ঈদের ছুটি শেষে গ্রাম থেকে শহরমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। সবাই কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব। যে যেমন করে পারছেন গাড়িতে উঠছেন। কেউ বাসে, কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, আবার অনেকে ট্রাক ভাড়া করেও রাজধানীর দিকে ছুটছেন। তিন চাকার যানে মহাসড়কে চলাচল নিষেধ থাকলেও দেদার চলছে শেরপুর-ময়মনসিংহ সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। শুধু তাই নয়, ব্যাপক গতির সঙ্গে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন চালকরা। এমন পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছেন যাত্রীরা।

পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গত শুক্রবার কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা সদরের বাড়িতে যান পোশাকশ্রমিক আমিন মিয়া। বাস না পেয়ে তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে প্রথমে ভালুকা পরে ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর আসেন।

তার অভিযোগ– ময়মনসিংহ থেকে শেরপুরের ভাড়া ১৫০ টাকা। এবার তিনি এসেছেন ২৫০ টাকায়। ছুটি শেষে বৃহস্পতিবার কর্মস্থলে ফেরার সময় একই ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাকে। এ নিয়ে বচসা শুরু হলে তাঁকে বেশ নাজেহাল হতে হয় শহরের সদর থানা এলাকার অটোস্ট্যান্ডে চালক ও সুবিধাভোগীদের হাতে।

এ সময় আমিন মিয়া দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘অটোরিকশা স্ট্যান্ডে এসে মনে হয়েছে দেশে ভালো-মন্দ দেখার কেউ নেই। যার যা খুশি তাই করছে। প্রতিবাদ করলেও অপমানিত হতে হয়। আমরা কম আয়ের মানুষ। কি আর করবো।’ নিরূপায় হয়ে ২৫০ টাকা দিয়েই রওনা দিতে হয় তাকে।

আমিন মিয়ার মতো অসংখ্য যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। কিন্তু সবাই মুখেই কুলুপ আটা। কেউ কিছু বলছেন না। আকরামুজ্জামান নামে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এক যাত্রী এই প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনাদের বলে কোনো লাভ নেই। ঈদুল ফিতরেও একই অবস্থা ছিল। পত্র- পত্রিকায় খবর দেখেছি। কিন্তু কিছুই তো হলো না।’

তার ভাষ্য, অটোরিকশার চালকরা ভাড়া তো বেশিই নিচ্ছে। তা ছাড়া যে গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে তাতে জীবনাটা হাতের মুঠোয় নিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে। কিছু বললে কানে নেয় না চালকরা।

জেলা শহরের রঘুনাথ বাজার থানামোড় ও খোয়ারপাড় এলাকার স্ট্যান্ডগুলোতে গিয়ে দেখা যায় লোকে লোকারণ্য। এর সুযোগ নিচ্ছে চালক ও দালাল শ্রেণি।

জানা গেছে, থানামোড় থেকে জামালপুরের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। এ সড়কে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর এসে থামেন ৮টি উপজেলার যাত্রীরা। ঝিনাইগাতী থেকে শেরপুর সদরের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার, এখানে ৪০ টাকার ভাড়া দিনে ৬০ টাকা, রাতে ৮০ টাকা দিতে হচ্ছে। শ্রীবরদী শহর থেকে যারা আসছেন তাদের ১৭ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। ৮০ টাকাও নিচ্ছেন কেউ কেউ। নালিতাবাড়ি উপজেলা সদর থেকে এসে অনেকেই ভাড়া দিয়েছেন ৮০ টাকা। অথচ বিআরটিএ ২৬ কিলোমিটার সড়কের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে ৫০ টাকা।

জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সামনে থেকে তারাকান্দার দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। অটোরিকশার যাত্রী তৌফিকুর রহমান বলেন, আগে ভাড়া ছিল ২০ টাকা। এখন দিতে হচ্ছে ৩০ টাকা। অর্থাৎ কর্মস্থলমুখী যাত্রীরা ঈদের বোনাস ভাড়া দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না অটোচালক ও সুবিধাভোগীদের দৌরাত্ম্য।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় অটোরিকশা চালক আক্তার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কি করতাম ভাই, গ্যাস পাম্পে গেলে ৩ ঘণ্টা বইসা থাইকা গ্যাস নিতে হয়। গ্যাসের চেয়ে হাওয়া থাকে বেশি। ১৯০ টাকার গ্যাস ২০০ টাকা দিলে টাকা আর ফেরত দেয় না। তাই ভাড়া বেশি না নিলে পুষে না।’

এ ব্যাপারে শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, ঈদের শুরু থেকে প্রতিদিন বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ডে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের উপস্থিতি যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ সব কিছু ঠিকঠাক থাকে। চলে এলে ফের অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘নীতি, নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে। আমাদের চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। জরিমানা করা হচ্ছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদয ত র

এছাড়াও পড়ুন:

বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রাজশাহী ও ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ

৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রাজশাহী ও ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ করেছেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা।

আজ শনিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেলপথ অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল শিক্ষার্থী। আর ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা বিকেল পাঁচটার দিকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করেন। এর মধ্যে বাকৃবির শিক্ষার্থীরা রাত আটটার দিকে অবরোধ তুলে নিলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাত পৌনে ১১টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বিকেল পৌনে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন স্টেশন বাজার রেললাইন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে রাজশাহী থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে কম। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তাঁরা দাবি করেন, প্রথমবার লিখিত পরীক্ষায় বসতে যাওয়া পরীক্ষার্থীদের জন্য মাত্র দুই মাস সময় দেওয়া বৈষম্যমূলক। এত কম সময়ে ১ হাজার ১০০ নম্বরের সিলেবাস শেষ করা সম্ভব নয়।

অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘সময় চাই, সময় চাই, যৌক্তিক সময় চাই’, ‘এক দুই তিন চার, পিএসসি স্বৈরাচার’, ‘সবাই পায় ছয় মাস, আমরা কেন দুই মাস’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা আকতার বলেন, ‘প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর লিখিতের জন্য মাত্র দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে, এটা অযৌক্তিক। আমরা শুধু যৌক্তিক সময় চাই।’

মেহেদি হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে যৌক্তিক সময়ের দাবিতে আন্দোলন করছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পরীক্ষার্থীরা আমাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছে। তবু পিএসসির অবস্থান একই রয়ে গেছে। আমরা চাই, পরীক্ষার সময় পেছানো হোক, যাতে সবাই সমানভাবে প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারে।’

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

৪৭ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময়সূচিকে ‘অবাস্তব ও বৈষম্যমূলক’ উল্লেখ করে তিন ঘণ্টা রেললাইন অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পরীক্ষার্থীরা। আজ বিকেল পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এর ফলে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী তিস্তা ও মহুয়া এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের চলাচল বিঘ্নিত হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার বিকেলে ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আব্দুল জব্বার মোড়ে আসেন। পরে তারা আব্দুল জব্বার মোড় সংলগ্ন রেললাইনের ওপর অবস্থান করেন।

৪৭ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি পেছানোর দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রেলপথ অবরোধ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীর ভোট মানেই পরিবর্তনের ঘোষণা: এমরান সালেহ
  • ময়মনসিংহে ক্লিনিকে অভিযানে কারাদণ্ড-জরিমানা 
  • সৌরভ শুরু করেছিলেন দুই হাজার টাকায়, এখন মাসে লাখ টাকার পণ্য বেচেন
  • সাড়ে ৮ ঘন্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ থেকে সরে গেলেন শিক্ষার্থীরা
  • ময়মনসিংহে রেললাইন অবরোধ অব্যাহত, দুর্ভোগ চরমে
  • বিসিএস পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে ময়মনসিংহে ফের রেল অবরোধ, যাত্রীদের দুর্ভোগ
  • বাকৃবি শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ
  • বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রাজশাহী ও ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ
  • ভূমিকম্পে হুড়োহুড়িতে আহত ২৯ শ্রমিক এখনো হাসপাতালে