃদুল মুরাদ জানান, কাজের মান নিম্নমানের হওয়ায় তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। 
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের পটুয়াখালী জেলার দায়িত্বে থাকা উপপ্রকৌশলী আবদুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ঠিকাদারকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কার্যাদেশ নওগাঁয়, কাজ হচ্ছে রাজশাহীতে
  • কার্যাদেশ নওগাঁর, কাজ হচ্ছে রাজশাহীতে
  • ৬ কোটি টাকার সেতুতে উঠতে হয় মই বেয়ে
  • বৃষ্টিতে গলে পড়ছে ভবনের ইট
  • ঢাকা উত্তরে গরুর ৮ হাটের ইজারাদারই বিএনপি নেতা
  • কথা ছিল ক্যাবিনেটে বসে ঘোষণা করব প্রেমের দরপত্র
  • ঢাকা উত্তরে পশুর হাট শুরুর বাকি ৩ দিন, চূড়ান্ত হয়েছে মাত্র দুটি
  • পশুর হাট শুরুর বাকি ৪ দিন, চূড়ান্ত হয়েছে মাত্র দুটি
  • ১০০ কম্পিউটার চালু হচ্ছে না