চিকুনগুনিয়া ফিরে আসার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) চলতি মাসে রক্তের ৮২ শতাংশ নমুনায় চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করেছে। তবে এ ব্যাপারে সরকারের মধ্যে একটি গা ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত বছরের শেষ দিকে চিকুনগুনিয়ার বড় উপস্থিতি গবেষকদের চোখে ধরা পড়ে। আইসিডিডিআরবির রোগনির্ণয় কেন্দ্রে গত বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মধ্যে ২৮৯টি নমুনা পরীক্ষার মধ্যে ১৪৯টিতে চিকুনগুনিয়ার সন্ধান পায়। অর্থাৎ ২৮৯ জনের মধ্যে ৫২ শতাংশই ছিল চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা তখনই রোগটির বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
চিকুনগুনিয়া মশার মাধ্যমে ছড়ায়। বর্ষাকালের শেষের দিকে বা বর্ষা মৌসুম শেষ হলে চিকুনগুনিয়ার বিস্তার বেশি হতে দেখা যায়। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ৬৭ শতাংশ মানুষের পিঠ বা শরীরের পেছন দিকে ব্যথা অনুভূত হয়, ৬২ শতাংশ মানুষ মাথাব্যথার কথা বলেন। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে মানুষের গিঁটে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হয়, তীব্র ব্যথার সঙ্গে পেশি শক্ত হয়ে যায়, ব্যথা ছাড়াও পেশি শক্ত হয়ে যায়, অস্থিসন্ধি নাড়ানো কঠিন হয় বা নাড়াতে গেলে তীব্র ব্যথা হয়, গোড়ালির রগে প্রদাহ হয়। বেশি অসুস্থ হলে স্নায়ুজনিত কিছু সমস্যাও দেখা দেয়। ঠিক চিকিৎসা হলে ৮৮ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
চিকিৎসকেরা জানান, চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে আরও কিছু জ্বরের বেশ মিল আছে। যেমন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, রিউমেটিক ফিভার, মেনিনজাইটিস। মৎস্যজীবীদের মধ্যে দেখা যায়, এমন রোগ লেপটোসপাইরোসিসের সঙ্গে এর কিছুটা মিল আছে।
প্রবণতা বাড়তির দিকে
আইসিডিডিআরবির সংক্রমণ রোগ বিভাগের বিজ্ঞানী মোহাম্মদ শফিউল আলম ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ল্যাবরেটরির নমুনা পরীক্ষায় আমরা যে ফলাফল দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার ঝুঁকি আছে। গত বছরের শেষ দিকে এবং গত দুই মাসের ফলাফল বলছে, বহু মানুষ এই রোগে ভুগছেন বা ভুগবেন।’
মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, ১ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত আইসিডিডিআরবির রোগনির্ণয় কেন্দ্রে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে এসেছেন এমন ১৭১ রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষায় ১৪০ জনের চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ শনাক্তের হার ৮২। এই হার অত্যন্ত বেশি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি তাঁদের পরীক্ষাগারে ৩৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৩ জনের চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৫। তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়ায় শনাক্ত হওয়া এই হার অনেক বেশি, চিন্তারও কারণ।
দেশে ব্যাপকভাবে চিকুনগুনিয়া দেখা দিয়েছিল ২০১৭ সালে। ওই বছর ঢাকাতেই ১৩ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছিল; আর চিকুনগুনিয়া ছড়িয়েছিল ২৩টি জেলায়। এরপর তা কমতে থাকে। তবে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলে আসছেন, চিকুনগুনিয়া আবার প্রবলভাবে ফিরে আসতে পারে। কবে আসবে সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত নন।
মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গত বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আইসিডিডিআরবির রোগনির্ণয় কেন্দ্রে ৫২ শতাংশ নমুনায় চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়। এ বছরের জানুয়ারিতেও ২৬ শতাংশ নমুনায় তা ধরা পড়ে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে কোনো নমুনায় চিকুনগুনিয়া শনাক্ত না হলেও এপ্রিল মাসে তা আবার ধরা পড়ে। এপ্রিল মাসে ২৯ শতাংশ নমুনায় এবং মে মাসের ৬৪ শতাংশ নমুনায় চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়।
এ ছাড়া গত বছর করা আইসিডিডিআরবির অন্য একটি গবেষণায় ৫৫ জন চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এ তথ্য আইসিডিডিআরবির পক্ষ থেকে সরকারকে জানানো হয়েছিল।
সরকারি ও বেসরকারি দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, চিকুনগুনিয়ায় অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তবে চিকুনগুনিয়ার তথ্য সংগ্রহের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সরকারের নেই। তাই চিকুনগুনিয়ায় কত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তা জানা যাচ্ছে না।
গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আবু হোসেন মো.
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত। তারা ডেঙ্গু মোকাবিলায় নতুন একটি কমিটিও করেছে। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সারা দেশে মশা বেড়েছে। ডেঙ্গুও বাড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঠিক মশার কারণেই চিকুনগুনিয়াও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।
জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চিকুনগুনিয়ায় মানুষের ভোগান্তি অনেক বেশি হয়। এ ভোগান্তি এড়াতে মশা নিধন করতে হবে, মশা থেকে দূরে থাকতে হবে। ডেঙ্গু পরীক্ষার পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া ও জিকা পরীক্ষার সুযোগ–সুবিধাও বাড়ানোর ওপর সরকারকে জোর দিতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণেও জোর দিতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইস ড ড আরব র প রথম আল ক গত বছর পর ক ষ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পর্যটকে পরিপূর্ণ কুয়াকাটা
দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটির তৃতীয় দিন শুক্রবার (৩ অক্টোবর) পর্যটকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে পটুয়াখালীর পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা। ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের তিন নদীর মোহনা, লেম্বুর বন, শুটকি পল্লী, ঝাউবাগান, গঙ্গামতি, চর গঙ্গামতি ও লাল কাঁকড়ার চড়ে এখন পর্যটকদের সরব উপস্থিতি। তাদের নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগত পর্যটকরা সৈকতের বালিয়াড়িতে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। তাদের অনেকে সমুদ্রের ঢেউয়ে গা ভিজিয়ে এবং ওয়াটর বাইকে চড়ে আনন্দ করছেন। অনেকে আবার সৈকতের বেঞ্চিতে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। পর্যটকদের কেউ কেউ মোটরসাইকেল কিংবা ঘোড়ায় চরে বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখছিলেন। সব মিলিয়ে সৈকতের উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
আরো পড়ুন:
চার দিনের ছুটিতে কক্সবাজার রুটে চলবে ‘ট্যুরিস্ট স্পেশাল’ ট্রেন
১ অক্টোবর থেকেই কেওক্রাডং যেতে পারবেন পর্যটকরা, মানতে হবে ৬ নির্দেশনা
পাবনা থেকে আসা হোসেন শহীদ ও সোনিয়া দম্পতি জানান, পূজা ও সরকারি ছুটি থাকায় তারা কুয়াকাটায় এসেছেন। সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করেছেন তারা। এই দম্পতির অভিযোগ, হোটেল ভাড়া কিছুটা বেশি রাখা হয়েছে।
বরিশালের কাউনিয়া থেকে আসা সম্রাট বলেন, “কয়েকটি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখেছি। বৃহস্পিতবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে লাল কাকড়ার চড়, গঙ্গামতি ও লেম্বুর বন ঘুরেছি। দারুন এক অনুভূতি হয়েছে।”
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, “পর্যটকদের নিরপত্তা নিশ্চিতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য মোতায়েন রয়েছে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ