বন্দরে এক রাতে দুই খুনের পর পুরুষ শুন্য এলাকা, গ্রেপ্তার ১১
Published: 24th, June 2025 GMT
বন্দরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের বিরোধের জের ধওে এক রাতে দুই খুনের পর পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে ২২ নং ওয়ার্ডের হাফেজিবাগ এলাকা।
সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ দিকে এ ঘটনায় বন্দর থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা হয়েছে।
নিহত আবদুল কুদ্দুসের (৬৫) মেয়ে রোখসানা আক্তার বাদী হয়ে একটি এবং বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মেহেদী হাসান হত্যার ঘটনায় তার ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ বাদী হয়ে অপর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বন্দর থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, রাজমিন্ত্রী আব্দুল কুদ্দুস হত্যা মামলায় সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারকে প্রধান আসামী করে বাবু ওরফে জুয়াড়ি বাবুসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের মেয়ে রোখসানা আক্তার।
মেহেদী হাসান হত্যার ঘটনায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০ জনকে আসামী করে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয় ৬ জনকে।
এদিকে ঘটনার তিনদিন পর মঙ্গলবার হাফেজিবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। পুরুষ শুন্য পুরো এলাকা। নারী ও শিশুদের মাঝে বিরাজ করছে আতংক।
নিহত কুদ্দুসের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী পারভীন আক্তার জানান, তার স্বামী রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। তিনি নিরাপরাধ, কোন ঝুট ঝামেলায় নাই। অথচ তাকে কুপিয়ে হত্যা করে বাবু-মেহেদীর লোকেরা। তিনি স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি জানান।
নিহত মেহেদী হাসানের বাড়িতে কথা হয় তার ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ সঙ্গে। তিনি জানান, তার ভাই বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার ভাইকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে রনি-জাফরের লোকজন। তিনি তার ভাইয়ের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার ,অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল এবং নানা বিষয় নিয়ে ৫ আগষ্টের পর থেকে ওই এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপ রনি-জাফর ও বাবু-মেহেদী গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
এ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধ আরও চরম আকার ধারণ করে। গত শুক্রবার রাতে তাদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৮ জন আহত হয়।
গত শনিবার রাত ৯ টার দিকে বন্দর বাসস্ট্যান্ডে রনি জাফর গ্রুপের পারভেজের বাবা রাজমিস্ত্রী আব্দুল কুদ্দুসকে(৬৫) কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। কুদ্দুস হত্যাকান্ডের আড়াই ঘন্টার মধ্যে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেহেদী হাসানকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: হত য ন র য়ণগঞ জ ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
এলাকায় থমথমে অবস্থা, আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধের জেরে দুজন নিহতের পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ আছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে বন্দর শাহী মসজিদ এলাকায় ও রাত সাড়ে ১১টায় হাফেজীবাগ এলাকায় দুজন নিহত হন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব।
নিহত দুজন হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের হাফেজীবাগ এলাকার আবদুল কুদ্দুস (৭০) ও বন্দর শাহী মসজিদ এলাকার প্রয়াত আবদুল জলিলের ছেলে মেহেদী হাসান। আবদুল কুদ্দুস পেশায় রাজমিস্ত্রী ও মেহেদী হাসান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি মাছ ব্যবসায়ী বলে স্বজনেরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো এলাকা থমথমে অবস্থা। আতঙ্কে এলাকার লোকজন দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় বিপুলসংখ্যক র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের আতঙ্কে অধিকাংশ বাড়ির পুরুষ এলাকাছাড়া।
স্থানীয় ফল বিক্রেতা ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও অস্ত্রের মহড়ায় আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে তাঁর দোকানের আম ও কাঁঠাল পচে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। বিবদমান দুই পক্ষ আগে একসঙ্গে থাকত বলে তিনি জানান।
দুপুরে হাফেজীবাগ এলাকায় নিহত আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা আহাজারি করছেন। নিহত আবদুল কুদ্দুসের স্ত্রী পারভীন বেগম বলেন, গত শুক্রবার রাতে তাঁর স্বামী পাখির খাবার কিনতে দোকানে গেলে সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারের সমর্থক বাবু–মেহেদীসহ ৪০ থেকে ৫০ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেন। তিনি স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান।
অন্যদিকে বন্দর শাহী মসজিদ এলাকার মেহেদী হাসানের বাড়িতে মাতম চলছে। মেহেদী হাসান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। মেহেদীর ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, তাঁর ভাই মেহেদীকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসী রনি–জাফরের লোকজন। তিনি তাঁর ভাইয়ের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের রেললাইন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষ বাবু–মেহেদী ও রনি–জাফর পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়।
আরও পড়ুননারায়ণগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একজনকে কুপিয়ে হত্যা১১ ঘণ্টা আগেপুলিশ ও এলাকার বাসিন্দারা জানান, পূর্ববিরোধের জেরে শুক্রবার বিকেলে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার জেরে গতকাল রাতে জাফরের সমর্থক পারভেজের বাবা আবদুল কুদ্দুসকে কুপিয়ে হত্যা করেন প্রতিপক্ষ বাবু–মেহেদীর লোকজন। এ ঘটনার জেরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বন্দর সিরাজুদ্দৌলার ক্লাব মাঠের সামনে বাবু–মেহেদী পক্ষের মেহেদীকে আটকে গণপিটুনি ও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন রনি–জাফর পক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনায় হাফেজীবাগ এলাকা থেকে শান্ত (২৫), রবিন (২৮) ও কবির হোসেনকে (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে র্যাব।
সকালে পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মারামারির ঘটনায় করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় জড়িত অন্য ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।