সরাসরি: ন্যাটোর হেগ সম্মেলন: থাকছেন কারা? আলোচ্যসূচিতে প্রধান্য কীসে কীসে
Published: 24th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও একাধিক ইউরোপীয় দেশের নেতারা এই সপ্তাহে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে এই সম্মেলন হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান থাকা অবস্থায় ও ন্যাটো জোটে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে। সেই সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ, যেখানে ঢুকে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।
দ্য হেগ শহরে দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন শুরু হচ্ছে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ জুন)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো এতে অংশ নিচ্ছেন। নেদারল্যান্ডসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ন্যাটোর নবনিযুক্ত মহাসচিব মার্ক রুটে এই প্রথমবারের মতো সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন।
সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সদস্য দেশগুলোর যৌথ প্রতিরক্ষার জন্য ব্যয়ের পরিমাণ- একটি বিতর্কিত ইস্যু, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, প্রতিরক্ষা খাতে যুক্তরাষ্ট্র অত্যধিক অর্থ ব্যয় করছে, অন্য সদস্যদেরও তাদের ব্যয় বাড়াতে হবে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়া বারবার ইসরায়েলকে আশ্বস্ত করেছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না: পুতিন
ইউক্রেনের রাজধানীতে রাশিয়ার ভয়াবহ হামলা
তবে সম্প্রতি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত; যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হয়েছে; এই সম্মেলনের আলোচনার ওপর ছায়া ফেলতে পারে। ২৩ জুন কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান; একদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইসরায়েল ও ইরান একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, তবে তার ঘোষণার পরও হামলা-পাল্টা হামলার খবর রয়েছে।
কে কে অংশ নিচ্ছেন ন্যাটো সম্মেলনে?
দুই দিনের এই সম্মেলনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকলেও মূল পর্ব হবে ২৫ জুনের ‘নর্থ আটলান্টিক কাউন্সিল’ সভা, যেখানে রাষ্ট্রপ্রধানরা নিরাপত্তা ব্যয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন।
৩২টি ন্যাটো সদস্য দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা এবং ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ
জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ
নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফ
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন দেয়ার লায়েন অথবা ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা
যেসব ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে, তারা হলেন:
আলবেনিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, গ্রিস, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মন্টিনিগ্রো, উত্তর মেসিডোনিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া এবং সুইডেন।
সাধারণত একটি এশীয় মিত্র রাষ্ট্রের দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যার মধ্যে রয়েছে: জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ড।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এবং নিউজিল্যান্ডের ক্রিস্টোফার লাক্সন ইতোমধ্যেই উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ন্যাটো নেতারা কি ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে আলোচনা করবেন?
ইসরায়েল ও ইরানের চলমান সংঘাত নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে ন্যাটো সম্মেলনে। শুক্রবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র জানান, ন্যাটো সদস্যরা এই সংঘাত নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা করবেন, তবে কোনো সামরিক পরিকল্পনা থাকবে না, তা নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
শুক্রবার ইউরোপের তিনটি জনবহুল দেশ জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ এড়াতে একটি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে আলোচনা করেছে।
আর কী কী থাকছে আলোচ্যসূচিতে?
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ন্যাটোর অর্থায়ন।
ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ন্যাটো সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে এবং এবারের সম্মেলনেও এটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
ন্যাটো সদস্যরা বহুবার উল্লেখ করেছে যে, রাশিয়াই তাদের সবচেয়ে বড় হুমকি এবং তারা ইউক্রেনের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ অর্থায়ন করেছে।
ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ২০২৪ সালের ন্যাটো সম্মেলনে মিত্ররা ঘোষণা করেছিল, “ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ন্যাটোর মধ্যেই” এবং তারা ইউক্রেনকে বার্ষিক কমপক্ষে ৫০ বিলিয়ন ইউরো নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে ১২ জুন বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের আগে ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা প্রদান অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, “আমরা নিশ্চিত করতে চাই, ইউক্রেন রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চলমান লড়াই টিকিয়ে রাখতে সক্ষম এবং যখন কোনো দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তি হবে, তখন যেন ইউক্রেন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকে, যাতে করে পুতিন আর কখনো এমন কিছু করার সাহস না পায়।”
যদিও ইউক্রেন এখনো ন্যাটোর সদস্য নয়, দেশটি বহুদিন ধরেই সদস্যপদের আশা করে আসছে। ২০০৮ সালে ন্যাটো ঘোষণা করেছিল, ইউক্রেন অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, আইনগত ও রাজনৈতিক কিছু শর্ত পূরণ করলে তাকে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হবে। সদস্য হলে ইউক্রেন ন্যাটোর ধারা ৫-এর আওতায় আসবে। এই ধারা অনুযায়ী, যেকোনো সদস্য রাষ্ট্রের ওপর হামলা হলে তা পুরো জোটের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য হবে এবং সম্মিলিতভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ন্যাটোতে ইউক্রেনের সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি রাশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এবং এটি রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। রাশিয়া মনে করে, ন্যাটোর এমন বিস্তার সরাসরি তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
তবে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে ন্যাটো জোটের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যেমন: এস্তোনিয়া ইউক্রেনের সদস্যপদ এবং অধিক সামরিক সহায়তার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে, অন্যদিকে হাঙ্গেরি অনেকাংশে মস্কো-ঘেঁষা হিসেবে বিবেচিত। পোল্যান্ডের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইউক্রেনীয় শরণার্থী এবং ইউরোপীয় সম্পর্ক ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়।
অন্য কিছু দেশ মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। তারা সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ইউক্রেনকে অতিরিক্ত সহায়তা দিতে দ্বিধাগ্রস্ত। রাশিয়া নিয়মিত হুমকি দিয়ে বলছে, ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া হলে ন্যাটো সদস্যরাও সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কতটা পাবে তা আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারে যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তার প্রচেষ্টা যুদ্ধবিরতিতে গিয়ে পৌঁছায়নি। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির হোয়াইট হাউস সফরে ট্রাম্পের রূঢ় আচরণও এই সম্পর্কের টানাপোড়েনকে প্রকাশ করেছে।
প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়
প্রতিটি সদস্য দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) একটি নির্দিষ্ট শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর বিষয়টিও বড় একটি আলোচ্য ইস্যু।
২০২৩ সালে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করে, তখন ন্যাটো নেতারা ঘোষণা দেন, ২০২৪ সালের মধ্যে সদস্য দেশগুলোকে তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে হবে, যা পূর্বের ১.
এখন পর্যন্ত ২২টি সদস্য রাষ্ট্র এই লক্ষ্য পূরণ করেছে, কিন্তু বেলজিয়াম, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, মন্টিনিগ্রো, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া ও স্পেন এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।
ন্যাটো মিত্ররা ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনার মুখে পড়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, জোটটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল। তিনি দাবি করেছেন, অন্যান্য সদস্যদের তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো উচিত।
বর্তমানে ন্যাটোর বার্ষিক ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের ব্যয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাই ১৫.৮ শতাংশ প্রদান করে। ট্রাম্প আরও প্রশ্ন তুলেছেন, যে দেশগুলো এই ব্যয় লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে না, তাদের জন্য ন্যাটোকে রক্ষা করা আদৌ উচিত কি না।
মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো দূত ম্যাথিউ হুইটাকার সাংবাদিকদের বলেন, “৫ শতাংশই আমাদের লক্ষ্য। আমরা আমাদের মিত্রদের বলছি, তারা যেন প্রকৃত অর্থেই প্রতিরক্ষায় বিনিয়োগ করে।”
এই চাপের ফলে ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে সম্ভবত সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানাবেন ২০৩২ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করার জন্য একটি নতুন লক্ষ্য নির্ধারণে। এর মধ্যে প্রায় ১.৫ শতাংশ পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে ‘সফট খাতে’ ব্যয়ের জন্য, যেমন অবকাঠামো ও সাইবার নিরাপত্তা। তবে স্পেনের মতো কিছু দেশ এই বৃদ্ধিকে অবাস্তব বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে, মার্ক রুটে সদস্য দেশগুলোকে অস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন বাড়ানোর জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ১২ জুন এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও কানাডাজুড়ে অসাধারণ প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, কিন্তু তারা দ্রুত গতিতে উৎপাদন করছে না। তাই আমাদের প্রয়োজন আরো বেশি শিফট, আরো বেশি উৎপাদন লাইন।”
ইতিমধ্যে কিছু সদস্য দেশ প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
এই মাসের শুরুতেই যুক্তরাজ্য দেশটিকে ‘যুদ্ধ প্রস্তুতির’ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। তাদের স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স রিভিউয়ে (এসডিআর) নতুন পারমাণবিক ওয়ারহেড, সাবমেরিনের নতুন বহর এবং গোলাবারুদ উৎপাদনের নতুন কারখানায় বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বর্তমান ২.৩ শতাংশ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে ২.৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং পরবর্তী পার্লামেন্টে (২০২৯ সালের পর) ৩ শতাংশে উন্নীত করার ‘আকাঙ্ক্ষা’ প্রকাশ করেছে, তবুও আরো বাড়ানোর কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা এখনো প্রকাশ করেনি।
ন্যাটোর ওপর ইউরোপীয় নেতৃত্ব
যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র ফাইনান্সিয়াল টাইমস মার্চে জানায়, ইউরোপীয় দেশগুলো ক্রমেই নেতৃত্ব গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠছে। কারণ, তাদের শঙ্কা, ট্রাম্প হঠাৎ একতরফাভাবে ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিতে পারেন।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও নর্ডিক দেশগুলো জোটের অর্থনৈতিক কাঠামো পুনর্গঠনের বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক কিন্তু গঠনমূলক আলোচনায় লিপ্ত ছিল, যাতে ইউরোপীয় ব্যয়ের অংশ বেশি প্রতিফলিত হয়। তারা আশা করেছিল সম্মেলনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা যাবে।
যদিও ট্রাম্প সরাসরি বলেননি, ন্যাটো ছেড়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ওয়াশিংটনের অপ্রচ্ছন্ন মনোভাব দেখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমন একটি শঙ্কা থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে আলোচনায় ইইউর পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা উত্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতোমধ্যেই ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র জিডিপির ৩.১৯ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করেছে, যা এক দশক আগের ৩.৬৮ শতাংশ থেকে কম। সেই সময়ই সকল সদস্য দেশ রাশিয়ার ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখলের পর ব্যয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
ফাইনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সামরিক সক্ষমতা পূরণ করতে হলে আরো পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়বে।
ঢাকা/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ য ক তর ষ ট র য ক তর জ য ইসর য় ল ইউক র ন য ক তর ষ ট র র ইউক র ন র প র ইউক র ন য দ ধ য ক তর জ য সদস য দ শ ইউর প য ন র পর আম দ র র জন য প রস ত লক ষ য আল চ য সহ য ত করব ন র ওপর ইসর য অবস থ চলম ন গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
শুল্ক থেকে কত রাজস্ব পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কী হবে সেই অর্থ দিয়ে
এমন কোনো দিন নেই, যেদিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গর্ব করে বলেন না—তিনি প্রায় সব ধরনের আমদানি পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় করছে।
প্রচুর অর্থ আসছে—দেশের ইতিহাসে এত অর্থ আগে কখনো আসেনি, শুক্রবার শুল্ক রাজস্বের প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ভুল বলছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত জুলাই মাসে মার্কিন সরকার প্রায় ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলার শুল্ক রাজস্ব সংগ্রহ করেছে; গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় যা ২৪২ শতাংশ বেশি।
এপ্রিল মাসে প্রায় সব ধরনের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি পরবর্তী মাসগুলোতে আরও কিছু উচ্চ শুল্ক কার্যকর হয়। বাস্তবতা হলো, তখন থেকে জুলাই পর্যন্ত সরকার মোট ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার শুল্ক রাজস্ব সংগ্রহ করেছে—গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি। প্রশ্ন হলো—এই বিপুল অর্থ সরকার কোথায় ব্যয় করছে?
ট্রাম্প দুটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন। প্রথমত, সরকারের লাখ লাখ কোটি ডলারের ঋণ শোধ করা ও আমেরিকানদের হাতে ‘ট্যারিফ রিবেট চেক’ বা শুল্কছাড়ের চেক (শুল্ক রাজস্ব সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া) তুলে দেওয়া।
গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, তিনি যা করছেন তার মূল উদ্দেশ্য ঋণ শোধ করা; অঙ্কের দিক থেকে তা বেশ বড়ই হবে। কিন্তু তাঁর মনে হয়, এত বেশি অর্থ আসছে যে মানুষকে হয়তো লভ্যাংশ দেওয়া যাবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত দুটোর কোনোটি-ই ঘটেনি। অনেক আমেরিকানের মনে হতে পারে, বিদেশি পণ্য আমদানির প্রথম ধাক্কাটা সামলাতে গিয়ে যে অর্থ মূলত মার্কিন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর পকেট থেকে বেরোচ্ছে, সেই শত শত কোটি ডলার শুল্ক রাজস্বের গায়ে হয়তো শুধু ধুলো জমছে।
সরকার যে রাজস্ব সংগ্রহ করে—তা হোক সাধারণ কর থেকে কিংবা শুল্ক থেকে—সবই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগের নিয়ন্ত্রিত সাধারণ তহবিলে জমা হয়। তারা এই তহবিলকে বলে ‘আমেরিকার চেকবই’, কারণ, সেখান থেকেই সরকারের খরচ মেটানো হয়, যেমন কর ফেরত দেওয়া।
যখন রাজস্বের পরিমাণ সরকারের খরচের চেয়ে কম হয়, অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি দেখা দেয়, তখন সরকার ঋণ নিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করে। বর্তমান সরকারের ওপর মোট ঋণের পরিমাণ ৩৬ ট্রিলিয়ন বা ৩৬ লাখ কোটি ডলারেরও বেশি। এই ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে। অনেক অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলছেন, এই ঋণের বোঝা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়ে দিচ্ছে।
যেভাবে একজন সাধারণ আমেরিকান ঋণ নিলে সুদ দেন, সেভাবে সরকারকেও ঋণের ওপর সুদ দিতে হয়। যত বেশি ঋণ, তত বেশি সুদ। ফলে মহাসড়ক উন্নয়ন বা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার মতেো অর্থে টান পড়ে।
বর্তমান অর্থবছরে মার্কিন সরকারের ১ দশশিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে এই শুল্ক রাজস্ব যথেষ্ট নয়। তবে এটাও সত্য, শুল্ক বাবদ প্রাপ্ত অর্থের কারণে ঘাটতির অঙ্ক কিছুটা কমেছে। অর্থাৎ শুল্ক রাজস্ব না থাকলে যতটা ঋণ নিতে হতো, এখন সরকারকে ততটা নিতে হচ্ছে না।
ডয়েচে ব্যাংকের সিনিয়র মার্কিন অর্থনীতিবিদ ব্রেট রায়ান বলেন, এই অর্থের আরও ভালো ব্যবহারের সুযোগ আছে, বিষয়টি এমন নয়। বাজেট ল্যাব অ্যাট ইয়েলের পরিচালক ও বাইডেনের হোয়াইট হাউসের সাবেক অর্থনীতিবিদ আর্নি টেডেস্কির মতে, যদি কংগ্রেস ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে শুল্ক রাজস্ব ‘রিবেট চেক’ আকারে জনগণকে ফেরত দেয়, তাহলে ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে রিপাবলিকান সিনেটর জশ হাওলি বিল পেশ করেছেন। তিনি বলেন, এটা এখন অনুসরণ করার মতো নীতি নয়, বরং এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ বিষয়ে সিএনএনের প্রশ্নের জবাব দেয়নি হোয়াইট হাউস।
বুমেরাং হতে পারেকাগজে-কলমে শুল্ক রাজস্বের কল্যাণে সরকারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলেও এর প্রভাব সব সময় ভালো হয় না। বেশির ভাগ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এখনো বাড়তি খরচ নিজেরা বহন করছে, দাম বাড়াচ্ছে না। সব ব্যবসার ক্ষেত্রে তা আবার প্রযোজ্য নয়। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, খেলনা, ভোক্তা ইলেকট্রনিকসের দাম বাড়ছে। মূল্যস্ফীতিবিষয়ক মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে তা দেখা গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান, যেমন ওয়ালমার্ট ও প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, আরও দাম বৃদ্ধির সতর্কতা দিয়েছে।
শুল্কসংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন কর্মী নিয়োগ স্থগিত করেছে। ফলে চাকরির সুযোগ কমছে—এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে বেশ কিছু অর্থনৈতিক জরিপ।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ‘শুল্ক মার্কিন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ ইয়েল বাজেট ল্যাবের হিসাব অনুযায়ী, ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাবে এ বছর ও আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আধা শতাংশ কমে যাবে।
এতে শুল্ক রাজস্বের একটি অংশ হারিয়ে যাবে; কেননা, যদি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে কম গতিতে হয়, তাহলে শুল্ক রাজস্ব থাকলেও আয়কর ও বেতন কর থেকে পাওয়া অর্থ কমে যাবে।
ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছে। তাঁদের যুক্তি, সদ্য কার্যকর হওয়া বিশাল কর ছাড় ও ব্যয় বিলের সঙ্গে শুল্ক রাজস্ব মিলিয়ে মার্কিন অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সময়ের পরিক্রমায় তা হবে।