ইরানের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে আহত ১৭: এমডিএ
Published: 20th, June 2025 GMT
ইরানের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে ১৭ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। ইসরায়েলের জরুরি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাগেন ডেভিড অ্যাডমের (এমডিএ) বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।
এদিকে এমডিএর বিবৃতির বরাত দিয়ে এএফপি প্রাথমিকভাবে জানায়, ইসরায়েলে দুজন আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ১৬ বছর বয়সী তরুণকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। তার শরীরের ওপরের অংশে আঘাত রয়েছে। আর এক ৫৪ বছর বয়সী ব্যক্তির অবস্থা খুব বেশি গুরুতর নয়। তিনি পায়ের নিচের অংশে আঘাত পেয়েছেন।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে এই দুজনসহ ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর গুরুতর আহত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এসব ব্যক্তি কোথায় অবস্থান করছিলেন, তা জানায়নি এমডিএ। অর্থাৎ ইরানের ছোড়া নতুন ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কোথায় আঘাত হেনেছে, তা প্রকাশ করেনি ইসরায়েল।
এর আগে বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, অল্প কিছুক্ষণ আগে ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত হওয়ার পর দেশজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় সাইরেন বেজে উঠেছে। ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করছে। দেশবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে ঢোকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের হাইফা শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। ভিডিওটি কিছুক্ষণ আগের বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল গ র তর অবস থ এমড এ
এছাড়াও পড়ুন:
২০ বছর ধরে অচল চুয়েট কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চুয়েটেকসু) দুই দশক ধরে অচল। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০২ সালে। এরপর ২০০৩ ও ২০০৫ সালে ভোট ছাড়াই কমিটি গঠন করা হয়। তার পর থেকে সংসদের কার্যক্রম পুরোপুরি থেমে আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ অক্টোবর ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে চুয়েটের শিক্ষার্থীরাও সংসদ চালু হবে কি না—এই প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান জানাতে শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যে অনেকেই পোস্ট দিয়ে নির্বাচন দাবি করেছেন।
নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ২০০২ সালের ৪ এপ্রিল চুয়েটেকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়। ছাত্রদল–সমর্থিত শফিউল আজম সহসভাপতি ও নুরুল আজম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৩ ও ২০০৫ সালে ভোট ছাড়াই ছাত্রদল–সমর্থিত প্রার্থীদের কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে নির্বাচন হয়নি। এক সময় কমিটি দেওয়াও বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৩ সালের কমিটিতে ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন মনসুর আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের সমঝোতার ভিত্তিতেই ভোট ছাড়াই কমিটি গঠন হয়েছিল। এরপর নির্বাচনের আয়োজনও করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
২০০৫ সালের কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাহাত হায়দার বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তখন নির্বাচন হয়নি। সমঝোতার মাধ্যমে তখন কেন্দ্রীয় সংসদের ৬টি পদের একটি আমরা শিবিরের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলাম।
১৯৬৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ‘চট্টগ্রাম প্রকৌশল কলেজ’ নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের অধীনে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ১৯৮৬ সালের ১ জুলাই এটি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি), চট্টগ্রাম রূপে উন্নীত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর একটি সরকারি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটিকে পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দিয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) নামকরণ করা হয়।
অন্যদিকে চুয়েটে ছাত্র সংসদ চালু হয় ১৯৭০ সালে। প্রথম ভিপি ছিলেন চুয়েটের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোসাদেকুজ্জামান।
অচল সংসদ, সচল চাঁদা২০০৫ সালের তৎকালীন কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে চুয়েটেকসুর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। যদিও ২০১১ সালে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে নির্বাচন দাবি তুলেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম সিন্ডিকেট সভায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্তও হয়, তারিখও ঘোষণা করা হয় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু ছয় দিন যেতে না যেতেই প্রশাসন নির্বাচন স্থগিত করে।
মূলত নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি ও নির্বাচন আয়োজনে প্রয়োজনীয় কাজ সময় সাপেক্ষ হওয়ার অজুহাতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকে ছাত্র সংসদ চালুর বিষয়ে আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন।
সংসদ অচল থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিবছর ১০০ টাকা করে ছাত্র সংসদ ফি নেওয়া হচ্ছে। চার বছরের কোর্সে একজন শিক্ষার্থীকে গুনতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। বর্তমানে চুয়েটে ৪ হাজার ৬২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। অর্থাৎ বছরে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা সংসদ তহবিলে জমা হচ্ছে। এই অর্থ কোথায় যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা কিছুই জানেন না।
পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বললেন, ‘২০ বছর ধরে সংসদ নেই, অথচ আমরা প্রতিবছর ফি দিয়ে যাচ্ছি। যদি সংসদ গঠন সম্ভব না হয়, এই অর্থ নেওয়া বন্ধ করা হোক। এত দিনে যা জমেছে, তারও হিসাব চাই।’
তহবিলের বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সংসদের তহবিলের তথ্য আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।’
কার্যালয় এখন তালাবদ্ধবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে টিনশেডের একটি ভবনেই চুয়েটেকসুর কার্যালয়। দুই দশক ধরে কার্যক্রম না থাকায় ভবনটি এখন ধুলোবালি আর মাকড়সার জালে ভরা। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন কার্যালয়টি ছাত্রলীগের দখলে ছিল। সেখানে মাদক সেবন ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জামিল আহসান অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালে ক্যাম্পাসে তাঁকে আটকে রড, হাতুড়ি দিয়ে মারধর করা হয়েছিল। পরে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, কর্তৃপক্ষের শর্তশিক্ষার্থীদের মধ্যেও নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ সংসদকে গণতান্ত্রিক চর্চার অপরিহার্য ‘প্ল্যাটফর্ম’ মনে করছেন।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিন মুনকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংসদ থাকলে নির্বাচিত প্রতিনিধি আমাদের দাবিদাওয়ার কথা প্রশাসনের কাছে তুলতে পারতেন। তবে সংসদকে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখতে হবে।’
পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউল আউয়াল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য সংসদ জরুরি। প্রশাসনের জবাবদিহিও বাড়বে। নতুন পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।
নির্বাচন আয়োজন করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহমুদ আবদুল মতিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে দাবি উঠলে প্রশাসন সংসদ পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেবে।
তহবিলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার হওয়ার কথা নয়। তবে শিক্ষার্থীদের উন্নয়নসংক্রান্ত কাজে ব্যয় হচ্ছে কি না, সেটা খোঁজ নিতে হবে।