টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি নাজমুল হোসেন শান্ত আগেও করেছেন। দুই বছর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে। এবার গলে গড়লেন বিরাট কীর্তি। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি। অতিথি অধিনায়ক হিসেবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির কীর্তি আর কারো নেই। আছে আরো কিছু ব্যক্তিগত অর্জন।

টেস্ট ইতিহাসে শান্তর আগে দুবার টেস্টে একাধিকবার জোড়া সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন মাত্র ১৪ জন ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে সুনীল গাভাস্কার, রিকি পন্টিং ও ডেভিড ওয়ার্নার করেছেন তিনবার। শান্তকে নিয়ে দুবার টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি আছে শুধু ১২ জনের। টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে জোড়া সেঞ্চুরি করা ১৬তম ব্যাটসম্যান শান্ত।

গলের পঞ্চম দিনে হাইলাইট করার মতো আর কিছুই নেই। হতে পারত। কিন্তু, নিরাপদ ক্রিকেট বেছে নেওয়ায় সেই সুযোগটি হয়নি। উত্তাপ ছড়ানো ছাড়াই ড্র হয়েছে গল টেস্ট। তাতে দুই দল পয়েন্ট ভাগাভাগি করে শুরু করেছে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্র।

আরো পড়ুন:

জোড়া সেঞ্চুরিতে শান্তর ইতিহাস

নায়ারের ৪০২ ম্যাচের অপেক্ষা

মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত শনিবার পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশের লিড ছিল ১৮৭ রানের। প্রতিটি জয়ের এখন আলাদা মূল্য আছে। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেই অন্তত দুই সেশন শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠাবে। কিন্তু, মুশফিকুর ও শান্তর নিরাপদ ব্যাটিংয়ে জয়ের কোনো চিন্তা পাওয়া যায়নি।

টুকটাক রান করেছেন। বল দেখেশুনে খেলে রান পেয়েছেন। কোনো বাড়তি ঝুঁকি নেননি। আগ্রাসন দেখাননি। বিরতির আগে মুশফিকুর রহিম ৪৯ রানে সরাসরি থ্রোতে রান আউট হলে ভাঙে এই শতরান পেরুনো জুটি। তার আউটের সঙ্গে সঙ্গে খেলা বৃষ্টিতে বন্ধ।

মধ্যাহ্ন বিরতির পর বাংলাদেশ দল নতুন উদ্যমে ফেরে। লক্ষ্য শান্তর সেঞ্চুরি। লিটন, জাকের পথ হারালেও শান্ত তুলে নেন ম্যাচের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ও ক্যারিয়ারের সপ্তম। এরপর আগ্রাসী হয়ে তিন ছক্কায় দ্রুত রান তোলেন। সব মিলিয়ে ১২৫ রান তুলে ইনিংস ডিক্লেয়ার করেন। তখন বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ২৮৫। সব মিলিয়ে লিড ২৯৫। ১৯৯ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ১২৫ রানে অপরাজিত থেকে শান্ত গল মিশন শেষ করেন। ম্যাচ সেরার পুরস্কারটাও ওঠে তার হাতে।

প্রথম ইনিংসে ১০ রানের লিড পাওয়ায় শ্রীলঙ্কাকে ২৯৬ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। বোলাররা ৩২ ওভার হাত ঘুরিয়েছিলেন। ৪ ওভার হাতে রেখে ড্র মেনে নেয় দুই দল। এ সময়ে বাংলাদেশের দুই স্পিনার তাইজুল ও নাঈম ৪ উইকেট তুলে নেন। যেখানে তাইজুল একাই নেন ৩ উইকেট। নাঈম পান অপরটি।

প্রশ্ন উঠছে, আরো আগে ইনিংস ডিক্লেয়ার করার সাহস কেন দেখাল না এবং সকালের সেশনে ধীর গতিতে ব্যাটিংয়ের কারণ কী? উত্তর খুঁজে পাননি কেউই।

এই টেস্ট দিয়ে অবসরে গেলেন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ইনিংসে ৮ রান করেন তিনি। তাইজুলের বলে আউট হওয়ার পর ক্রিজে ছাড়েন। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা প্রত্যেকেই তাকে এগিয়ে এসে জানিয়েছেন অভিনন্দন। শ্রীলঙ্কার হয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ টেস্ট (১১৯) খেলেছেন তিনি। তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তার, ৮ হাজার ২১৩। গলেই ম্যাথুজ ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। গলেই শেষ করলেন।

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ন তর

এছাড়াও পড়ুন:

কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি

পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।

মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।

এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।

মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।

পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।

ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ