উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৮টি সহজ ঘরোয়া উপায়
Published: 23rd, June 2025 GMT
১. তরমুজ খান
তরমুজে থাকে সিট্রুলিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, যা শরীরে গিয়ে আর্জিনিন নামক আরেকটি পদার্থে রূপান্তরিত হয়। এই আর্জিনিন শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনে সহায়তা করে। আর নাইট্রিক অক্সাইড হলো একটি গ্যাস, যা রক্তনালিকে শিথিল করে এবং রক্তপ্রবাহ উন্নত করে, ফলে রক্তচাপ কমে যায়। তরমুজ যেকোনো সময় খেতে পারেন, তবে সকালের নাশতায় খেলে বেশি উপকার পাবেন।
২.খাবারে শাকসবজি যোগ করুন
প্রায় সব ধরনের শাকসবজিই উচ্চ রক্তচাপের জন্য ভালো। কারণ, এসবে ক্যালরি থাকে খুব কম। অন্যদিকে শাকসবজিতে থাকে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম, যা শরীরের সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্তনালিকে শিথিল করে। একটি উদাহরণ দিই, পালংশাকে নাইট্রেট থাকে, যা রক্তপ্রবাহ ভালো করে রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রচুর শাকসবজি খান।
৩. বাদাম ও বীজ খানপেস্তা, আখরোট, তিসির বীজ ও কুমড়ার বীজে আছে ফাইবার ও আর্জিনিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, যা শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে সাহায্য করে। নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাস রক্তনালিকে শিথিল করে। প্রতিদিন একমুঠো লবণহীন বাদাম বা বীজ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। তবে বাদামে ক্যালরি বেশি থাকে, তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো।
৪. বিট খাওয়ার অভ্যাস করুনবিটে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট থাকে, যা শরীরে গিয়ে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। এই নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালিকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্তচাপ কমে। তাই ঘরোয়াভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বিট খেতে পারেন। তবে দ্রুত ফল পেতে চাইলে চিনি ছাড়া বিট জুস খাওয়াই ভালো।
আরও পড়ুনপ্রতিদিন বিটরুট খেলে পাবেন ৬টি অবিশ্বাস্য উপকার৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪৫. ফ্যাটযুক্ত মাছ খানফ্যাটযুক্ত মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা শরীরের প্রদাহ কমায় এবং রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। প্রতি সপ্তাহে কয়েকবার প্রায় ১০০ গ্রাম ফ্যাটযুক্ত মাছ খেলে হৃৎস্বাস্থ্যের উপকার হতে পারে। তবে এ ধরনের মাছের উপকারিতা আরও বেশি পাবেন, যখন সেসব ঝলসে নেবেন সামান্য অলিভ অয়েল ও মসলা দিয়ে। আপনি নিরামিষভোজী হলে আখরোট, তিসিবীজ, চিয়া সিডও হতে পারে ভালো বিকল্প।
৬. সাইট্রাসযুক্ত ফল খানকমলা, লেবু, মাল্টা, জাম্বুরা—এসব সাইট্রাস ফলে থাকে ভিটামিন ও উদ্ভিজ্জ যৌগ, যা হৃৎস্বাস্থ্যে সহায়ক। প্রতিদিন চারটি কমলার সমপরিমাণ সাইট্রাসযুক্ত ফল খেলে রক্তচাপ কমবে। চাইলে পানিতে সাইট্রাসের ফালি দিয়ে সতেজ পানীয় বানিয়েও খেতে পারেন। তবে আপনি যদি রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন; কারণ, জাম্বুরা ও জাম্বুরাজাতীয় গ্রেপফ্রুট কিছু কিছু ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুনবয়স ত্রিশের পর গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নাকি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ০৭ আগস্ট ২০২৪৭. হাঁটুনরক্তচাপ কমাতে যোগব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটিও অত্যন্ত উপকারী। যদিও এসব সকালে খালি পেটে করা সবচেয়ে ভালো, তবে আপনি আপনার সুবিধামতো যেকোনো সময় করতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে অবশ্যই সেটা নিয়মিত করতে হবে এবং অন্যান্য জীবনযাপনসংক্রান্ত অভ্যাস ও ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, ছোট ছোট পরিবর্তনও বড় পার্থক্য গড়ে তোলে।
সতর্কতাএসব ঘরোয়া উপায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেওয়া ওষুধের বিকল্প নয়। রক্তচাপের ওষুধ কখনোই নিজ নিজে হঠাৎ বন্ধ করবেন না। আবার কিছু কিছু খাবার ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপযুক্ত না-ও হতে পারে, তাই খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সূত্র : এমএসএন
আরও পড়ুনহার্ট অ্যাটাকের ৬টি লক্ষণ এবং হার্ট অ্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন২৪ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ইট র স শ কসবজ র পর ম উপক র
এছাড়াও পড়ুন:
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ১০০ কোটি ডলার জরিমানা করলেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের জরিমানা দাবি করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, ২০২৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লস অ্যাঞ্জেলেস ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনের পক্ষে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় ইহুদিবিদ্বেষী আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। আর এর জন্যই এমন জরিমানা দাবি করা হয়েছে।
সম্প্রতি একই ধরনের অভিযোগে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়েছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যে পরিমাণ জরিমানা দিতে রাজি হয়েছে, তার পাঁচ গুণ বেশি জরিমানা করা হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এই পরিমাণ অর্থদণ্ড দিতে হলে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ব্যবস্থায় ‘একেবারে ধস’ নেমে আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় নিয়মিত শীর্ষ স্থানে থাকা ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিমধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসনের টানাপোড়েন চলছে। শুধু ইউসিএলএতেই ট্রাম্প প্রশাসনের ৫০ কোটি ডলার মূল্যের চিকিৎসা ও বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণা অনুদান আটকে রাখা হয়েছে।ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক ইউসিএলএ-সহ মোট ১০টি ক্যাম্পাস রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট জেমস মিলিকেন সব কটি ক্যাম্পাসের তত্ত্বাবধান করে থাকেন।
মিলিকেন বলেন, গতকাল শুক্রবার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ১০০ কোটি ডলারের জরিমানা দাবির বিষয়ে জানতে পেরেছে এবং তা পর্যালোচনা করছে।
মিলিকেন আরও বলেন, ‘একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা করদাতাদের অর্থের রক্ষক। এত বিপুল পরিমাণ জরিমানা দিতে হলে আমাদের দেশের সেরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ব্যবস্থাটি একেবারে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়বে। আর তা আমাদের শিক্ষার্থীসহ সব ক্যালিফোর্নিয়াবাসীর জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ প্রযুক্তি ও জীবন সুরক্ষাকারী চিকিৎসাপদ্ধতির জন্য ইউসিএলএ এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ব্যবস্থার কাজের ওপর নির্ভর করে। এসব কাজের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয় এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে সুরক্ষিত রাখে।
গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের জরিমানা প্রসঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ডের একজন সদস্যও। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নিউসম বলেন, ‘আমরা মামলা করব।’ তিনি অভিযোগ করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট একাডেমিক স্বাধীনতাকে দমন করার চেষ্টা করছেন।
নিউসমের মতে, ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি বলে বিবেচিত হওয়ার কারণ এখানেই অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের তুলনায় বেশি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও নোবেলজয়ী আছেন। আর এর জন্য ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ব্যবস্থাকে কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ট্রাম্প সরকার জরিমানার অর্থ কিস্তিতে আদায় করতে চাইছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা একটি তহবিলে ১৭ কোটি ২০ লাখ ডলার দিতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি শিক্ষার্থী ও বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ তোলা শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ওই তহবিল নেওয়া হবে।
সম্প্রতি একই ধরনের অভিযোগে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে যে পরিমাণ জরিমানা দিতে হয়েছে, তার তুলনায় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত জরিমানার পরিমাণ পাঁচ গুণ।যুক্তরাষ্ট্রের সেরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় নিয়মিত শীর্ষ স্থানে থাকা ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিমধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসনের টানাপোড়েন চলছে। শুধু ইউসিএলএতেই ট্রাম্প প্রশাসনের ৫০ কোটি ডলার মূল্যের চিকিৎসা ও বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণা অনুদান আটকে রাখা হয়েছে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ হয়। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউসিএলএ পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তাঁবু স্থাপন করে অবস্থান নেন ও বিক্ষোভ করেন। পুলিশের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালায়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।’
ট্রাম্প জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিশানা করছেন।
আরও পড়ুনকলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের চুক্তি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বিপজ্জনক নজির০২ আগস্ট ২০২৫