মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হালিম খান নামে এক ইতালি প্রবাসীর লাশ ফেলে পালিয়ে গেছেন দ্বিতীয় স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকালে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নিহত হালিম রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের নগর গোয়ালদি গ্রামের মৃত হাজী বালা উদ্দিনের ছেলে। 

আরো পড়ুন:

ভাড়াটিয়ার ধাক্কায় বাড়িওয়ালার মৃত্যু, আটক ৩

ঝিনাইদহে ভ্যানচালককে হত্যায় ৪ জনের যাবজ্জীবন

পুলিশ ও নিহতের পারিবার জানায়, চার বছর আগে রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের উত্তর দারাদিয়া গ্রামের সোমেদ চৌকিদারের মেয়ে রেশমা বেগমকে বিয়ে করেন হালিম। এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। এরপর হালিম ইতালি চলে যান। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবা সোমেদ চৌকিদারকে ৬০ লাখ টাকা দেন। ইতালি থেকে আসার আগে হালিম নিজের জন্য মোটরসাইকেল কিনতে টাকা পাঠান। সেই মোটরসাইকেল রেশমা বেগমের ভাই সবুজ চৌকিদারের নামে কেনা হয়। 

দেশে ফিরে পাওনা টাকা ও মোটরসাইকেল ফেরত চান হালিম। এ নিয়ে হালিমের সঙ্গে রেশমা বেগম ও শ্যালকসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কথা-কাটাকাটি হয়। গতকাল সোমবার (২৩ জুন) রাতে শ্বশুর বাড়িতে ডেকে নিয়ে তারা হালিমকে পিটিয়ে ও গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগ পরিবারের। 

তাদের দাবি, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকালে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য হালিমকে নিয়ে যান দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজন। চিকিৎসক হালিমকে মৃত ঘোষণা করলে লাশ ফেলে পালিয়ে যান রেশমা বেগম ও শ্বশুর বাড়ির সবাই।

নিহত হালিম খানের মেয়ে হিমু আক্তার বলেন, “আমার বাবাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমার বাবার মাথার পিছনে ও সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।”

নিহতের ভাই আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, “হালিমের ৯ বছরের কামাইয়ের সব টাকা ওই নারীর কাছে ছিল। অনেক শখ করে সে একটা মোটরসাইকেল কিনেছিল, সেটিও তার শ্যালক নিয়ে গেছে। এসব কিছু নিয়ে রাতে হালিমের সাথে ঝামেলা হইছিল। সকালে পুলিশ খবর দিল, আমার ভাইয়ের লাশ উদ্ধার হইছে। তার মাথা ও সারা শরীরে আঘাতের দাগ আছে। এভাবে পিটিয়ে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানাই।”

রাজৈর থানার ওসি মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, “লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। জানতে পেরেছি, স্ত্রী ও শাশুড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক হালিমকে মৃত্য ঘোষণা করেন। তারা লাশ রেখেই পালিয়ে যান। ঘটনাটি সন্দেহজনক। আইনগত ব্যবস্থা নিতে মরদেহটি ময়নাতদন্তে জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালের
মর্গে পাঠানো হয়েছে।”

ঢাকা/বেলাল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য অভ য গ র জ র উপজ ল পর ব র র

এছাড়াও পড়ুন:

চা খেতে এক লাখ টাকা করে চাওয়া শুরু করেছে দুদক, অভিযোগ হাসনাতের

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতুর কাছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তা ঘুস চেয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদের এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?’

মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ দাবি করেন হাসনাত। ওই পোস্টের সঙ্গে তিনি তিনটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করেছেন।

‘স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা’ শিরোনামে পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘আপনার নামে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে এক লাখ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে থেকে এই টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার আর তার ডিডি পরিচয়ে। মাহমুদা মিতুকে বলা হয় আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকা-পয়সার অভাব থাকার কথা না। আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।’

তিনি লেখেন, ‘দুদকের সর্বনিম্ন রেট নাকি এক লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকতার আবার ফোন দিয়ে জানতে চান টাকা দেবে কি না? টাকা না দিলে নাকি খবর করে ছেড়ে দেওয়া হবে। রেড ক্রিসেন্টে মাহমুদা মিতু যোগ দিয়েছেন ৫ আগস্টের পরে। দুদক এখন তদন্ত করছে আওয়ামী লীগের সময়ের দুর্নীতি নিয়ে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অথচ হাস্যকরভাবে আওয়ামী আমলের কর্মকর্তাদের নাম না দিয়ে তখনকার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এখনকার লোকজনের ওপর। এখানে বড় অঙ্কের টাকার লেনদেনের সমূহ সম্ভাবনা আছে। কিছু না করাদের কাছে থেকেই যদি এক লাখ করে নেয়, আওয়ামী লীগ আমলের কর্মকর্তাদের থেকে তাহলে কত করে নিয়েছে?’

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, ‘দুদকের এসব কাজকারবার এই প্রথম না। শেখ হাসিনার আমলে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকে এরা হয়রানি করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে এরা কিছুই বলেনি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আসেনি। বরং এরা এখন চা খাওয়ার জন্য এক লাখ করে টাকা চাওয়া শুরু করেছে। মাহমুদা মিতু সাহস করে ভিডিও করে রেখেছেন, অন্যায় ঘুস দেন নাই। কিন্তু কত সাধারণ মানুষ এদের এই চায়ের বিল দিতে বাধ্য হয়েছে জানা নেই।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার- মাহমুদা মিতু কেন, যদি আমার নামেও এক পয়সা দুর্নীতির অভিযোগ আসে, সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিন। কাউকে ফোন করারও দরকার নেই, দুর্নীতি পেলেই সেগুলো প্রকাশ করে মামলা করে দেন। আইনের হাতে তুলে দেন। তা না করে নিরীহ লোকজনের ওপরে এই চাঁদাবাজি কেন করছেন? কেন চা খাওয়ার বিল চান, কেন টাকা না দিলে হুমকি দেন? ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই।’

হাসনাত বলেন, ‘শেখ হাসিনার করে যাওয়া দুর্নীতির পথে যেন আর কেউ না যেতে পারে সেজন্য দুদককেও আমরা নতুন রূপে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নতুন বাংলাদেশেও দুদক সেই পুরোনো পথেই হাঁটা শুরু করেছে। আমলাতন্ত্র আবারও বিষদাঁত নিয়ে কামড় বসাতে হাজির হয়েছে। এই বিষদাঁত ভাঙতে না পারলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন হেরে যাবে, আমরাও হেরে যাবো। আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদের এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?’

সম্পর্কিত নিবন্ধ