ঢাকায় এশিয়া কাপ বিষয়ক বৈঠকে আসতেও নারাজ ভারত
Published: 10th, July 2025 GMT
আগস্টে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের। আইসিসির পূর্ব নির্ধারিত সূচিতে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-২০ ম্যাচ ছিল। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) নিরাপত্তা শঙ্কার কথা বলে ওই সিরিজ এক বছর পিছিয়ে দিয়েছে।
এমনকি এশিয়া কাপ বিষয়ক বৈঠক করতেও বিসিসিআই-এর কর্মকর্তারা ঢাকা আসতে রাজি নন। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা দিয়েছে এই খবর। সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের এশিয়া কাপের সূচি চূড়ান্ত করতে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বৈঠক রাখা হয়েছে বাংলাদেশে।
কিন্তু বাংলাদেশে এসে ভারত ওই সভায় অংশ নিতে চায় না। এমনকি এসিসি’কে বিসিসিআই জানিয়ে দিয়েছে যে, সভা যদি ঢাকা থেকে সরানো না হয় এশিয়া কাপেই খেলবে না তারা। বাংলাদেশ থেকে বৈঠক সরানোর কারণ হিসেবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকাকে বিসিসিআই-এর সূত্র বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে সেখানে আমাদের যাওয়া ঠিক হবে না। আমরা সভার স্থান বদলাতে এরইমধ্যে এসিসি-কে জানিয়ে দিয়েছি।’
এবারের টি-২০ ফরম্যাটের এশিয়া কাপের আয়োজক ভারত। কিন্তু পাকিস্তান ভারত সফরে না যাওয়ায় টুর্নামেন্টটি সরিয়ে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে নেওয়া হতে পারে। শ্রীলঙ্কা বা সংযুক্ত আরব আমিরাত হতে পারে সম্ভাব্য ভেন্যু। তবে বিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে আরব আমিরাতকেই ভেন্যু হিসেবে ধরা হচ্ছে। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে এশিয়া কাপ শুরুর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিসিসিআই। তবে সরকারের দিক নির্দেশনা ছাড়া এক পাও তুলবে না ভারতীয় বোর্ড।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তিনদিন ধরে বাড়িঘরে হামলা লুটপাট চলছে
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল নেতা সোহরাব মিয়া হত্যাকাণ্ডের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের কাঁঠালকান্দি গ্রাম ভুতুড়ে জনপদে পরিণত হয়েছে। পাল্টা হামলার মুখে গ্রাম ছেড়েছে শতাধিক পরিবার। ঘটনার তিনদিন পর আজ মঙ্গলবারও প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা–লুটপাট হয়েছে।
চাতলপাড় ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি গ্রামে গত শনিবার মোল্লা গোষ্ঠী ও উল্টা গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত হন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সোহরাব মিয়া (২৬)। তিনি ছিলেন মোল্লা গোষ্ঠীর। এরপর উল্টা গোষ্ঠীর লোকজন গ্রাম ছাড়লেও প্রতিদিনই তাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হচ্ছে।
সংঘর্ষের চারদিন পেরোলেও গ্রামটিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি। চাতলপাড়ে একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও এর সদস্য মাত্র ১০ জন। তারা বলছেন, কাঁঠালকান্দিতে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। তারা সেখানে যেতে নিরাপদবোধ করছেন না। তাছাড়া হাওড়বেষ্টিত গ্রামটিতে যাতায়াতের মতো বাহনও তাদের নেই।
চাতলপাড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জনবল কম। হাওর এলাকা হওয়ায় যাতায়াতেও অসুবিধা। তাছাড়া নিহতের স্বজনরা টেঁটা-বল্লম নিয়ে পাহারা দেওয়ায় আমাদেরও নিরাপত্তা নেই।’
নাসিরনগর থানার ওসি আজহারুল ইসলাম জানান, সোহরাব মিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গ্রামের ইউপি সদস্য বাবুল মিয়ার দোতলা বাড়ি সংঘর্ষের পর গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবার নিয়ে তিনি গ্রাম ছেড়েছেন। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক। ফলে তাদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সোমবার কাঁঠালকান্দি গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের পথে পথে ছড়িয়ে আছে ভাঙা কাচ, পোড়া টিন আর লণ্ডভণ্ড আসবাবপত্র। পোড়া, বিধবস্ত বাড়ি গ্রামজুড়ে। ২/৩টি পোড়া বাড়ি থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ৩৭টির বেশি বাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। ওইদিন সন্ধ্যার পর আগুন দেওয়া হয় উল্টা গোষ্ঠীর লিলু মিয়ার বাড়িতে। গতকাল জয়নাল মিয়া ও মো. হাসানের বাড়িতে ভাংচুর করা হয়। নাজমুল মিয়ার বাড়ি থেকে ৬০ মণ ধান লুট হয়।
গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমরা কোনো পক্ষকেই সমর্থন করিনি। তারপরও আমার বাড়িতে মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন হামলা করে সব ভেঙে নিয়ে গেছে। তিন দিন ধরে খাবারও নেই। হামলাকারীরা রান্নাঘরের চুলা, এমনকি টিউবওয়েলটিও তুলে নিয়ে গেছে।’
সাফিয়া বেগম নামের আরেক নারী বলেন, ‘আমার এক ছেলে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ঘর তুলেছিল। কিন্তু মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন ঘরটা পুড়িয়ে দিল। আজ আমার সব শেষ।’
অন্তঃসত্ত্বা কোহিনুর বেগম বলেন, ‘আমি অসুস্থ। আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গলা থেকে স্বর্ণের চেইন পর্যন্ত নিয়ে গেছে। এমনকি আমার ওষুধগুলোও নিয়ে গেছে। বারবার অনুরোধ করার পরও আমার হাত-পা বেঁধে রেখে চলে যায়।’
কাঁঠালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় সোমবার অন্তত ২১ শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ের ৫০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০০ জনের বেশিই অনুপস্থিত ছিল। আতঙ্কে একজন শিক্ষকও ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে আছেন।
প্রধান শিক্ষক তুহিনা বেগম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তো বটেই, শিক্ষকরাও আতঙ্কে আছেন। অভিভাবকদের ফোন করেও সাড়া পাচ্ছি না।’
চাতলপাড় বাজারের ছয়টি দোকানেও ভাংচুর লুটপাট হয়েছে। এর মধ্যে চালের আড়ত, মোবাইল ফোন এবং রড-সিমেন্টের দোকান রয়েছে।