রাজধানীতে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ চলছে
Published: 7th, June 2025 GMT
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সৃষ্ট বর্জ্য দ্রুততম সময়ে অপসারণে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেমেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
শনিবার (৭ জুন) দুপুর ১২টার দিকে বিভিন্ন অলিগলি, রাজপথ ও পশুর হাটজুড়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যাক্রম শুরু করেছে তারা।
উভয় সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, এ বছর রাজধানীতে ৫০ হাজার টনের বেশি বর্জ্য সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে নগরবাসীকে পরিচ্ছন্ন শহর উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে প্রস্তুত রয়েছেন তারা।
আরো পড়ুন:
দ্রুত বর্জ্য অপসারণে সেবা দেবে ডিএসসিসি: প্রশাসক
ঢাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রমে গতি এসেছে
ডিএসসিসি:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো.
ডিএসসিসি এলাকায় এবার প্রায় ৩০ হাজার টন কোরবানির বর্জ্য উৎপন্ন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিশাল কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত হয়েছেন ১০ হাজার ২৬৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তাদের মধ্যে ৫,৯৫৩ জন নিজস্ব, ৪,৭০০ জন বেসরকারি এবং পশুর হাট-ভিত্তিক অতিরিক্ত ১,৮০০ জন কর্মী।
পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপালির মধ্যে আছে- ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ২০০টি মিনি ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ৩৯টি কনটেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডার, ৫টি টায়ার ডোজার, ৪টি এক্সক্যাভেটর, ২টি ফর্ক লিফট, ২টি স্কিড লোডার, ৯টি পানির গাড়ি, ২টি বুলডোজার।
পরিচ্ছন্নতার পর যন্ত্রপাতিগুলো জীবাণু মুক্ত করতে ব্যবহার করা হবে ২২২ গ্যালন স্যাভলন ও ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার।
নাগরিকদের অভিযোগ জানাতে চালু রয়েছে বিশেষ হটলাইন: ০১৭০৯-৯০০৮৮৮, ০২২২-৩৩৮৬০১৪।
ডিএনসিসি:
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “২০ হাজার টন বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত আমরা। তিন ধাপে পরিচালিত হচ্ছে পুরো কার্যক্রম।”
তিন ধাপের পরিকল্পনা:
হাট ও বাসা থেকে বর্জ্য এসটিএস-এ নেওয়া হবে। এসটিএস থেকে আমিনবাজার ও মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে স্থানান্তর। সার্বক্ষণিক মনিটরিং টিমের মাধ্যমে তদারকি।
মাঠে রয়েছে ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ২২৪টি ডাম্প ট্রাক ৩৮১টি পিকআপ, ২৪টি পে-লোডার, পানির গাড়ি ও বেসরকারি পিকআপ, বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় ১২ লাখ ৫০ হাজার পলিব্যাগ, ২,৫০০ বস্তা ব্লিচিং পাউডার ও ৪ হাজার ক্যান স্যাভলন।
ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এ বি এম সামসুল আলম বলেন, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আমরা জরুরি নাগরিক সেবা হিসেবে দেখছি। প্রথম ১০ ঘণ্টার মধ্যেই সর্বোচ্চ অপসারণ নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।”
ঢাকা/এএএম/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এসস স ড এনস স ড এসস স
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদেও গাজায় থেমে নেই ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ
ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদেও ফিলিস্তিনের গাজায় থেমে নেই ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ। ঈদের দিন সকাল থেকে দুই দিনে শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রাণ নিতে যাওয়া ক্ষুধার্ত মানুষও রয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো চাঁদ দেখা সাপেক্ষে শুক্রবার কোরবানির ঈদ উদ্যাপিত হয় অবরুদ্ধ গাজায়। এ নিয়ে টানা চতুর্থ ঈদ ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে কাটিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
হাসপাতাল সূত্রগুলো জানায়, ঈদের দিন ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় ৪২ জন নিহত হন। এর মধ্যে উত্তর গাজার জাবালিয়ায় এক হামলায় নিহত হয়েছেন ১১ জন। এ ছাড়া গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে সাত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান।
ঈদের পরদিন শনিবার সকাল থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৬৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা নগরীর সাবরা এলাকায় এক হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৬ জন। গাজার জরুরি পরিষেবা বিভাগ ‘সিভিল ডিফেন্স’ এ তথ্য দিয়েছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সাড়ে ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
জরুরি পরিষেবা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, সাবরা এলাকায় এক হামলায় নিহত ১৬ জনের মধ্যে ছয় শিশু রয়েছে। এ ঘটনায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় ৮৫ জন বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ওই ভবনে আঘাত হানলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানান জরুরি পরিষেবা বিভাগের মুখপাত্র। এ ঘটনাকে ‘পুরোপুরি হত্যাযজ্ঞ’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একেবারে সীমিত সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে জরুরি পরিষেবা বিভাগ।
ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র যেন ‘মৃত্যুফাঁদ’
এদিকে শনিবার সকালে ত্রাণের জন্য জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারও গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। রাফাহ এলাকার একটি ত্রাণকেন্দ্রের কাছে সংঘটিত এ ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছেন। নাসের হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আগের দিনও ওই এলাকায় ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে সাত ফিলিস্তিনি নিহত হন।
অবশ্য জরুরি পরিষেবা বিভাগের বরাত দিয়ে গতকাল সকালে ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ছয়জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি পরিচালিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ)’ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে আল-আলম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মে মাসের শেষ দিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে তিনটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করে বিতর্কিত জিএইচএফ। এর পর থেকে ত্রাণকেন্দ্রের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আল-আলম এলাকায় ত্রাণের আশায় নিয়মিত জড়ো হন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা।
সকালে ঘটনাস্থলে থাকা সামির আবু হাদিদ এএফপিকে বলেন, কয়েক হাজার মানুষ সেখানকার একটি মোড়ে জড়ো হন। যখনই তাঁরা ত্রাণকেন্দ্রের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন, তখন সাঁজোয়া যান থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা।
আল-আলম ত্রাণকেন্দ্রের কাছে গুলির বিষয়ে জানতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এএফপি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত ২৭ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল পরিচালিত ফাউন্ডেশনটির ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে গুলিতে এ নিয়ে ১১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রাণহানির কারণে কয়েক দফা ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
আরও পড়ুনগাজায় ঈদ কেবলই স্মৃতি০৬ জুন ২০২৫ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের পরিচালক আমজাদ শাবা আল-জাজিরাকে বলেন, সম্প্রতি গঠিত জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলো এক ধরনের ‘ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।
আমজাদ শাবা বলেন, উত্তর গাজার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করে দক্ষিণে নিয়ে আসার ইসরায়েলি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে এ বিতর্কিত ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ জন্য উত্তর গাজায় কোনো ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়নি, যাতে সেখানকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে ত্রাণের জন্য দক্ষিণে আসেন।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দাতব্য সংস্থাগুলোর পরিবর্তে জিএইচএফের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। এদিকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজার শতভাগ মানুষ মারাত্মক পর্যায়ের খাদ্য অনিরাপত্তার মুখে রয়েছেন। চরম অপুষ্টির কারণে ৭০ হাজার শিশুর জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন।
এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস এলাকা থেকে একজন থাই জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তাঁকে গাজায় ধরে নিয়ে যায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা।
আরও পড়ুনগাজায় হামাসবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেওয়ার কথা স্বীকার করলেন নেতানিয়াহু০৬ জুন ২০২৫