ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে তেলের সঙ্গে সোনার দামও কমে গেছে। সাধারণত এ ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনার দাম বেড়ে যায়। কিন্তু ১২ দিনের এই যুদ্ধের সময় সোনার দাম তেমন একটা বাড়েনি।

গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে স্পট সোনার দাম ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩১৯ দশমিক ৯৬ ডলারে। এমনকি একপর্যায়ে তা ২ শতাংশের বেশি কমে যায়। ফলে মূল্যবান এই ধাতুর দাম ৯ জুনের পর সবচেয়ে নিচে নেমে আসে। মার্কিন গোল্ড ফিউচারসের দাম ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৯ ডলারে চলে আসে।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমেছে, এটাই এখন সোনার দামে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলছে। বিনিয়োগকারীরা এখন নিরাপদ সম্পদ ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের দিকে যেতে চাইছে।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩০০ ডলারের আশপাশে থাকা ভালো, এই দামে বেচাকেনা বাড়বে। দাম ৩ হাজার ২৫০ ডলারে নেমে এলে তা আরও ভালো। এই দামে বেচাকেনা আরও বাড়বে।

এদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর গতকাল বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে যদিও মার্কিন ডলারের দাম কমেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল কংগ্রেসের শুনানিতে দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, আমদানি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক মূল্যস্ফীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, তা বুঝতে আরও কিছু সময় লাগবে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, চলতি বছরের শেষে মোট ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট সুদ কমতে পারে। এর মধ্যে অক্টোবরেই ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমানো হতে পারে। সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার কম থাকলে সোনার দাম বাড়ে, কারণ, সোনা থেকে সরাসরি সুদ পাওয়া যায় না।

গতকাল রুপার দামও কমেছে। স্পট মার্কেটে রুপার দাম শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে আউন্সপ্রতি ৩৫ দশমিক ৮৩ ডলারে; ৫ জুনের পর যা সবচেয়ে কম। অন্যদিকে প্লাটিনামের দাম বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩১৪ দশমিক ৯১ ডলার, প্যালাডিয়ামের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬১ দশমিক ৯০ ডলার।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারেও সোনার দামের হ্রাস–বৃদ্ধি করা হয়। বিশ্ববাজারে দাম কমে যাওয়ায় গতকাল সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন সোনা ব্যবসায়ীরা। এ দফায় ভরিতে সর্বোচ্চ দাম কমেছে ১ হাজার ৬৬৮ টাকা। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম কমে দাঁড়াবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা। নতুন এই দাম আজ বুধবার থেকে কার্যকর।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ বব জ র র দ ম কম গতক ল দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হলগুলোতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনো ধরনের রাজনীতি করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ঘোষণায় ছাত্রনেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ইতিমধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীদের নানা পর্যায়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি থাকা না–থাকা নিয়ে আলোচনা চলছে।

গত শুক্রবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলে রাজনীতি বন্ধের ওই ঘোষণা দেয়। তবে গতকাল শনিবার দিনভর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। এ বিষয়ে করণীয় ও রূপরেখা ঠিক করতে গতকাল দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হল প্রভোস্টসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক করেছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে আজ রোববার বিকেলে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন তাঁরা।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের জন্য সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। এরপর ওই দিন মধ্যরাতে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ ছাত্র–ছাত্রী বাইরে বেরিয়ে আসেন। রাত একটার দিকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। শুক্রবার রাত দুইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের প্রায় এক ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা হয়। তখন উপাচার্য বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই হল প্রভোস্টের নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রিত থাকবে।’ উপাচার্যের এ বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা ‘না, না’ বলে আপত্তি জানান এবং হলগুলোতে সম্পূর্ণভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করেন। পরে রাত তিনটার দিকে বিক্ষোভের মুখে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ হলগুলোতে ‘প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের আশ্বাসে উল্লাস প্রকাশ করে হলে ফিরে যান। প্রক্টরের ওই ঘোষণার আধঘণ্টা পর স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অফিস থেকে এক প্রজ্ঞাপন আসে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কমিটিভুক্তরা পদত্যাগ ও মুচলেকা প্রদান সাপেক্ষে হলে অবস্থান করতে পারবেন। অন্যথায় তাদের হল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল ছাত্রলীগ। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন পর ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে বিতাড়িত হয় ছাত্রলীগ। সে সময় শিক্ষার্থীরা প্রতিটি হলের হল প্রাধ্যক্ষদের কাছ থেকে আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে—এমন বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর নেয়। মূলত সেই বিজ্ঞপ্তির আলোকে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করায় ক্ষোভ জানায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে শুক্রবার মধ্যরাতে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা হলের তালা ভেঙে বেরিয়ে এসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ