১. তরমুজ খান

তরমুজে থাকে সিট্রুলিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, যা শরীরে গিয়ে আর্জিনিন নামক আরেকটি পদার্থে রূপান্তরিত হয়। এই আর্জিনিন শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনে সহায়তা করে। আর নাইট্রিক অক্সাইড হলো একটি গ্যাস, যা রক্তনালিকে শিথিল করে এবং রক্তপ্রবাহ উন্নত করে, ফলে রক্তচাপ কমে যায়। তরমুজ যেকোনো সময় খেতে পারেন, তবে সকালের নাশতায় খেলে বেশি উপকার পাবেন।

২.

খাবারে শাকসবজি যোগ করুন

প্রায় সব ধরনের শাকসবজিই উচ্চ রক্তচাপের জন্য ভালো। কারণ, এসবে ক্যালরি থাকে খুব কম। অন্যদিকে শাকসবজিতে থাকে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম, যা শরীরের সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্তনালিকে শিথিল করে। একটি উদাহরণ দিই, পালংশাকে নাইট্রেট থাকে, যা রক্তপ্রবাহ ভালো করে রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রচুর শাকসবজি খান।

৩. বাদাম ও বীজ খান

পেস্তা, আখরোট, তিসির বীজ ও কুমড়ার বীজে আছে ফাইবার ও আর্জিনিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, যা শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে সাহায্য করে। নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাস রক্তনালিকে শিথিল করে। প্রতিদিন একমুঠো লবণহীন বাদাম বা বীজ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। তবে বাদামে ক্যালরি বেশি থাকে, তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো।

৪. বিট খাওয়ার অভ্যাস করুন

বিটে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট থাকে, যা শরীরে গিয়ে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। এই নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালিকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্তচাপ কমে। তাই ঘরোয়াভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বিট খেতে পারেন। তবে দ্রুত ফল পেতে চাইলে চিনি ছাড়া বিট জুস খাওয়াই ভালো।

আরও পড়ুনপ্রতিদিন বিটরুট খেলে পাবেন ৬টি অবিশ্বাস্য উপকার৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪৫. ফ্যাটযুক্ত মাছ খান

ফ্যাটযুক্ত মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা শরীরের প্রদাহ কমায় এবং রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। প্রতি সপ্তাহে কয়েকবার প্রায় ১০০ গ্রাম ফ্যাটযুক্ত মাছ খেলে হৃৎস্বাস্থ্যের উপকার হতে পারে। তবে এ ধরনের মাছের উপকারিতা আরও বেশি পাবেন, যখন সেসব ঝলসে নেবেন সামান্য অলিভ অয়েল ও মসলা দিয়ে। আপনি নিরামিষভোজী হলে আখরোট, তিসিবীজ, চিয়া সিডও হতে পারে ভালো বিকল্প।

৬. সাইট্রাসযুক্ত ফল খান

কমলা, লেবু, মাল্টা, জাম্বুরা—এসব সাইট্রাস ফলে থাকে ভিটামিন ও উদ্ভিজ্জ যৌগ, যা হৃৎস্বাস্থ্যে সহায়ক। প্রতিদিন চারটি কমলার সমপরিমাণ সাইট্রাসযুক্ত ফল খেলে রক্তচাপ কম‌বে। চাইলে পানিতে সাইট্রাসের ফালি দিয়ে সতেজ পানীয় বানিয়েও খেতে পারেন। তবে আপনি যদি রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন; কারণ, জাম্বুরা ও জাম্বুরাজাতীয় গ্রেপফ্রুট কিছু ‌কিছু ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

আরও পড়ুনবয়স ত্রিশের পর গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নাকি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ০৭ আগস্ট ২০২৪৭. হাঁটুন

রক্তচাপ কমাতে যোগব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটিও অত্যন্ত উপকারী। যদিও এসব সকালে খালি পেটে করা সবচেয়ে ভালো, তবে আপনি আপনার সুবিধামতো যেকোনো সময় করতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে অবশ্যই সেটা নিয়মিত করতে হবে এবং অন্যান্য জীবনযাপনসংক্রান্ত অভ্যাস ও ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, ছোট ছোট পরিবর্তনও বড় পার্থক্য গড়ে তোলে।

সতর্কতা

এসব ঘরোয়া উপায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেওয়া ওষুধের বিকল্প নয়। রক্তচাপের ওষুধ কখনোই নিজ নিজে হঠাৎ বন্ধ করবেন না। আবার কিছু কিছু খাবার ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপযুক্ত না-ও হতে পারে, তাই খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সূত্র : এমএসএন

আরও পড়ুনহার্ট অ্যাটাকের ৬টি লক্ষণ এবং হার্ট অ‍্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন২৪ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ইট র স শ কসবজ র পর ম উপক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে

বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতির পর্বে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।

চলতি মাসে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দপ্তরে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলের প্রধান মুনির সাতোরি।

মুনির সাতোরি বলেন, ‘আমাদের সফরের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রায় বিস্মৃত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা। রোহিঙ্গা সংকট যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য এটি ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় আবারও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ নিয়ে মুনির সাতোরি বলেন, ‘এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব করেছি।’

প্রতিনিধিদলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা বলেন, যখন বিশ্বে নাটকীয়ভাবে গণতন্ত্র অবনতির পথে, তখন বাংলাদেশ পথ পরিবর্তন করে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রের পথে যাওয়া যায়। তারা চেষ্টা করছে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার। আর এ জন্য সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা আশা করা জরুরি যে সামনে নির্বাচন হবে এবং তা প্রতিযোগিতামূলক হবে, যা হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য চেষ্টা করছে।

রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে ইজাবেল বলেন, ‘কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এ সংকট আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ, মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। আর বাংলাদেশও দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশের নিজেরই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ে নেওয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকটের এখনকার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে অবস্থায় রয়েছে।’

প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য আরকাদিউজ মুলারজিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বেশি মানবিক অনুদান আসে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো থেকে, যদিও আগে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দিত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি খুবই নগণ্য, এটি আশ্চর্যজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বদলে অনেক দূরে থাকা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে এর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বড় অংশগ্রহণকারী হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কারণ, বর্তমানে আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে দর–কষাকষি করছি।’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ইতিহাসে দেশটি বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি সুযোগ সত্যিকারের অগ্রগতির। শিগগিরই হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ভেতরে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায়। এ বিষয়গুলো শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের থেকে আসেনি, এসেছে নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকেও, যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মধ্যে রয়েছে। যদিও অনুতাপের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয়, লিঙ্গ ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নেই। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমাজ গঠনে এখানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

আরকাদিউজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সংস্কারে উৎসাহ, যারা সংস্কারে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠনমূলক সহযোগিতা করে ইইউ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের উল্টো পথে যাত্রা করছে, তখন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের আশা করার অবকাশ রয়েছে। গণতন্ত্রের পথে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সামনে দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করি। এটি এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।’

১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করে। এ সময়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।

এ ছাড়া প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরও পরিদর্শন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ