জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ (ক্ষমতার) ধারা গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দিয়ে ২৮ জুন দলের জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন করতে দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ শীর্ষনেতারা।

তারা বলেছেন, ‘প্রেসিডিয়ামের অনুমোদন ছাড়া কাউন্সিল স্থগিত করা দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও গঠনতন্ত্র বিরোধী পার্টির চেয়ারম্যানের একক স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত। দলকে শক্তিশালী করতে এই ধারা বাদ দিতে হবে এবং সবাইকে নিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউন্সিল করে একটি শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গঠন করতে হবে।’

অন্যদিকে বিশেষ ক্ষমতার এই ধারা বহাল রেখে জিএম কাদেরকে সমর্থন জানিয়ে তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির কাদেরপন্থী মহানগর ও জেলা নেতাকর্মীরা। তারা কাউন্সিলের পরিবর্তে ওইদিন কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।এমনকি কাউন্সিলের পক্ষ অবলম্বনকারী শীর্ষনেতা আনিস-হাওলাদারদের দল থেকে বহিস্কারের দাবি তুলেছেন।তারা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল ও বনানী কার্যালয় নিজেদের দখলে রেখেছেন।

বুধবার (২৫ জুন) দলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশের জেলা ও মহানগর নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

বেলা ১২টায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নেতারা বলেছেন, তারা জাতীয় পার্টির বিষফোঁড়া। পার্টির চেয়ারম্যানকে জিম্মি করে তারা দলকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ থেকে দূরে নিয়ে গেছেন। তারা সবসময় ক্ষমতার রাজনীতি করেছেন। নিজেরা এমপি, মন্ত্রী ও দলের শীর্ষপদ বাগিয়ে নিয়েছেন। ক্ষমতার লোভে এখন তারা দলকে শেষ করতে চান।তাই দলের জন্যই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এসব বিষফোঁড়া কেটে ফেলতে হবে। তাদের দল থেকে বহিস্কার করে জাতীয় পার্টিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। তারা জিএম কাদের এর নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করে মাঠে থাকার ঘোষণা দেন।

এ সময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের জেলা ও মহানগর নেতাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জাতীয় পার্টি নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।এতদিন যারা জাতীয় পার্টি নিয়ে বেচাকেনার রাজনীতি করেছে তারাই ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে আমি আর রাজনীতি করব না। তিনি ত্যাগী নেতাদের উপযুক্ত মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানান।

উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, ইমরান হোসেন মিয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, শেরীফা কাদের, মো.

শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, মনিরুল ইসলাম মিলন, আশরাফুজ্জামান আশু, এসএম ইয়াসির, ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস।

জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সঞ্চালনায় জেলা নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নুরুন্নাহার বেগম, আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, রেজাউল করিম রেজা, রেজাউর রাজী স্বপন চৌধুরী, আহমেদ শফি রুবেল, সারোয়ার হোসেন শাহীন, আনোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলাম স্বপন, আব্দুল কাদের খান কদর, মোস্তফা জামান লিটন, কেফায়েতউল্ল্যোহ নজির, অধ্যাপক মাহসিনুল ইসলাম হাবুল, আনোয়ার হোসের আনু, বশির আহমেদ, মাহমুদুল হক মনি, জাকির হোসেন খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি, মো. মোজাম্মেল হক, সামছুল হক, নাসির আহমেদ খান, মো. হাসান সাঈদ, এএফএম আরিফুজ্জামান দিদার, নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া, নাজমুল হুদা হিমেল, আহমেদ রিয়াজ, জালাল খান, এয়ার আহমেদ সেলিম, জিয়াউল হুদা আপলু, নুরুচ্ছফা সরকার, আবু তাহের, মো. তারেজ, মিথিলা রওয়াজা, শওকত জামান মিশুক, নাফিজ আহমেদ খান টিটু, শাহরিয়ার জামিল জুয়েল, খন্দকার ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ, রবিউল ইসলাম, মো. এমদাদুল হক বাচ্চু, হাজরা শহীদুল ইসলাম বাবলু, শফিকুল ইসলাম মধু, আব্দুল্লাহ আল মামুন।

অন্যদিকে, গঠনতন্ত্রের চেয়ারম্যানের বিশেষ ধারা বাদ দিয়ে ২৮ জুন জাতীয় কাউন্সিল ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো চেয়ারম্যান এবি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।

বুধবার এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা বলেছেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের জাতীয় সম্মেলন বা কাউন্সিলের তারিখ ও স্থান নির্ধারণের পূর্ণ ক্ষমতা প্রেসিডিয়ামের। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের প্রেসিডিয়ামের মতামত বা অনুমোদন ছাড়াই একতরফাভাবে ২৮ জুন নির্ধারিত দশম জাতীয় কাউন্সিল স্থগিত করেছেন।

প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশ চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল পাওয়া না গেলে একই দিনে বিকল্প স্থান হিসেবে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের চত্ত্বরে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেই বিকল্প স্থানেও কাউন্সিল না করে তিনি একক সিদ্ধান্তে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউন্সিল এড়ানোর জন্য সমাবেশ ডাকেন।যা সম্পূর্ণভাবে গঠনতন্ত্র ও দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা যেভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, তা প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক চর্চার অন্তরায়।

তারা বলেন, ‘জাতীয় পার্টির অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য বিশ্বাস করেন, এই ধারা গণতন্ত্রবিরোধী এবং অনতিবিলম্বে সংশোধনের দাবি রাখে।

এই একতরফা সিদ্ধান্তের পিছনে দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য আছে বলে আমরা মনে করি। দীর্ঘদিন ধরে দলের নেতাকর্মীরা দলীয় অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি জানিয়ে আসলেও, চেয়ারম্যান সেই চাহিদা এড়িয়ে যাচ্ছেন। তার সদিচ্ছার ঘাটতি এবং স্বচ্ছতা এড়িয়ে চলার প্রবণতাই আজ দলের গুরুত্বপূর্ণ কাউন্সিল বিলম্বের কারণ বলে আমরা মনে করি।’

তাছাড়া, প্রেসিডিয়ামের একাধিক সদস্যের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল-দলের পুরনো, ত্যাগী, দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতাদের সমন্বয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গঠন করা হোক। কিন্তু একতরফা আধিপত্য বজায় রাখার জন্য চেয়ারম্যান সেই উদ্যোগেরও বিরোধিতা করছেন।এটি অত্যন্ত হতাশাজনক।

জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ-একজন রাষ্ট্রনায়ক, যিনি সর্বদা সংগঠনের ভিতরে গণতন্ত্র, শৃঙ্খলা ও দলীয় ঐক্যের চর্চা করতেন জানিয়ে নেতারা বলেন, তিনি (এরশাদ) বিশ্বাস করতেন, দল চলবে সবার মতামতের ভিত্তিতে এবং নেতৃত্ব আসবে অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আজ তার সেই মহান আদর্শ থেকে বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে—যা আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না।

‘পার্টির চেয়ারম্যান যেন অবিলম্বে একগুয়েমী ও স্বেচ্ছাচারিতার পথ থেকে সরে এসে, পল্লীবন্ধুর আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, অনতিবিলম্বে জাতীয় কাউন্সিলের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন এবং সেই কাউন্সিল প্রেসিডিয়ামের সভা আহ্বান করে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিয়ে যথাসময়ে কাউন্সিল আয়োজনে সহযোগিতা করবেন-আশাবাদ ব্যক্ত করেন দলের দুই শীর্ষনেতা।

জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী এবং গণতান্ত্রিক দল হিসেবে পুনর্গঠনের এটাই উপযুক্ত সময় উল্লেখ করে তারা বলেন, দয়া করে দলকে একক সিদ্ধান্ত, গোপনীয়তা এবং দায়বদ্ধতা বিবর্জিত নেতৃত্বের দিকে নয়-বরং অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা এবং যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে ঐক্যের পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করুন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গঠনতন ত র ক উন স ল র আহ ব ন জ ন ল ইসল ম ম ম হ ম মদ ন ত কর ম ক ষমত র কর ম র বল ছ ন আহম দ দলট র

এছাড়াও পড়ুন:

এসেনসিয়াল ড্রাগসকে আনতে সক্রিয় ডিএসই, মন্ত্রণালয়ে চিঠি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনা অনুযায়ী, সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ (এসওই) বা সরকারি সংস্থা ও কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পিএলসি। এ লক্ষ্যে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা বা চিঠি পাঠিয়ে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানোর কাজ চলছে। ডিএসই আশা করছে, শিগগিরই লাভজনক রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হবে।

এরই ধরাবাহিকতায় সরকারি মালিকানাধীন ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডিসিএল) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ডিএসই। পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দক্ষতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকারের চলমান প্রচেষ্টা বাস্তবায়নে এ উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি এসেনসিয়াল ড্রাগকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে সহায়তা চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।

আরো পড়ুন:

কারণ ছাড়াই বাড়ছে রহিমা ফুডের শেয়ারদর

পিপলস লিজিংয়ের অর্ধবার্ষিকে লোকসান বেড়েছে ১৫.৩৩ শতাংশ

ওই চিঠির অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মকসুদ, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম ও এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আ. সামাদ মৃধা বরাবর পাঠানো হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে নিয়ন্ত্রক বিএসইসি নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে ডিএসই। মূলত সরকারি কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে দফা দফায় চেষ্টা করেও তাদের পুঁজিবাজারে আনা সম্ভব হয়নি। অবশেষে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি গতিশীল করতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে চলতি বছরের ১১ মে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ডিএসইর চিঠি
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম লিখেছেন, দেশের পুঁজিবাজার টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বিষয়টি খুবই প্রয়োজনীয়। এই প্রেক্ষাপটে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানির সম্ভাব্য ইক্যুইটি তালিকাভুক্তি করতে আগ্রহী।

ওষুধ খাতে কোম্পানিটির কৌশলগত ভূমিকা এবং গত দুই দশক ধরে প্রশংসনীয় ব্যবসা বৃদ্ধির রেকর্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটি বিদ্যমান নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অধীনে তালিকাভুক্তির জন্য উপযুক্ত অবস্থানে রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, বর্তমান বিধিমালার আওতায় কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এই ধরনের কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সময়োপযোগী এবং বিভিন্ন দিক থেকে কার্যকর হবে। এই কোম্পানিটির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। যেমন-  কর্পোরেট সুশাসন বৃদ্ধি, বৃহত্তর কর্মক্ষম শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর অংশগ্রহণ সক্ষম করে জনসাধারণের মালিকানা সম্প্রসারণ বৃদ্ধি করবে বলে চিঠিতে জানানো হয়।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, এসেনশিয়াল ড্রাগস একটি উচ্চ-কার্যক্ষমতা সম্পন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির তালিকাভুক্তি পুঁজিবাজারের মানদণ্ড বৃদ্ধি এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ফলে আরও সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে এবং দেশের পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী করবে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যকরণে অবদান রাখবে। এটি সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার ও স্বচ্ছতা এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়নে নেয়া বৃহত্তর উদ্যোগকে শক্তিশালী ও বেগবান করবে।

এসেনশিয়াল ড্রাগসকে সহজ ও কার্যকরভাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি করতে ডিএসই সম্পূর্ণ সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে। ডিএসই মনে করে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এই সময়োপযোগী উদ্যোগ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে, যা এসেনশিয়াল ড্রাগসের অংশীজন এবং জাতীয় অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনবে। তাই এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সুবিধাজনক সময়ে আলোচনায় বসতে আগ্রহী ডিএসই। এ বিষয়ে যে কোনো সহযোগিতা ও ব্যাখ্যার জন্য ডিএসই সদা প্রস্তুত রয়েছে বলে চিঠিতে জানানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা ও এসএমএস দেওয়া হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘`পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তবে ডিএসই এ বিষয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে আলোচনায় বসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’’ 

রাষ্ট্রীয় কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে বিএসইসি ও ডিএসইর উদ্যোগ
গত ৭ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বিশেষ করে দেশের যেসব বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে সরাসরি তালিকাভুক্তির (ডাইরেক্ট লিস্টিং) মাধ্যমে দ্রুত পুঁজিবাজারে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে শিল্প উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

পরবর্তীতে গত ২১ জুলাই রেল ভবনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে বৈঠক করেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। উভয় পক্ষের এ বৈঠকে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লাভজনক ও ভালো কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির পথকে সুগম করতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।

এরই ধরাবাহিকতায় গত ২৪ জুলাই লাভজনক সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ডিএসই।

এরপর গত ২৯ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত বিএসইসি সঙ্গে পুঁজিবাজারের অংশীজনদের তৃতীয় মাসিক সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। সে সময় তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য আমরা কাজ করছি। কিছু সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির তালিকা করে তাদের সঙ্গে বসছি। সরকার এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

পরবর্তীতে গত ৩১ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুসরণে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বৈঠকে সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। একই সঙ্গে দেশের যেসব বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে দ্রুত পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার বিষয়েও আলোচনা হয়।

বিএসইসির দেওয়া তথ্য মতে, ইতোমধ্যে লাভজনক ১৫টি কোম্পানির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো হলো- ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), সাইনোভিয়া (সাবেক স্যানোফি) বাংলাদেশ লিমিটেড, নোভার্টিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড, সিনজেন্টা (বাংলাদেশ) লিমিটেড, নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস্ কোম্পানি লিমিটেড, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন লিমিটেড ও জীবন বীমা কর্পোরেশন লিমিটেড ইত্যাদি।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে মাত্র ২০টি সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এগুলোর বাজার মূলধন ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানিগুলো হলো- এটলাস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিডি সার্ভিস), বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি (বিএসসিসিএল), বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ইস্টার্ন কেবলস, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইবিসি), যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল টিউবস, পদ্মা অয়েল, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রূপালী ব্যাংক, শ্যামপুর সুগার মিলস, তিতাস গ্যাস, উসমানিয়া গ্লাস সিট ফ্যাক্টরি, লিন্ডে বাংলাদেশ  ও জিলবাংলা সুগার মিলস।

ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ