যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বাড়েনি: আইএইএ
Published: 22nd, June 2025 GMT
ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর স্থাপনার বাইরের অংশে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধি পায়নি। আজ রোববার জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এ বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর বিবিসির
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আরও তথ্য পাওয়া গেলে আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা ইরানের পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও মূল্যায়ন দেবে।’
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ১০ স্থানে আজ রোববার হামলা চালিয়েছে ইরান। এসব হামলায় ১০ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএম) জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে ১১ জন আহত হয়েছেন। এমডিএমের বরাতে টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থার মুখপাত্র বলেছেন, ইসরায়েলের ১০টি স্থানে রকেট ও গোলা হামলা হয়েছে। কারমেল, হাইফা, তেল আবিব ও ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে এসব হামলা হয়েছে। দেশটির বেশির ভাগ এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বিবিসির খবর বলা হয়েছে, ফোরদো নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইস্পাহানের নিরাপত্তাবিষয়ক ডেপুটি গভর্নর আকবর সালেহি বলেন, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আমরা এ দুটি শহরে পারমাণবিক স্থাপনার কাছে হামলা হতে দেখেছি।
দিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, আজ রোববার ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে।
এ ছাড়া অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে সাহায্যকারী ঘাঁটি, কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার এবং একটি জৈব গবেষণা কেন্দ্র।
ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) বরাতে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব টেলিভিশন জানায়, দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
এর আগে নিজ ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান—তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ‘সফল হামলা’ চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইরানে চালানো এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান অংশ নিয়েছে। এবার ইরানের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়টি জানানো হলো।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
মামদানিকে ঠেকাতে নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন রিপাবলিকানরা, তা কি সম্ভব
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের প্রথম মুসলিম মেয়রের পদে বসছেন জোহরান মামদানি। শহরটিতে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রথম মেয়রও হচ্ছেন তিনি। এটি মোটেও মেনে নিতে পারছেন না মামদানির রিপাবলিকান নিন্দুকেরা। যেকোনো মূল্যে তাঁর মেয়র পদে বসা ঠেকাতে চাচ্ছেন তাঁরা। তাই এবার মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন।
নির্বাচনের আগে থেকে মামদানিকে নিয়ে নানা কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ৩৪ বছর বয়সী এই মুসলিমকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এমনকি হুমকি দিয়ে এ–ও বলেছেন, মামদানি মেয়র হলে নিউইয়র্কে কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ করে দেবেন।
ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে রিপাবলিকান কয়েকজন আইনপ্রণেতা মামদানির নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রক্রিয়া তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। কয়েকজন আবার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার কথা বলেছেন। এই আইনপ্রণেতাদের অভিযোগ মামদানি কমিউনিস্ট এবং ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। যদিও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তাঁরা।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে মামদানির নাগরিকত্বের বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেছিলেন প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য অ্যান্ডি ওগলেস। পরে গত ২৯ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘মামদানি যদি নাগরিকত্ব–সংক্রান্ত নথিপত্রে মিথ্যা বলে থাকেন, তাহলে তিনি নাগরিক থাকতে পারবেন না। আর অবশ্যই নিউইয়র্ক শহরের মেয়র নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’
জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডায়। ১৯৯৮ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। ২০১৮ সালে দেশটির নাগরিকত্ব পান।মামদানিকে কমিউনিস্ট ও সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ওগলেস আরও বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সমাজতন্ত্র বা সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করতে হয়। আমার সন্দেহ আছে তিনি (মামদানি) এগুলো প্রকাশ করেছিলেন কি না। আমার এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে উগান্ডায় যাওয়া প্রথম ফ্লাইটেই তাঁকে ফেরত পাঠান।’
মামদানির নাগরিকত্ব নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন প্রতিনিধি পরিষদে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সদস্য রেন্ডি ফাইন। ফাইন ও ওগলেস—দুজনের কাছেই তাঁদের বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য চেয়েছিল মার্কিন ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট পলিটিফ্যাক্ট। তবে কোনো জবাব দেননি তাঁরা। আর মামদানি তাঁর নাগরিকত্বের আবেদনে মিথ্যা বলেছিলেন—এমন কোনো তথ্যও পায়নি ওয়েবসাইটটি।
জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডায়। ১৯৯৮ সালের মাত্র সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। ২০১৮ সালে দেশটির নাগরিকত্ব পান। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, দেশটির নাগরিকত্ব পেতে একজন বিদেশি প্রাপ্তবয়স্ককে অবশ্যই আইন মেনে টানা পাঁচ বছর বসবাস করতে হবে। আর মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করলে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য দেশটিতে অন্তত তিন বছর টানা বসবাস করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল শুধু দেশটির আদালত করতে পারেন। মামদানির নাগরিকত্বের আবেদন দিয়ে ওগলেস ও ফাইন যে অভিযোগ এনেছেন, তার পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখছেন না অভিবাসী আইনবিশেষজ্ঞরা। অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবী জেরেমি ম্যাককিনলে বলেন, ‘মামদানি নাগরিক হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় অযোগ্য ছিলেন বা নথিতে কোনো কিছু লুকিয়েছেন—এমন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আমার চোখে পড়েনি।’
মামদানি একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী। তিনি ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট অব আমেরিকা নামের একটি সংগঠনের সদস্যও।রিপাবলিকানদের অভিযোগ পুরোনোগত গ্রীষ্মে মামদানি যখন ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন থেকে তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেন রিপাবলিকানরা। গত জুনে পাম বন্ডিকে লেখা একটি চিঠিতে মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ওগলেস। তিনি বলেছিলেন, মামদানি হয়তো ‘নাগরিকত্ব গ্রহণের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য বিকৃত করেছিলেন বা সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের কথা গোপন করেছিলেন।’
‘হোলি ল্যান্ড ফাইভের’ প্রতি সমর্থন জানিয়ে মামদানির লেখা একটি র্যাপ সংগীতের কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন ওগলেস। হোলি ল্যান্ড ফাইভের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে মুসলিম দাতব্য সংস্থা ‘হোলি ল্যান্ড ফাউন্ডেশনের’ পাঁচ ব্যক্তিকে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রতি সমর্থনের জন্য ২০০৮ সালে তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। যদিও ওই মামলায় উপস্থাপন করা প্রমাণ ও গুজবের ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন কয়েকজন আইনজীবী।
নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে বিরল হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে তা প্রায়ই ঘটছে বলে উল্লেখ করেছেন নিউইয়র্কের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক ইরিনা মান্ত্রা।মা, বাবা ও স্ত্রীর সঙ্গে জোহরান মামদানি