নাটোরের সিংড়ায় ইটভাটা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় শেরকোল ইউনিয়নের কংশপুর গ্রামে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ফসল, গাছপালা ও শাক-সবজির ক্ষতিপূরণ চান কৃষকরা।
বক্তারা বলেন, ২০১১ সালে ফসলি জমি ও বসতির মধ্যে মেসার্স এমবিকে ব্রিকস্‌ নামে ইটভাটা গড়ে তুলেছেন সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ বিজয় কুণ্ডু। পাশেই ২০১৩ সালে আগপাড়া শেরকোল বন্দরহাট এলাকায় তিন ফসলি জমিতে এমএসপি নামে আরেকটি ইটভাটা গড়ে তোলেন স্থানীয় আব্দুল বারী। দুই ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে আশপাশের শত শত বিঘা জমির বিভিন্ন রকম ফসল নষ্ট হয়েছে। শতাধিক বাড়ির আঙিনার ফল গাছে ফল ধরে না। ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে কংশপুর জামে মসজিদের শতবর্ষী তেঁতুলগাছ পুড়ে গেছে। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে বাঁচতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেও কাজ হয়নি। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এমবিকে ইটভাটা থেকে গ্যাস ছাড়া হয়। এতে ফসল, শতবর্ষী গাছ মারা গেছে। ভাটার মালিক প্রভাবশালী। সবাই মুখ খুলতে ভয় পান। ক্ষতিপূরণ চাইলেও হুমকিধমকি দেওয়া হয়। আমরা এর প্রতিকার চাই। 
ইটভাটার সহকারী ম্যানেজার আল আমিন বলেন, আমাদের ইটভাটার কারণে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। আরেক ভাটার ম্যানেজার সজীব কুণ্ডু বলেন, কয়েক দিন আগে ভাটার গ্যাস ছাড়া হয়েছে। এতে গাছপালার সামান্য ক্ষতি হয়েছে। 
মেসার্স এমবিকে ব্রিকসের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা বিজয় কুণ্ডু বলেন, যেদিন ভাটার গ্যাস ছাড়া হয় সেদিন রাতে নিম্নচাপ ছিল। এ কারণে কৃষকদের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। ভাটার পাশের কিছু গাছের পাতা ও সবজি মরে গেছে। এটা তাঁর অজান্তেই ঘটেছে। 
কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ বলেন, ভাটা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরও সংকট কাটিয়ে উঠতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জানান, কৃষকদের অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর-নাটোরের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এমবিকে ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইটভ ট ইটভ ট এমব ক

এছাড়াও পড়ুন:

তানোরের শতবর্ষী খেলার মাঠ রক্ষায় ভূমিসচিবসহ ১৩ জনকে আইনি নোটিশ

রাজশাহীর তানোর উপজেলার শতবর্ষী গোকুল-মথুরা খেলার মাঠ রক্ষায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৩ জনকে লিগ্যাল (আইনি) নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন) বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্না রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

ভূমিসচিব ছাড়া আরও যাঁদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, রাজশাহীর পরিচালক ও সহকারী পরিচালক; শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী; জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং গোকুল–মথুরা দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মথুরা মৌজায় এই খেলার মাঠটি আরএস খতিয়ানে জমির শ্রেণি হিসেবে স্পষ্টভাবে ‘খেলার মাঠ’ উল্লেখ রয়েছে। পরিমাণ ১ একর ৬ শতাংশ। মালিক হিসেবে লেখা আছে ‘গোকুল-মথুরা ফুটবল ক্লাবের সেক্রেটারি’। গোকুল-মথুরা দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও গোকুল-মথুরা প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুব গোপনে পুরো মাঠের মালিকানা কাগজপত্রে নিজেদের করে নেয়। যদিও আইন অনুযায়ী এই শ্রেণির জমি অন্য কোনোভাবে ব্যবহার বা হস্তান্তর করার সুযোগ নেই। তারপরও ভুয়া দলিল দেখিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ওই মাঠে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। মাঠ দখল করে মাদ্রাসার ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলে গতকাল সোমবার খননযন্ত্রের (ভেকু) সামনে শুয়ে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুনজালিয়াতি করে শতবর্ষী খেলার মাঠ দখলের চেষ্টা, ভবন নির্মাণের সময় মাটিতে শুয়ে বাধা২৩ জুন ২০২৫

বেলার লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, মাঠটি এলাকার বহুল ব্যবহৃত একটি উন্মুক্ত স্থান। পাশের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ এলাকার স্থানীয় শিশু-কিশোর ও তরুণ-যুবকেরা নিয়মিত এ মাঠে খেলাধুলা করে থাকেন এবং এখানে প্রায় দুই শ পঞ্চাশের অধিক বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়েছে। এ ছাড়া মাঠে জানাজা, ঈদের জামাত, ইসলামি মাহফিল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদ্‌যাপন, শরীরচর্চা, মৌসুমি ধান মাড়াইয়ের কার্যক্রম হয়ে থাকে। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই খেলার মাঠের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে।

নোটিশে আরও বলা হয়, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ‘খেলার মাঠ’ হিসেবে চিহ্নিত কোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। ‘খেলার মাঠ’ হিসেবে রেকর্ডভুক্ত ভূমিকে ‘খেলার মাঠ’ হিসেবে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারা আইন বাস্তবায়ন বা প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে নোটিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ব্যর্থতার পরিচায়ক।

শ্রেণি পরিবর্তনসম্পর্কিত সব কার্যক্রম অনতিবিলম্বে বাতিল করে ‘খেলার মাঠ’ হিসেবে যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়ে নোটিশে বলা হয়, এ বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপ নোটিশের মাধ্যমে সাত দিনের মধ্যে বেলার আইনজীবীকে অবহিত করার অনুরোধ করা হয়েছে। তা না হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ