Prothomalo:
2025-07-10@18:42:19 GMT

বিপদ নিয়ে ইসলামের উক্তি

Published: 10th, July 2025 GMT

জীবন একটি পরীক্ষার মঞ্চ, যেখানে বিপদ আমাদের ধৈর্য, ইমান ও আল্লাহর ওপর ভরসার পরীক্ষা নেয়। রোগ, দারিদ্র্য, সামাজিক অশান্তি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ—এসব বিপদ ইসলামে শুধু কষ্ট নয়, বরং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগও বটে। কোরআন ও হাদিসে বিপদ মোকাবিলার জন্য ধৈর্য, দোয়া ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

কোরআনে বিপদ নিয়ে উক্তি

কোরআন বিপদকে আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে বর্ণনা করে। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে। তবে ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)

বিপদ মুমিনের জন্য আল্লাহর পরীক্ষা এবং তার গুনাহ মাফের মাধ্যম।ইমাম ইবনে কাসির (রহ.

) , তাফসির ইবনে কাসির, ১/৪৫৬আরও পড়ুনবিপদ থেকে রক্ষা পেতে দোয়া০৭ অক্টোবর ২০২৪

আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ইমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত: ১১)

ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘বিপদ মুমিনের জন্য আল্লাহর পরীক্ষা এবং তার গুনাহ মাফের মাধ্যম। (তাফসির ইবনে কাসির, ১/৪৫৬, দারুস সালাম, ২০০০)

হাদিসে বিপদ নিয়ে উক্তি

নবীজি (সা.) বিপদের সময় ধৈর্য ও দোয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের ওপর এমন কোনো বিপদ আসে না, এমনকি একটি কাঁটার আঘাতও না, যার মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করেন না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৬৪১)

আরেকটি হাদিসে নবীজি বলেন, ‘যখন কোনো মুমিন বিপদে পড়ে এবং বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহ তার জন্য বিপদের চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩,৪৩৬)।

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘বিপদ মুমিনের জন্য আল্লাহর রহমত ও কাফফারার মাধ্যম, যা তাকে আখিরাতের জন্য প্রস্তুত করে।’ (রিয়াদুস সালিহীন, ১/২৩৪, দারুল কুতুব, ১৯৯৯)

আরও পড়ুনকুনুতে নাজেলা: বিপদে আল্লাহর কাছে আশ্রয়ের দোয়া০৮ জুলাই ২০২৫কোনো মুসলিমের ওপর এমন কোনো বিপদ আসে না, এমনকি একটি কাঁটার আঘাতও না, যার মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করেন না।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৬৪১বিপদের সময়ের দোয়া

বিপদে আল্লাহর কাছে দোয়া করা ইসলামের একটি মৌলিক শিক্ষা। একটি প্রচলিত দোয়া হলো:

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আজিমুল হালিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম।

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি মহান ও সহিষ্ণু। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি সুউচ্চ আরশের প্রতিপালক, আকাশ ও পৃথিবীর রব এবং সম্মানিত আরশের রব। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৫)

আরেকটি দোয়া:

উচ্চারণ: হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।

অর্থ: আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁর ওপর ভরসা করি, তিনি মহান আরশের রব। (সুরা তাওবা, ৯: ১২৯)

ইসলাম বিপদকে শুধু কষ্ট হিসেবে দেখে না, বরং এটি আল্লাহর পরীক্ষা ও গুনাহ মাফের মাধ্যম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য প্রতিটি বিষয়ই কল্যাণকর। সুখে সে কৃতজ্ঞ থাকে, আর বিপদে ধৈর্য ধরে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৮৯৫)

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘বিপদ মুমিনকে আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যায় এবং তার ইমানকে শক্তিশালী করে।’ (মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া, ১০/২৮৭, দারুল ওয়াফা, ২০০১)

আরও পড়ুনতওবা-ইস্তিগফার রিজিক বাড়ায়, বিপদ তাড়ায় ১০ এপ্রিল ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ম ন র জন য ব পদ ম ম ন আল ল হ ত র র পর ক ষ ইসল ম র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

তিন মাস বন্ধ আমদানি-রপ্তানি

রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের প্রভাবে তিন মাস ধরে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে স্থলবন্দরে থাকা আলু, সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য নষ্ট হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানি-রপ্তানিকারকরা। অনেকে টেকনাফ থেকে গুটিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা চালু করছেন। 
সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন রাজ্যে মংডু থেকে ১৩৮ পিসের একটি কাঠের বোট আসে। এরপর থেকে টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্যে পণ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে মিয়ানমার অংশের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে চারটি পণ্যবাহী নৌযান আটক করে কমিশন দাবি করে আরাকান আর্মি। এরপর থেকে ছয় মাস ধরে ইয়াঙ্গুন দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। 
এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন বলেন, ‘স্থলবন্দরে অচলাবস্থা বিরাজ করেছে। বন্দরকে সচল করার জন্য কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি বন্দর কার্যক্রম ফের চালু হবে।’ 

সরেজমিন দেখা যায়, পুরো বন্দর খাঁ খাঁ করছে। রপ্তানীকৃত আলুতে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। টিনশেড একটি গুদামে বস্তায় বস্তায় আলু পচে পড়ে আছে। নাফ নদের জেটি ঘাটে নেই কোনো পণ্যবাহী ট্রলারও। কাজ না থাকায় বেকার দিন পার করছেন হাজারো শ্রমিক ও আমদানি-রপ্তানিকারকের প্রতিনিধি। 
আমদানিকারক এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধের পর তিন মাস ধরে পুরোপুরিভাবে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। যদিও তার আগে মংডুর সঙ্গে ব্যবসা চালু ছিল, সেটিও বন্ধ। এর প্রভাবে স্থলবন্দরে আমাদের আমদানিকৃত আলু পচে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সিমেন্টও। এতে শতাধিক ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। জানি না কবে আবার স্থলবন্দরের ব্যবসা সচল হবে।’
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের কয়েকটি গুদামে ২ হাজার ৭০০ বস্তা আলু, ২২ হাজার ৮৫০ বস্তা সিমেন্ট, ১ হাজার ৯০ বস্তা কোমল পানীয় রয়েছে। এ ছাড়া চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, প্লাস্টিক পণ্য মজুত রয়েছে। ইতোমধ্যে সব আলু নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকশ বস্তা সিমেন্টও নষ্ট হওয়ার পথে।
জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে রাখাইন রাজ্যে সিমেন্ট রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ২৩৮ টন, আলু রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ১৭৪ টন। সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকায় সরকার প্রতিদিন ৪ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

টেকনাফ ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। বন্দরে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমাদের এখান জনবল অন্যখানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি কীভাবে স্থলবন্দরে বাণিজ্যে চালু করা যায়।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ