ময়মনসিংহ নগরে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করছে প্রতারক চক্র
Published: 23rd, June 2025 GMT
রাস্তা থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে আনা হয় অথবা কৌশলে সম্পর্ক তৈরি করে নেওয়া হয় কোনো বাসায়। এরপর নারীর সঙ্গে বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও ধারণ করে জিম্মি করা হয়। ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় টাকা।
সম্প্রতি এ ধরনের চক্রের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে ময়মনসিংহ নগরে। চলতি মাসে পৃথক ঘটনায় ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এতে আলোচনায় এসেছে চক্রটির তৎপরতা।
এ সম্পর্কে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের অপতৎপরতা রোধে আমরা তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছি। ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা তথ্য দিলে আমরা তাঁদের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করব।’ বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমও।
চলতি মাসের ২ জুন নগরের মাসকান্দা এলাকা থেকে প্রাইভেট কারের চালক স্বপন মিয়াকে অস্ত্রের (চাকু) মুখে তুলে নিয়ে যায় একটি দল। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁকে নগরের আকুয়া গরুখোঁয়াড় মোড়ের একটি ফ্ল্যাটে নেওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে এক নারীর সঙ্গে তাঁর ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়। এরপর সেগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। একপর্যায়ে স্বপন মিয়া স্ত্রীকে ফোন করে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা এনে দেন। এরপর ছাড়া পান স্বপন।
এ ঘটনায় ৩ জুন রাতে নগরের আকুয়া বোর্ডঘর এলাকার বাসিন্দা মো.
এক মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ি গ্রামের আবদুল হকের ছেলে শওকত হোসেন (৩৪)। তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন ১৪ হাজার রিয়াল। মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে এক মেয়ের পরিচয় হয়। সেই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাঁর সব অর্থ খোয়া গেছে।
গত শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ময়মনসিংহ নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় আটাআনী পুকুরপাড় এলাকায় একটি বাসায় আসায় আটকে রেখে মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শওকত হোসনকে ইয়াবা ও নারীর সঙ্গে ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়। সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও রাখা হয়। বিদেশি মুদ্রার পাশাপাশি সঙ্গে ১১ হাজার টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে আরও ২০ হাজার টাকা আদায় করে তাঁকে ছেড়ে দেয় চক্রটি। পরে শওকত হোসেন থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। শনিবার রাতেই পুলিশ ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে খলিলুর রহমান ওরফে সজল মিয়াকে (২৪) আটক করে। পরে গতকাল রোববার পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতিসহ ছয়টি মামলা রয়েছে কোতোয়ালি মডেল থানায়।
নগরের বিভিন্ন এলাকায় এই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় থাকলেও অনেকে ভয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন না। তাঁদের একজন জেলার ত্রিশাল উপজেলার দড়িকাঁঠাল গ্রামের আল আমিন (২৮)। ১৬ জুন তিনি এ রকম ‘ফাঁদে’ পড়েছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক বন্ধুর মাধ্যমে নগরের এক নারীর সঙ্গে কথা হয়। সেই সুবাদে ১৬ জুন বিকেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই। নগরের গুলকিবাড়ী এলাকার একটি ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর একটি কক্ষে এক নারীকে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে দেওয়া হয়। এরপর দুই যুবক ভেতরে ঢুকে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। তাঁরা সেগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মারধর শুরু করেন। তাঁরা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে এক বন্ধুর মাধ্যমে বিকাশে ৫ হাজার টাকা ও ব্যাংকের এটিএম কার্ডে থাকা ১০ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার পর আমাকে ছেড়ে দেয়।’
আল আমিন বলেন, ‘ওই চক্রের সদস্যরা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গেলে ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেবেন। তাঁরা আমার পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর রেখেছেন। সেখানেও পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এই ভয়ে থানায় অভিযোগ করতে যাইনি।’
সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি নিরাপদ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের নিয়মাবলি জানা জরুরি। একই সঙ্গে ফ্ল্যাটগুলো যেন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত না হয়, সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।সাঈদ ইসলাম, নাগরিক সংগঠন ময়মনসিংহ ফোরামের কো–অর্ডিনেটরএ সম্পর্কে নাগরিক সংগঠন ময়মনসিংহ ফোরামের কো–অর্ডিনেটর সাঈদ ইসলাম বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে হানি ট্র্যাপ ফাঁদা খুব সহজ হয়ে গেছে। নারী সান্নিধ্যে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে জিম্মির প্রবণতা গোটা সমাজকাঠামোকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। একদিকে অবক্ষয়, অন্যদিকে লোভ অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে ফেলছে। সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি নিরাপদ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের নিয়মাবলি জানা জরুরি। একই সঙ্গে ফ্ল্যাটগুলো যেন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত না হয়, সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কাজ করছে সরকার: ফরিদা আখতার
জনগণের পছন্দের একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সুষ্ঠ ও সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন এবং সংস্কারের লক্ষ্যে যেসব উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যে নির্ধারিত তারিখ ঘোষিত হয়েছে; তার মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে।”
শনিবার (২১ জুন) সকালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা ও গবেষণা পরিকল্পনা প্রণয়ন শীর্ষক আঞ্চলিক কর্মশালায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
বিবিসিকে অধ্যাপক ইউনূসের সাক্ষাৎকার
আওয়ামী লীগ ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা
উন্নয়ন প্রকল্প যেন প্রকৃতির ক্ষতি না করে: প্রধান উপদেষ্টা
ফরিদা আখতার বলেন, “নিরাপদ ফিড করা গেলে অনিরাপদ মাছের সংখ্যা কমে যাবে। সে লক্ষ্যেই মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।”
বিএফআরআই-এর মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. রফিকুল ইসলাম সরদার, মৎস্য অধিদপ্তর ময়মনসিংহের বিভাগীয় পরিচালক নৃপেন্দ্র নাধ বিশ্বাস। এর আগে অতিথিরা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
ঢাকা/মিলন/মাসুদ