নেতানিয়াহুর ফাঁদে পা দিলেন ট্রাম্প
Published: 22nd, June 2025 GMT
ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে একটি নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী যা করতে চান, সেটা হোয়াইট হাউসকে সঙ্গে নিয়ে করতে অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু মাত্র ১৫০ দিনের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর মনে হচ্ছে ট্রাম্পও তাঁর পূর্বসূরিদের মতো একই ফাঁদে পড়েছেন। কয়েক প্রজন্মের মধ্যে তিনি ইরানের ওপর এমন এক হামলা চালিয়েছেন, যার প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদে থাকবে।
প্রথম দিকে ধারণা ছিল, ট্রাম্প প্রশাসন নেতানিয়াহুর সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোতে সরাসরি হামলা চালাতে কৌশলে টেনে আনতে পেরেছেন।
এর আগে একের পর এক চালানো সামরিক হামলা থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে নিবৃত্ত করতে পারেনি ওয়াশিংটন। এখন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি প্রতিশোধমূলক হামলা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, যা সহজেই একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের কয়েক দিন আগে তাঁর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ নেতানিয়াহুর সঙ্গে শাব্বাতের দিন (ইসরায়েলে শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন) দেখা করার দাবি নিয়ে ইসরায়েলে যান। এর উদ্দেশ্য ছিল গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনার জন্য নেতানিয়াহুকে চাপ দেওয়া।
ওই সময় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এটিকে ‘ট্রাম্প ফ্যাক্টর’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধোঁয়াশা রেখে দেওয়া এবং চুক্তি করার দক্ষতার প্রতি ইঙ্গিত করে। এ ট্রাম্প ফ্যাক্টর ক্ষমতাধর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে সামলানোর ক্ষেত্রে একটি স্পষ্ট সুবিধা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল।
নেতানিয়াহু এর আগে বিভিন্ন সময় মার্কিন প্রশাসনকে এ অঞ্চলে তাঁর সামরিক অভিযানকে সমর্থন দিতে রাজি করাতে সক্ষম হলেও ইসরায়েলের কিছু সমালোচক ট্রাম্পের প্রশংসা করতে শুরু করেছিলেন যে তাঁর নেতানিয়াহুর প্রভাব প্রতিহত করার সক্ষমতা রয়েছে।
কিন্তু শনিবার মার্কিন বি-২ বোমারু বিমানগুলো ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পর এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, ট্রাম্পের নিজের উপলব্ধিতে পরিবর্তন এসেছে। ইসরায়েল গত সপ্তাহে ইরানে হামলা শুরু করার পর এই প্রথম দেশটিতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহলও বিদেশনীতিতে ‘মাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী’ অবস্থান থেকে আরও যুদ্ধবাজ অবস্থানে চলে আসেন।
ট্রাম্পের যুদ্ধের প্রতি প্রকাশ্য বিতৃষ্ণা ও বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রকে আর কোনো সংঘাতে না জড়ানোর বিষয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দেওয়া প্রতিশ্রুতি, আবার দায়িত্ব গ্রহণের ২০০ দিনের কম সময়ের মধ্যে উধাও হয়ে যাচ্ছে।
জনসমক্ষে এসে ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের গুজব দূর করতে চেয়েছিলেন। তিনি এটা দেখানোরও চেষ্টা করেন যে মার্কিন নীতি ইসরায়েলের সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলছে। এর মাধ্যমে মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকটা অন্ধকারে রেখেই যে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী বোমা হামলা চালিয়েছে, সে ধারণা নাকচের চেষ্টা করেন ট্রাম্প।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ট্রাম্প বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী বিবি নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাতে চাই। আমরা এমন একটি টিম হিসেবে কাজ করেছি, যা সম্ভবত এর আগে অন্য কোনো টিম করেনি। ইসরায়েলের প্রতি এ ভয়ানক হুমকি মুছে ফেলতে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।’
এক সপ্তাহেই পাল্টে গেল দৃশ্যপটইরানের লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের বোমা হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রথম যে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছিল, সেটা থেকে ট্রাম্পের এ বক্তব্যের অনেক পার্থক্য রয়েছে। ওই সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হামলাগুলোকে ‘একতরফা’ বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় যুক্ত নয়। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হলো এ অঞ্চলে আমেরিকান বাহিনীকে রক্ষা করা।’
সেখানে এক সপ্তাহে কী এমন পরিবর্তন ঘটল। যুক্তরাষ্ট্রকে এখন মনে হচ্ছে, তারা ইসরায়েলি হামলাকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করেছে এবং হামলায় যোগ দিয়েছে। এটি সম্ভবত এমন এক ধারাবাহিক উসকানির জন্ম দিতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যকে একটি নতুন যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুনমধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে জড়ালেনই ট্রাম্প১২ ঘণ্টা আগেএটা ভবিষ্যতের জন্য কী বার্তা দিচ্ছে? ট্রাম্প প্রকাশ্যে ও ব্যক্তিগতভাবে দাবি করেছেন, ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় মার্কিন হামলা ছিল এককালীন অভিযান এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। অবশ্য মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা মার্কিন বাহিনীগুলোকে ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। ট্রাম্প তেহরানকে বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করা হয়, তাহলে তারা আরও হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত।
এরপরও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ ট্রাম্পের নিজের প্রশাসনের কর্মকর্তারা সতর্ক করে আসছেন যে তেহরান যদি পাল্টা হামলা চালায়, সেটা সীমিত হামলা হলেও তা ইরানে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুনসংঘাতের গতিপথ বদলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এখন কী করবে৭ ঘণ্টা আগেআপাতত ট্রাম্প মধ্যপন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। হামলা চালিয়ে বলেছেন, তিনি একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের দিকে মোড় নেওয়া থেকে পরিস্থিতিকে আটকাতে পারবেন।
তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র ট্রাম্পের এ হামলায় আরও সাহসী হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে। নেতানিয়াহু এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, ‘অভিনন্দন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প! যুক্তরাষ্ট্রের অসাধারণ ও ন্যায়সংগত শক্তি দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর আপনার এই সাহসী সিদ্ধান্ত ইতিহাস বদলে দেবে।’
আরও পড়ুনইরানে মার্কিন হামলা: সংবিধানের চরম লঙ্ঘন বললেন বার্নি স্যান্ডার্স, আর কে কী বলেছেন১০ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র এমন এক বল ছ ন র জন য ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
পরিচয় সংকটে ভুগে ঝুঁকেছিলেন মাদকে, পরে তিনিই হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট
ছবি: রয়টার্স