কাদেরপন্থী নেতাকর্মীরা চান বহিষ্কার, কাউন্সিলে অনড় আনিস-হাওলাদারর
Published: 25th, June 2025 GMT
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ (ক্ষমতার) ধারা গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দিয়ে ২৮ জুন দলের জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন করতে দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ শীর্ষনেতারা।
তারা বলেছেন, ‘প্রেসিডিয়ামের অনুমোদন ছাড়া কাউন্সিল স্থগিত করা দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও গঠনতন্ত্র বিরোধী পার্টির চেয়ারম্যানের একক স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত। দলকে শক্তিশালী করতে এই ধারা বাদ দিতে হবে এবং সবাইকে নিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউন্সিল করে একটি শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গঠন করতে হবে।’
অন্যদিকে বিশেষ ক্ষমতার এই ধারা বহাল রেখে জিএম কাদেরকে সমর্থন জানিয়ে তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির কাদেরপন্থী মহানগর ও জেলা নেতাকর্মীরা। তারা কাউন্সিলের পরিবর্তে ওইদিন কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।এমনকি কাউন্সিলের পক্ষ অবলম্বনকারী শীর্ষনেতা আনিস-হাওলাদারদের দল থেকে বহিস্কারের দাবি তুলেছেন।তারা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল ও বনানী কার্যালয় নিজেদের দখলে রেখেছেন।
বুধবার (২৫ জুন) দলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশের জেলা ও মহানগর নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
বেলা ১২টায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নেতারা বলেছেন, তারা জাতীয় পার্টির বিষফোঁড়া। পার্টির চেয়ারম্যানকে জিম্মি করে তারা দলকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ থেকে দূরে নিয়ে গেছেন। তারা সবসময় ক্ষমতার রাজনীতি করেছেন। নিজেরা এমপি, মন্ত্রী ও দলের শীর্ষপদ বাগিয়ে নিয়েছেন। ক্ষমতার লোভে এখন তারা দলকে শেষ করতে চান।তাই দলের জন্যই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এসব বিষফোঁড়া কেটে ফেলতে হবে। তাদের দল থেকে বহিস্কার করে জাতীয় পার্টিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। তারা জিএম কাদের এর নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করে মাঠে থাকার ঘোষণা দেন।
এ সময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের জেলা ও মহানগর নেতাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জাতীয় পার্টি নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।এতদিন যারা জাতীয় পার্টি নিয়ে বেচাকেনার রাজনীতি করেছে তারাই ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে আমি আর রাজনীতি করব না। তিনি ত্যাগী নেতাদের উপযুক্ত মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানান।
উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, ইমরান হোসেন মিয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, শেরীফা কাদের, মো.
জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সঞ্চালনায় জেলা নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নুরুন্নাহার বেগম, আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, রেজাউল করিম রেজা, রেজাউর রাজী স্বপন চৌধুরী, আহমেদ শফি রুবেল, সারোয়ার হোসেন শাহীন, আনোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলাম স্বপন, আব্দুল কাদের খান কদর, মোস্তফা জামান লিটন, কেফায়েতউল্ল্যোহ নজির, অধ্যাপক মাহসিনুল ইসলাম হাবুল, আনোয়ার হোসের আনু, বশির আহমেদ, মাহমুদুল হক মনি, জাকির হোসেন খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি, মো. মোজাম্মেল হক, সামছুল হক, নাসির আহমেদ খান, মো. হাসান সাঈদ, এএফএম আরিফুজ্জামান দিদার, নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া, নাজমুল হুদা হিমেল, আহমেদ রিয়াজ, জালাল খান, এয়ার আহমেদ সেলিম, জিয়াউল হুদা আপলু, নুরুচ্ছফা সরকার, আবু তাহের, মো. তারেজ, মিথিলা রওয়াজা, শওকত জামান মিশুক, নাফিজ আহমেদ খান টিটু, শাহরিয়ার জামিল জুয়েল, খন্দকার ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ, রবিউল ইসলাম, মো. এমদাদুল হক বাচ্চু, হাজরা শহীদুল ইসলাম বাবলু, শফিকুল ইসলাম মধু, আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অন্যদিকে, গঠনতন্ত্রের চেয়ারম্যানের বিশেষ ধারা বাদ দিয়ে ২৮ জুন জাতীয় কাউন্সিল ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো চেয়ারম্যান এবি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।
বুধবার এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা বলেছেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের জাতীয় সম্মেলন বা কাউন্সিলের তারিখ ও স্থান নির্ধারণের পূর্ণ ক্ষমতা প্রেসিডিয়ামের। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের প্রেসিডিয়ামের মতামত বা অনুমোদন ছাড়াই একতরফাভাবে ২৮ জুন নির্ধারিত দশম জাতীয় কাউন্সিল স্থগিত করেছেন।
প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশ চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল পাওয়া না গেলে একই দিনে বিকল্প স্থান হিসেবে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের চত্ত্বরে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেই বিকল্প স্থানেও কাউন্সিল না করে তিনি একক সিদ্ধান্তে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউন্সিল এড়ানোর জন্য সমাবেশ ডাকেন।যা সম্পূর্ণভাবে গঠনতন্ত্র ও দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা যেভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, তা প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক চর্চার অন্তরায়।
তারা বলেন, ‘জাতীয় পার্টির অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য বিশ্বাস করেন, এই ধারা গণতন্ত্রবিরোধী এবং অনতিবিলম্বে সংশোধনের দাবি রাখে।
এই একতরফা সিদ্ধান্তের পিছনে দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য আছে বলে আমরা মনে করি। দীর্ঘদিন ধরে দলের নেতাকর্মীরা দলীয় অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি জানিয়ে আসলেও, চেয়ারম্যান সেই চাহিদা এড়িয়ে যাচ্ছেন। তার সদিচ্ছার ঘাটতি এবং স্বচ্ছতা এড়িয়ে চলার প্রবণতাই আজ দলের গুরুত্বপূর্ণ কাউন্সিল বিলম্বের কারণ বলে আমরা মনে করি।’
তাছাড়া, প্রেসিডিয়ামের একাধিক সদস্যের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল-দলের পুরনো, ত্যাগী, দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতাদের সমন্বয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গঠন করা হোক। কিন্তু একতরফা আধিপত্য বজায় রাখার জন্য চেয়ারম্যান সেই উদ্যোগেরও বিরোধিতা করছেন।এটি অত্যন্ত হতাশাজনক।
জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ-একজন রাষ্ট্রনায়ক, যিনি সর্বদা সংগঠনের ভিতরে গণতন্ত্র, শৃঙ্খলা ও দলীয় ঐক্যের চর্চা করতেন জানিয়ে নেতারা বলেন, তিনি (এরশাদ) বিশ্বাস করতেন, দল চলবে সবার মতামতের ভিত্তিতে এবং নেতৃত্ব আসবে অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আজ তার সেই মহান আদর্শ থেকে বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে—যা আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না।
‘পার্টির চেয়ারম্যান যেন অবিলম্বে একগুয়েমী ও স্বেচ্ছাচারিতার পথ থেকে সরে এসে, পল্লীবন্ধুর আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, অনতিবিলম্বে জাতীয় কাউন্সিলের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন এবং সেই কাউন্সিল প্রেসিডিয়ামের সভা আহ্বান করে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিয়ে যথাসময়ে কাউন্সিল আয়োজনে সহযোগিতা করবেন-আশাবাদ ব্যক্ত করেন দলের দুই শীর্ষনেতা।
জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী এবং গণতান্ত্রিক দল হিসেবে পুনর্গঠনের এটাই উপযুক্ত সময় উল্লেখ করে তারা বলেন, দয়া করে দলকে একক সিদ্ধান্ত, গোপনীয়তা এবং দায়বদ্ধতা বিবর্জিত নেতৃত্বের দিকে নয়-বরং অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা এবং যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে ঐক্যের পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করুন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গঠনতন ত র ক উন স ল র আহ ব ন জ ন ল ইসল ম ম ম হ ম মদ ন ত কর ম ক ষমত র কর ম র বল ছ ন আহম দ দলট র
এছাড়াও পড়ুন:
দল থেকে বহিষ্কৃত ওসমান পরিবারের দোসররা আপনার আশপাশে : টিপু
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু মডেল মাসুদকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া এখানে সমীচীন নয়, তারপরও বলতে চাই নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে যারা নতুন এসেছেন, বিশেষ করে কয়েকজন শিল্পপতি, তারা যেন দলের গঠনতন্ত্র ও চেইন অব কমান্ড মেনে কাজ করেন।
কিন্তু মাত্র কয়েকদিন আগে যোগদান করেই আপনি দলের ব্যানার ব্যবহার করে পাল্টা কাজ করছেন। আপনার আশপাশে রয়েছেন ওসমান পরিবারের দোসররা, যারা দল থেকে বহিষ্কৃত।
আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের কোনো ভূমিকা ছিল না, বরং তারা কর্মীদের ভয় দেখাতেন। গতকাল রাতে বন্দর ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে ঢাকা শরী মন্দিরে এক বক্তব্যে তিনি এ সতর্কতা জানান।
টিপু আরও বলেন, আজ আপনি পূজা মণ্ডপে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং বলছেন দলে বিভক্তি করবেন না। অথচ বিভক্তি তো আপনিই করছেন। আপনাকে এ দায়িত্ব কে দিয়েছে? তারেক রহমান কি দিয়েছেন? দলের নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার কথা থাকলেও আপনি তা করেননি।
তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আপনি যদি চেইন অব কমান্ড ভেঙে দলকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেন, তবে বিগত বছরগুলোতে যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, তারা কিন্তু কোনোভাবেই ছাড় দেবেন না। আমরা তিল তিল করে এই দলকে দাঁড় করিয়েছি।
আপনার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকানা যেমন আপনার, তেমনি বিএনপি আমাদের ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে গড়ে তোলা সংগঠন। একে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করার সাহস দেখাবেন না।
শেষে তিনি মডেল মাসুদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি দলে এসেছেন, স্বাগত জানাই। তবে দলের আদর্শ, গঠনতন্ত্র ও নেতৃত্বকে অমান্য করে বিভক্তি তৈরি করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে প্রস্তাব রাখব। ওসমান পরিবারের দোসরদের পৃষ্ঠপোষকতা করে বিএনপিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না।
এ সময় আরো সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওত হোসেন খান ও মহানগরের আরো অনেক নেতৃবৃন্দ ও নারায়ণগঞ্জ পূজা পরিশোধের নেতৃবৃন্দ।