কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার কথা জানলে অবাক হবেন
Published: 23rd, June 2025 GMT
পুষ্টিগুণে ভরপুর কাঁঠালের বিচি
অন্যান্য দেশি ফলের বিচির তুলনায় কাঁঠালের বিচিতে শর্করা, প্রোটিন, নানা রকম খনিজ উপাদান ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট পাবেন অনেক বেশি। প্রতি ২৮ গ্রাম বা ১ আউন্স কাঁঠালের বিচিতে থাকে—
ক্যালরি: ৫৩
কার্বোহাইড্রেট: ১১ গ্রাম
প্রোটিন: ২ গ্রাম
ফ্যাট: প্রায় শূন্য
ফাইবার: ০.৫ গ্রাম
রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি২): দৈনিক চাহিদার ৮%
থায়ামিন (ভিটামিন বি১): দৈনিক চাহিদার ৭%
ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস: বেশ ভালো পরিমাণে
কাঁঠালের বিচিতে থাকা রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ ও ফাইবার হজম না হয়ে সরাসরি অন্ত্রে গিয়ে ভালো ব্যাকটেরিয়ার খাবার হিসেবে কাজ করে। ফলে হজমপ্রক্রিয়া উন্নত হয়, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে।
কাঁঠালের বিচির স্বাস্থ্য উপকারিতাব্যাকটেরিয়াবিরোধী গুণ: চীনের প্রাচীন চিকিৎসায় কাঁঠালের বিচি ব্যবহৃত হতো ডায়রিয়া ও হজম সমস্যায়। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁঠালের বিচির গায়ে থাকা কিছু প্রাকৃতিক কণিকা জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
ক্যানসার প্রতিরোধেও সম্ভাবনা: কাঁঠালের বিচিতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনলিক ও স্যাপোনিন নামের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট শরীরের কোষক্ষয় প্রতিরোধ করতে পারে। প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, এসব উপাদান রক্তনালিতে ক্যানসার সৃষ্টির ঝুঁকি ৬১ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে।
হজমে সহায়ক: কাঁঠালের বিচিতে থাকা দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, মল নরম রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক। ফাইবার প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা হজম ও রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে সহায়তা করে।
খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে পারে: এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি কাঁঠালের বিচি খাওয়া ইঁদুরের মধ্যে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমেছে এবং ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বেড়েছে। ধারণা করা হয়, বিচির অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ফাইবার এ জন্য দায়ী।
আরও পড়ুনঢাকায় ছাদবাগানেই বিভিন্ন জাতের মণকে মণ আম ফলিয়েছেন সফিকুল ইসলাম১৮ জুন ২০২৫কিছু সাবধানতাকিছু ওষুধের সঙ্গে ঝুঁকি: যাঁরা অ্যাসপিরিন, ইবুপ্রোফেন ও রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তাঁদের কাঁঠালের বিচি খেতে নিষেধ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁঠালের বিচি রক্ত জমাট বাঁধার হার কমাতে পারে, ফলে অতিরিক্ত রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
কাঁচা বিচি খাবেন না: কাঁঠালের কাঁচা বিচিতে থাকে ট্যানিন ও ট্রিপসিন ইনহিবিটর, যা শরীরের পুষ্টি শোষণে বাধা দেয় এবং হজমে সমস্যা করে। তবে কাঁঠালের বিচি সেদ্ধ করে বা ভেজে খেলে এসব ক্ষতিকর উপাদান নষ্ট হয়ে যায়।
আরও পড়ুনআম খাবেন, কিন্তু কতটুকু২১ জুন ২০২৫কীভাবে খাবেনআমরা সাধারণত কাঁঠালের বিচি শুকিয়ে ভর্তা করেই বেশি খাই, ভাজি করেও খাওয়া যায়।
নিরামিষ সবজিতে যোগ করতে পারেন, মসলা দিয়ে ভুনা করলেও মুখরোচক হয়।
বেটে সুস্বাদু হালুয়া বানানো যায়।
শুকিয়ে গুঁড়া করে রুটি, বিস্কুট বা পিঠায় ব্যবহার করা যায়।
কাঁঠালের বিচির গুঁড়া স্মুদিতে ব্যবহার করতে পারেন।
ভাজা কাঁঠালের বিচি খেতেও বেশ লাগে।
সূত্র: হেলথলাইন
আরও পড়ুনগরমকালে কেন কাঁঠাল খাবেন? জেনে নিন ৬টি আশ্চর্য উপকারিতা১০ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জগন্নাথের শিক্ষার্থী নূরনবী ক্যানসারে আক্রান্ত, ফুল বিক্রি করে সহায়তার উদ্যোগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মীর নূরনবী কয়েক বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন। তবে অর্থসংকটে বন্ধ রয়েছে তাঁর চিকিৎসা। এ সংকট সমাধানে নূরনবীর পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীরা। এ জন্য ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রি করা হচ্ছে। সেই অর্থ তুলে দেওয়া হবে নূরনবীর চিকিৎসায়।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে শিক্ষার্থীদের কাছে ফুল বিক্রি করে নূরনবীর চিকিৎসা বাবদ অর্থ সংগ্রহ করতে দেখা যায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীদের। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্যের চত্বরে টেবিল–চেয়ার পেতে ফুল বিক্রি করেন তাঁরা। এরপর শহীদ মিনার, কলা অনুষদ, সামাজিক অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদের প্রাঙ্গণে হেঁটে হেঁটে শিক্ষার্থীদের কাছে ফুল বিক্রি করে নূরনবীর জন্য অর্থ সহায়তা নেওয়া হয়।
নূরনবী বর্তমানে স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর তাঁর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। পরে বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু পড়াশোনায় হাল ছাড়েননি নূরনবী। অদম্য সাহস ও স্বপ্ন নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হন। প্রতিদিন সাভার থেকে বাসে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নিয়মিত ক্লাস করেন তিনি। এরই মধ্যে সাতটি সেমিস্টার শেষ করেছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ক্যানসার এখন নূরনবীর ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়েছে।
ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আল শাহরিয়ার বলেন, ‘সবার সহায়তা নূরনবীর জন্য নতুন জীবনের আলো নিয়ে আসতে পারবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণার কাজ করছি। বিভিন্ন জায়গায় দেয়ালিকা লাগানো হয়েছে। সামনে আরও নতুন কিছু অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে আমরা কাজ করছি। আসুন, মানবতার বন্ধনে আমরা সবাই এক হয়ে নূরনবীর পাশে দাঁড়াই।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকারের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, ‘অনেকেই অনেকভাবে নূরনবীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। আমরা ভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহের চিন্তা করলাম। ফুলের বিনিময়ে অর্থ সাহায্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বেশ সাড়া পাচ্ছি। শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা বেশ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নূরনবীকে সহায়তা করা হবে কি না—জানতে চাইলে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক কে এ এম রিফাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রকল্যাণ দপ্তর থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোনো বরাদ্দ নেই। এখানে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটা শুধু দাপ্তরিক কাজে খরচ হয়। এখন নূরনবীর চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কনসার্ট আয়োজন করতে চেয়েছে তার সহপাঠীরা। সে ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করব।’