শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে সরে গেলেন আমিনুল গনি
Published: 25th, June 2025 GMT
আদালত অবমাননার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল গনি (টিটু)। তাঁর জায়গায় মো. আমির হোসেনকে এই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানির সময় আমিনুল গনি দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদনে সম্মতি দেন।
শুনানির শুরুতে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর উপস্থিতি জানতে চান। তখন আমিনুল গনি ডায়াসে উঠে দাঁড়ান। ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, ‘আপনি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে থাকতে চান কি না, তা পুনর্বিবেচনা করুন।’
জবাবে আমিনুল গনি বলেন, তিনি মামলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। প্রসিকিউটরের পর যুক্তি উপস্থাপন করতে চান। ট্রাইব্যুনাল তাঁকে বলেন, ‘এই ক্লায়েন্টের (শেখ হাসিনা) ওপর আপনার মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। এখন আপনি তাঁকে ডিফেন্ড (শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে যুক্তি তুলে ধরা) করতে চাচ্ছেন, এটা মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে।’
নিজের যুক্তি তুলে ধরে আমিনুল গনি বলেন, আইনজীবী হিসেবে তিনি যে সৎ, তা তিনি প্রমাণ করতে চান।
এ পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্যের পর শেখ হাসিনার মামলায় আমিনুল গনির রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে থাকার বিষয়টি এথিক্যাল (নৈতিকতার) ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন বলে উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনাল।
এরপর আমিনুল গনি বলেন, এথিক্যালি তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে থাকতে পারেন না। কিন্তু তাঁকে এখানে সম্পৃক্ত করা হলো কেন, এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, বিষয়টি তাঁরা জানতেন না। এ সময় ট্রাইব্যুনাল আমিনুল গনিকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি শেখ হাসিনাকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন?
জবাবে আমিনুল গনি তা স্বীকার করেন। তবে বলেন, তিনি আইনজীবী হিসেবে সৎ, এটা প্রমাণ করার সুযোগ দেওয়া হোক।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, তিনি (আমিনুল গনি) ভালো আইনজীবী। তাঁদের (ট্রাইব্যুনালের) আরও বিষয় আছে। সেখানে তাঁকে (আমিনুল গনি) দরকার হবে।
এরপর আমিনুল গনি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন মঞ্জুর করেন।
পরে আইনজীবী মো.
সম্প্রতি আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে ‘স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল’ (রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী) হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল গনিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ ওঠে, আমিনুল গনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে শেখ হাসিনার ফাঁসি চেয়েছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ উপদেষ্টা টবি ক্যাডম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে মানদণ্ড থাকতে হবে, যাতে তিনি যথাযথ ও স্বাধীনভাবে ট্রাইব্যুনালের সামনে আসামির প্রতিনিধিত্ব করেন।
এর এক দিন পরই আজ শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেন আইনজীবী আমিনুল গনি।
আরও পড়ুনআসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে মানদণ্ড থাকতে হবে: টবি ক্যাডম্যান১৯ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিকাশ অ্যাপে এখন ডিপিএসে জমানো যাবে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা
গ্রাহকদের জন্য মাসিক ডিজিটাল সঞ্চয় বা সেভিংস সেবার পরিধি আরও বাড়িয়েছে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ। এর ফলে এখন থেকে বিকাশ অ্যাপের গ্রাহকেরা ২০ হাজার টাকা কিস্তিতে গ্রাহক সঞ্চয়ী আমানত বা ডিপোজিট পেনশন স্কিম (ডিপিএস) খুলতে পারবেন। আগে এটি সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিকাশ। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকা ব্যাংক ও আইডিএলসি ফাইন্যান্সে ২০ হাজার টাকা মাসিক কিস্তিতে ডিপিএস খোলা যাবে। এর মেয়াদ হবে ছয় মাস।
বিকাশের ডিজিটাল সেভিংস বা সঞ্চয়ী সেবা কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালে। তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্সের মাধ্যমে মাসিক ভিত্তিতে ডিপিএস সেবা চালু হয়। পরবর্তী সময়ে চারটি ব্যাংক এ কার্যক্রমে যুক্ত হয়। আর বিকাশ অ্যাপে সাপ্তাহিক ডিপিএস সেবা চালু হয় ২০২৪ সালের শুরুতে। এ ছাড়া ইসলামি শরিয়াহ অনুসারে সঞ্চয়ের জন্য সিটি ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকের ইসলামিক ডিপিএস সেবাও চালু করেছে বিকাশ। সেবাটি চালু হওয়ার পর বিকাশের গ্রাহকেরা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত ৪০ লাখের বেশি ডিপিএস হিসাব খুলেছেন।
এত দিন ধরনভেদে ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৪ বছর মেয়াদে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমাতে পারতেন গ্রাহকেরা। এখন এই সীমা বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে ২০ হাজার টাকা সঞ্চয়ের মেয়াদ ৬ মাস। বিকাশ জানিয়েছে, যাঁরা নিকট ভবিষ্যতে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে চান, তাঁদের জন্য বেশ কার্যকর ছয় মাস মেয়াদি এই ডিপিএস।
ডিপিএস খোলার পদ্ধতি
নতুন ডিপিএস খুলতে গ্রাহকের বিকাশ হিসাবে প্রয়োজনীয় অর্থ রেখে অ্যাপের হোমস্ক্রিন থেকে ‘সেভিংস’ আইকনে ট্যাপ করতে হবে। এরপর ‘নতুন সেভিংস খুলুন’ অপশনে ক্লিক করে এগোতে হবে। এ পর্যায়ে সেভিংসের ধরন থেকে ‘সাধারণ সেভিংস’ বেছে নিয়ে এবং সেভিংসের মেয়াদ ছয় মাস বাছাই করে প্রতি মাসে যে পরিমাণ টাকা জমাতে ইচ্ছুক, তা নির্বাচন করতে হবে। গ্রাহকেরা ২ হাজার, ৫ হাজার, ১০ হাজার বা ২০ হাজার টাকার ডিপিএস খুলতে পারবেন।
পরের ধাপে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের তালিকা থেকে পছন্দ অনুযায়ী আইডিএলসি ফাইন্যান্স অথবা ঢাকা ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে। এরপর নমিনি–সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ডিপিএসের বিস্তারিত দেখে এবং নিয়ম ও শর্তাবলি ভালোভাবে পড়ে, বুঝে সম্মতি দিতে হবে।
সবশেষে বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর দিয়ে স্ক্রিনের নিচের অংশ ট্যাপ করে ধরে রাখলেই ডিপিএসের আবেদন সম্পন্ন হয়ে যাবে। তখন বিকাশ ও ব্যাংক থেকে চলে আসবে নিশ্চিতকরণ ফিরতি বার্তা। উল্লেখ্য, বিকাশ অ্যাপ থেকে যেকোনো গ্রাহক একাধিক ডিপিএস খুলতে পারেন।
প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিপিএসের টাকা কেটে নেওয়া হয়। ডিপিএসের মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেলে সুদ বা মুনাফাসহ মূল টাকা চলে আসবে গ্রাহকের বিকাশ হিসাবে। এই টাকা কোনো খরচ ছাড়াই ক্যাশআউট করা যায়। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে মেয়াদপূর্তির আগেই সঞ্চয় সেবা বন্ধ করতে পারবেন গ্রাহকেরা।