পাগলা কোস্ট গার্ড স্টেশনে অবৈধ কারেন্ট জাল বিক্রি , আটক ৩
Published: 25th, June 2025 GMT
ফতুল্লায় অবৈধভাবে পাগলা কোস্ট গার্ড স্টেশন থেকে অবৈধ কারেন্ট জাল ভর্তি করে ট্রাক নিয়ে বের হতেই স্থানীয় জনতার হাতে আটক হয়েছে চালকসহ ৩জন। এসময় আটককৃতদের উত্তম মাধ্যম দিয়ে ট্রাক ভর্তি জালসহ পুলিশ দিয়েছে জনতা।
বুধবার সকালে ফতুল্লার পাগলা কোস্ট গার্ড স্টেশানের সামনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে এঘটনা ঘটে।
আটকৃতরা হলো- সোনারগাঁও থানার ভরমেসন্ধি গ্রামের আরব আলী ভূইয়ার ছেলে রিফাত ভূইয়া (৩৭), একই থানার আনন্দ বাজার এলাকার বলায় নাথের ছেলে লোকনাথ (২২) ও একই থানার বারদী গ্রামের শামীমের ছেলে ট্রাক চালক সোহাগ (২৫)।
আটক রিফাত ভূইয়া জানান, সোনারগাঁও আনন্দ বাজার এলাকার গুলজার হোসেন সকালে চালক সোহাগের সাথে ট্রাক দিয়ে পাগলা কোস্ট গার্ড স্টেশানে পাঠায়। বলে দেয় কোস্ট গার্ড স্টেশানের অপারেশন অফিসার রাশেদের সাথে দেখা করলে সে কারেন্ট জাল দিবে। সেই জাল নিয়ে সোনারগাঁও আনন্দবাজার যাওয়ার জন্য বলেছেন।
তার কথা মতো অপারেশন অফিসার রাশেদের সাথে দেখা করলে সে পাগলা কোস্ট গার্ড স্টেশানের ভিতরে ট্রাকসহ আমাদের ৩জনকে নিয়ে যায় এবং একটি কক্ষ থেকে কারেন্ট জাল এনে ট্রাক ভর্তি করে বলে চলে যেতে।
সকালে কোস্ট গার্ড স্টেশান থেকে বের হতেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে বেশ কয়জন যুবক তাদের গাড়ি আটক করেন। এরপর চালকসহ ৩জনকে মারধর করে জাল ভর্তি ট্রাকসহ ৩জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই পাগলা কোস্ট গার্ড স্টেশানের কর্মকর্তারা অবৈধ কারেন্ট জাল, ভারতীয় কাপড়, মাছ নদী থেকে আটক করে তা গোপনে বাহিরে বিক্রি করে দেয়। একাধীকবার প্রতিবাদ করা হলেও তারা উল্টো ভয়ভীতি দেখায়।
আজও তারা আটক করা কারেন্ট জাল বাহিরে বিক্রি করছে এমন খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর কোস্ট গার্ড থেকে জাল ভর্তি ট্রাক বের হলে সড়কে এলাকাবাসী তা আটক করে পুলিশে দিয়েছে।
এবিষয়ে গুলজার হোসেন বলেন, পাগলা কোস্ট গার্ড স্টেশানের অপারেশন অফিসার রাশেদ ফোন করে বলেন ৩লাখ টাকা ও ট্রাক পাঠাতে কারেন্ট জাল আছে। তার কথা মত ট্রাকসহ লোক পাঠিয়েছি। সে টাকা রেখে ট্রাকে জাল ভরে দিয়েছে। সেই ট্রাক ভর্তি জাল স্টেশানের বাহিরে কে বা করা আটক করেছে জানিনা।
অপারেশন অফিসার রাশেদ বলেন, সোর্সদের তথ্য মতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ মালামাল আটক করা হয়। আটককৃত মাল থেকে সোর্সদের কমিশন দিতে হয়। সেই কমিশনের মাল গুলজার হোসেনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
এবিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, পাগলা কোস্ট গার্ড স্টেশানের সামনে ট্রাক ভর্তি অবৈধ কারেন্ট জাল আটক করে স্থানীয়রা বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় টহল পুলিশ এগিয়ে গিয়ে তাদের বিক্ষোভের বিষয় জানতে চাইলে স্থানীয় জনতা ট্রাক ভর্তি কারেন্ট জালসহ ৩জনকে পুলিশের হাতে সোর্পদ করেন।
এরপর ৩জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি তারা পাগলা কোস্ট গার্ড স্টেশানের ভিতর থেকে অবৈধ কারেন্ট জাল ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এবিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ অব ধ ক র ন ট জ ল ট র ক ভর ত জ ল ভর
এছাড়াও পড়ুন:
‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে: শফিকুল আলম
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক খুনির বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এই বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেপে করা হবে। কেউ যেন বলতে না পারে, যে নিয়ম না মেনে অবিচার করা হয়েছে।
অতীতে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে দাবি করে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা বিদেশি কনসাল্ট্যান্ট রেখেছি, যাতে কেউ না বলতে পারে যে না উনারা এসে একটা ক্যাঙারু কোর্ট সেটআপ করেছে। আপনারা জানেন আমাদের হিস্ট্রি আছে ক্যাঙারু কোর্ট করার। কতজনকে তাঁরা ফাঁসি দিয়েছেন। আমরা চাই না বাংলাদেশে এ ধরনের ক্যাঙারু কোর্ট। সময় নিচ্ছি একটু। আপনারা ধৈর্য ধরেন, প্রত্যেক খুনির বিচার হবে। কেউ বাদ যাবে না। এটা শহীদদের সঙ্গে আমাদের ওয়াদা।’
উল্লেখ্য, ক্যাঙারু কোর্ট হলো এমন আদালত বা বিচারব্যবস্থা, যেখানে প্রচলিত আইন ও বিচারব্যবস্থার নিয়মকানুনকে উপেক্ষা করা হয় বা সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে না। সাধারণত পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে দ্রুত বিচারকাজ পরিচালনা করে।
আজ রোববার সাভারের আশুলিয়ায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানের আজ ছিল সমাপনী অনুষ্ঠান। সেখানে জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে স্মরণ করা হয়।
ন্যায়বিচার করতে হলে সত্যিকার অর্থে সময় দিতে হবে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৪টি বড় মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, ২৭টি মামলার তদন্ত চলছে। ১৮টি মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয়েছে। ন্যায়বিচার করতে হলে সত্যিকার অর্থে একটু সময় দিতে হবে। আমরা তাড়াহুড়ো করে যদি অন্যায়-অবিচার করি, তাহলে সেটি নিয়ে বাইরে কথা ওঠবে, যে উনারা জোর করে উনাকে (শেখ হাসিনা) ফাঁসি দিচ্ছেন। জোর করে ওনার প্রতি অন্যায় চাপিয়ে দিচ্ছে। আমরা এটা চাই না।’
বাংলাদেশ থেকে রাজতন্ত্রের ইতি টানতে জুলাই যোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা শেখ পরিবারের দাস-দাসী ছিলাম। সেখান থেকে আমাদেরকে মুক্ত করে একটা ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি (গণতান্ত্রিক দেশ) করার জন্য তাঁরা শহীদ হয়েছেন, আত্মদান করেছেন। আমরা সেই জায়গায় যেতে চাই।’
শফিকুল আলম বলেন, জুলাই যোদ্ধারা ভোটের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য শহীদ হয়েছেন। তিনি সবাইকে আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর হবে।
আজকের অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি ও জুলাই যোদ্ধা আবু সাদেক কায়েম। তিনি বলেন, এক বছর পরও বিপ্লবের প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়া, কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া ধীরগতির। এখনো শহীদ পরিবারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি, পুনর্বাসন ও যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘যাঁদের রক্তে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে—এটি রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক। আহত ও পঙ্গুদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।’ পাশাপাশি তিনি খুনি হাসিনার সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মতিউর রহমান আকন্দ।
জুলাই অভ্যুত্থানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ছাত্র শাকিল হোসেন পারভেজ ও ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহ শহীদ হন। আজ শহীদ শাকিলের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে চত্বর উদ্বোধনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। চত্বরটি উদ্বোধন করেন শাকিলের বাবা বেলায়েত হোসেন। এরপর আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর নামে লাইব্রেরি উদ্বোধন করবেন তাঁর মা আসিয়া খাতুন। দুপুর পৌনে ১২টায় দুই শহীদের স্মৃতিতে বৃক্ষরোপণ করা হয়।
১৮ জুলাই লক্ষ্মীপুরে শহীদ শাকিল হোসেন পারভেজের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে পক্ষকালব্যাপী এ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর ছিল টাঙ্গাইলে শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর কবর জিয়ারত, শহীদ ও আহতদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পবিত্র কোরআন বিতরণ, জুলাই বিপ্লবে নারীদের অবদান শীর্ষক সেমিনার, পোস্টার ও রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রক্তদান কর্মসূচি এবং পৃথক ইন্ডোর গেমস প্রতিযোগিতা।