মব সৃ‌ষ্টি ক‌রে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে হেনস্তার ঘটনায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ব‌লে‌ছেন,“এ ঘটনায় একটা মামলা হয়েছে, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করবে।স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিশ্চয়ই আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।”

সোমবার (২৩ জুন) সচিবালয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তি‌নি এসব কথা ব‌লেন।

তি‌নি ব‌লেন, “মব জাস্টিস যেটা ঘটল, মবের জন্য এটা ঘটল, সেটার জন্য আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আবারও বলছি, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে।”

পুলিশের সামনে এ ধরনের ঘটনা-জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটা বক্তব্য শুনেছেন, সরকার বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। একটু আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন মব সৃষ্টির জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব।”

কেন মব বন্ধ করা যাচ্ছে না-এ বিষয়ে তিনি বলেন, “এখানে আত্ম-বিশ্লেষণের একটা জায়গা আছে। আমরা কিন্তু একটা আদর্শ পরিবেশে দায়িত্বভার গ্রহণ করিনি। আমাদের ইস্যুভিত্তিক কাজ করে যেতে হচ্ছে। প্রতিটি বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা যেখানে যাচ্ছি সব জায়গায় বলে যাচ্ছি, আমরা সব বিষয় অ্যাড্রেস করছি। আশা করছি রাষ্ট্র সহনশীলতা ও কার্যকরি উপায়ের সমন্বয়ে আইনের শাসনের দিকে এগিয়ে যাবে।”

পুলিশ কী এখনো মনোবল ফিরে পায়নি-এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “আমি বলছি না পুলিশ মনোবল ফিরে পায়নি। অনেক জায়গায় আপনি দেখেছেন পুলিশ অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে। তবে আমরা একটা আদর্শ পরিস্থিতিতে দায়িত্বভার গ্রহণ করিনি বরং দেশটাকে আদর্শ করার জন্য আমাদের সবসময় কাজ করতে হচ্ছে। আমি বলব পুলিশ আরো বেশি সক্রিয় হবে। তবে সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ কারো নেই।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স বর ষ ট র র উপদ ষ ট ব যবস থ র জন য পর ব শ গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কথা কি রাষ্ট্র ভাববে না

দেশের নজরুলসংগীতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র শবনম মুশতারি সম্বন্ধে একদিন ফলাও করে খবর বেরোল—কাউকে চিনতে পারছেন না তিনি! জানা গেল, তিনি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত।

একই সমস্যায় আক্রান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সহধর্মিণীও। প্রধান উপদেষ্টা এক টিভি সাক্ষাৎকারে খুব আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘আমাকে ছাড়া সে আর কাউকেই চেনে না। আমি চলে গেলে তার কী হবে!’ এ দুটি উদাহরণ সমাজের সচ্ছল ও আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার কাছাকাছি মানুষের। বাস্তবতা হলো, ডিমেনশিয়ার কবলে আজ সব শ্রেণি-পেশা ও শহর থেকে অজপাড়াগাঁয়ের প্রবীণ জনগোষ্ঠী।

এমন চেনা-অচেনা লক্ষকোটি মানুষ সারা পৃথিবীব্যাপী ভুগছেন মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত সমস্যা ডিমেনশিয়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সাল পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে ডিমেনশিয়ার সঙ্গে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৫৭ মিলিয়ন, যার মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বসবাস করছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

সর্বশেষ গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, দেশের বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর ৮ শতাংশ ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন—অর্থাৎ প্রতি ১২ জন বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর একজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ডিমেনশিয়া হলো পৃথিবীব্যাপী সব মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে সপ্তম প্রধান কারণ। সারা পৃথিবীতে এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশেও ডিমেনশিয়ার প্রকোপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

ডিমেনশিয়া যেহেতু স্মৃতিশক্তি এবং স্বাভাবিক চিন্তা ও আচরণ করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়, তাই এ নিয়ে রয়েছে প্রচুর ভ্রান্ত ধারণা বা কলঙ্ক (স্টিগমা)। বেশির ভাগ মানুষই মনে করে যে এটি মতিভ্রম কিংবা উন্মাদ হয়ে যাওয়ার একটি ধরন। কেউবা একে অতীন্দ্রিয় শক্তির কালো ছায়া কিংবা পাপের ফল হিসেবে গণ্য করে।

এর ফলে এদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি থাকে অদ্ভুত ধরনের, যার বেশির ভাগই নেতিবাচক। এর কারণে বেশির ভাগ পরিবারই তাদের আপনজনের এ ধরনের সমস্যার কথা যত দিন পারেন, গোপন রাখেন। আর এ বিলম্বের ফলে অসামান্য ক্ষতি হয়ে যায় ডিমেনশিয়ার সঙ্গে বসবাসকারী ব্যক্তিদের। এ বিলম্বে মস্তিষ্কের ক্ষয় আরও বেড়ে যায়। বেশির ভাগ ডিমেনশিয়ার সঙ্গে বসবাসকারী ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবার যাপন করতে থাকেন এক অসহনীয় জীবন।

বাস্তব অভিজ্ঞতায় প্রায়ই দেখা যায় যে সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের অবহেলায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান বিপুল ধনসম্পত্তির মালিক হয়েও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত অনেক ব্যক্তি। শিকার হন নির্যাতনের। রাজধানী ঢাকারই এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে চিনি, যাঁর একমাত্র পুত্র দিনের পর দিন এক ফোঁটা জল পর্যন্ত মুখে না দিয়ে তিলে তিলে মেরেছে নিজ পিতাকে। অন্য সন্তানেরা দূর থেকে কেবল চেয়ে চেয়ে দেখেছে, আর বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাননি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে ডিমেনশিয়াকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে প্রাধান্য দিতে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর অন্তত ৭৫ শতাংশ রাষ্ট্রকে ২০২৫ সালের মধ্যে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ ও এর যত্ন সম্পর্কিত রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছিল।

কিন্তু এ পর্যন্ত মাত্র ২৫ শতাংশ সদস্যরাষ্ট্র ডিমেনশিয়া নীতিমালা প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছে বা করেছে। বাংলাদেশে এ–সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা প্রণয়নে এখনো এগিয়ে আসা হয়নি। যেহেতু আমাদের দেশে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে এবং এর সঙ্গে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাও, তাই এর সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আর্থিক চাপও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রায়ই দেখা যায়, এ জনগোষ্ঠীর সামাজিক, আর্থিক ও আইনগত অধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হয়। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো এ জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তাদের শেষ দিনগুলোকে আরামদায়ক করে তোলা।

বাংলাদেশে প্রণীত হয়েছে প্রবীণ নীতিমালা, পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, মানসিক স্বাস্থ্য আইন ও নীতিমালা। রয়েছে দুর্বল ও অসহায় জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী নিশ্চিত করার নানা আইনকানুন ও নীতিমালা। কিন্তু এসবের কোনোটিতেই ঠাঁই হয়নি ডিমেনশিয়া ও এর সঙ্গে জড়িত আলঝেইমারসহ অন্যান্য ধরনের ডিমেনশিয়া–সংক্রান্ত জটিলতায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের সুরক্ষার কোনো বিধান। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩-তে ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার সুরক্ষার কথা বললেও বলা হয়নি বার্ধক্যজনিত অক্ষমতায় ভোগা ব্যক্তিদের সুরক্ষার কথা।

সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক যে জটিল ৬টি রোগের জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়, সেখানে নেই তৃতীয় পর্যায়ে উপনীত হয়ে, স্মৃতিশক্তিসহ চিন্তা করার সব শক্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক সব ধরনের সক্ষমতা হারিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য দিন গোনা ডিমেনশিয়ার সঙ্গে বসবাসকারী ব্যক্তিদের সুরক্ষার কথা।

আরও পড়ুনকেন কফিশপে দেখা যায় না শুধু দুজন বয়স্ক দম্পতিকে ০৩ অক্টোবর ২০২১

অথচ ডিমেনশিয়ার পারিবারিক, আর্থিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ উল্লিখিত ৬টি রোগের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়; বরং বেশিই। তাই সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান—বার্ধক্যে উপনীত হওয়া সব ব্যক্তির মধ্যে সবচেয়ে অসহায় এ অংশটিকে সব ধরনের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নিয়ে এসে তাদের শেষ দিনগুলোতে পাশে দাঁড়ানোর।

এবার আসি আইনগত সুরক্ষার কথায়। বাস্তব অভিজ্ঞতায় প্রায়ই দেখা যায় যে সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের অবহেলায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান বিপুল ধনসম্পত্তির মালিক হয়েও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত অনেক ব্যক্তি। শিকার হন নির্যাতনের। রাজধানী ঢাকারই এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে চিনি, যাঁর একমাত্র পুত্র দিনের পর দিন এক ফোঁটা জল পর্যন্ত মুখে না দিয়ে তিলে তিলে মেরেছে নিজ পিতাকে। অন্য সন্তানেরা দূর থেকে কেবল চেয়ে চেয়ে দেখেছে, আর বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাননি।

এখানে যেমন আছে আইনের শাসনের অভাব, তেমনি আছে আইনেরও নানা সমস্যা। যেমন সন্তানের অবহেলা বা নির্যাতনের কারণে কোনো পিতার মৃত্যু হলে সেই সন্তান কি পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন কি না—প্রচলিত বার্ধক্য বিষয়ক আইনে এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বিধান নেই।

এ ক্ষেত্রে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় উপাদানের আলোকে বিচার এবং ফৌজদারি অপরাধের প্রমাণ সাপেক্ষে উত্তরাধিকার বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত প্রদানের এখতিয়ার রাখে। এ বিষয়ে প্রচলিত আইনে সুস্পষ্ট বিধান এনে সংশোধনীর সুপারিশ করছি। একজন ডিমেনশিয়ার সঙ্গে বসবাসকারী ব্যক্তি যেহেতু তার যৌক্তিক চিন্তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, এ ক্ষেত্রে তাঁর সম্পত্তির বিষয়ে মানসিক স্বাস্থ্য আইনে কিছুটা বলা হলেও তাঁর চিকিৎসার সিদ্ধান্ত ও অক্ষমতা-পরবর্তী চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ নিয়ে কোনো সুরক্ষা আইনে স্পষ্ট নিশ্চিত করা হয়নি।

ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির ভরণপোষণ, যত্ন ও চিকিৎসা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে শুরু হয় পারস্পরিক দায় চাপানোর প্রবণতা—কে নেবে এ দায়! শেষমেশ কোনো এক সন্তানকেই হয়তো মানবিক বিবেচনায় গ্রহণ করতে হয় পিতার বা মাতার সার্বিক ভার।

দেওয়ানি আইনে পিতার মৃত্যুর পর তাঁর যেকোনো দেনা ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যয় সন্তানের দেনা হিসেবে বর্তায় এবং তা পিতার সম্পত্তি থেকে ব্যয় করা আইনত বাধ্যতামূলক। এর আলোকে পিতার ব্যয়ভার যদি এক সন্তান বহন করেন, সে ক্ষেত্রে এ ব্যয় কেন অন্য সন্তানদের ওপর পিতার দেনা হিসেবে বর্তাবে না? এ বিষয়ে পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইনে স্পষ্ট ধারা সন্নিবেশ করা একান্ত জরুরি।

ডিমেনশিয়ার সঙ্গে বসবাসকারী ব্যক্তিরা তাঁদের সোনালি যৌবনের মেধা, শক্তি, সামর্থ্য একসময় এ দেশের কল্যাণেই ব্যয় করেছেন। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে দিয়েছেন অনেক কিছু। এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁদের মৌলিক সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে আইনগত ও আর্থসামাজিক সুরক্ষায় নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

ইমদাদুল হক তালুকদার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কথা কি রাষ্ট্র ভাববে না