আউট নিয়ে সাদমান বললেন, ‘শটস না খেললে তো রান হবে না’
Published: 25th, June 2025 GMT
ব্যাটসম্যানরা এলেন, থিতু হলেন, শট খেলতে গেলেন, আউট হয়ে গেলেন—শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বো টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের গল্প অনেকটা এমনই। দিনের শেষবেলায় নাঈম হাসানের আউট বাদ দিলে বাকি ব্যাটসম্যানরা একপ্রকার উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন।
দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটসম্যানদের শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসা নিয়ে সাদমান ইসলাম বলেন, রানের জন্য শট খেলেছেন তাঁরা। তবে কিছু শট হয়তো ভুল হয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি।
আজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের যেসব ব্যাটসম্যান শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সাদমান একজন। সকাল থেকে ভালোই খেলছিলেন। হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু হুট করেই অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের এক বল চালিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন এই বাঁহাতি। উইকেটকিপারের হাত ছুঁয়ে তা যায় স্লিপে দাঁড়ানো ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে। ৯৩ বলে ৪৬ রান করে আউট হয়ে যান সাদমান। বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানের আউটের ধরনও কাছাকাছি। রানের জন্য খেলতে গিয়ে আউট।
শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আজ প্রথম দিনের শেষে সাদমানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন এমন এক কথা, যা আলাদা করে বলার তেমন দরকার নেই, ‘শটস না খেললে তো রান হবে না।’
সাদমানের কথাটি পুরোপুরি সত্য। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে মূলত তাঁদের বল নির্বাচন আর শট খেলার ধরন নিয়ে। এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে গলে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৪৯৫ ও ৬ উইকেটে ২৮৫ রান করেছিল বাংলাদেশ। সাদমানও ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৬ রান করেছিলেন।
শট খেলার প্রসঙ্গে সাদমান মনে করিয়ে দিয়েছেন তা–ও, ‘গলেও আমরা ভালোই শট খেলছি, যেগুলো হয়তো বাউন্ডারি এসেছে। কিন্তু আজকে দুর্ভাগ্যবশত সবাই…হয়তো দিনটা আমাদের ছিল না।’
ম্যাচে চাপ অনুভব করে ব্যাটসম্যানরা অমন শট খেলেননি বলেও দাবি সাদমানের, ‘এমন কোনো চাপে তো.
বাংলাদেশ দল প্রথম দিন শেষ করেছে ৮ উইকেট হারিয়ে ২২০ রান করে। বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান সম্ভাবনা জাগিয়েও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। সাদমান নিজে আউট হয়েছেন ৪৬ রানে, ৭৫ বল খেলে ৩৫ রান করে মুশফিক, ৫৬ বলে ৩৪ রান করে লিটন আর ৪২ বলে ৩১ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজ।
থিতু হয়ে আউট হয়ে যাওয়া নিয়ে দিন শেষে সাদমান বলেন, ‘কেউ তো আর ইচ্ছা করে আউট হতে চায় না। ব্যাটসম্যানরা প্রত্যেকেই হয়তো সেট হয়ে আউট হয়েছি। হয়তো এটা আমাদের খারাপ দিন ছিল। আমরা পরের ইনিংসে ভালোভাবে কামব্যাক করব।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন প রথম দ ন শট খ ল স দম ন র ন কর উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
বরগুনা বিএনপি দ্বিধাবিভক্ত, কমিটি নেই আড়াই বছর
বরগুনা বিএনপিতে দুটি পক্ষ। এক পক্ষের নেতৃত্বে মোল্লা পরিবার এবং আরেক পক্ষ কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুরুল ইসলাম মনির অনুসারী। মনিরের বিরুদ্ধে এলাকায় না থাকার অভিযোগ। আর এলাকায় সক্রিয় মোল্লা পরিবারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আত্মীয়তার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জেলা কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার আগে ছয় উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছিল বিএনপি। মেয়াদোত্তীর্ণ সেই কমিটিগুলো বহাল। দু’পক্ষের বিরোধে হচ্ছে না কমিটি, গতি পাচ্ছে না সাংগঠনিক কার্যক্রম। ফলে ৫ আগস্টের পর বিএনপির সুদিনেও বরগুনায় দলটির দৈন্যদশা কাটেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশত্যাগের পর শেখ হাসিনার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যে কথোপকথন প্রথম ছড়িয়ে পড়েছিল, তা ছিল বরগুনা আওয়ামী লীগ নেতার। গত ১২ আগস্ট রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার হলেও কয়েক দিনের মধ্যে জামিন পান। যদিও কারাফটক থেকে তাঁকে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বরগুনায় নেতাকর্মীর ঈদ উপহার বিতরণ, মহান বিজয় এবং স্বাধীনতা দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি পালিত হয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালিত হয়।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি হয়েছিল ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল। উপজেলা কমিটি গঠনে আহ্বায়ক মো. মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা ও সদস্য সচিব তরিকুজ্জামান টিটুর (প্রয়াত) অর্থ লেনদেনের অডিও ছড়িয়ে পড়ে। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল কমিটি বিলুপ্ত হয়।
জেলায় দুটি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে বিএনপি কোনো দিন জেতেনি। বেশির ভাগ ভোটে জয়ী আওয়ামী লীগের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও হতে পারেনি।
মনির বিরুদ্ধে অভিযোগ
বিএনপির মনোনয়নে একমাত্র সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম মনি। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) আসনে এমপি হন ২০০১ সালে। ১৯৮৮ ও ১৯৯১-এর স্বতন্ত্র এমপি মনি ১৯৯৩ সালে দলটিতে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে তিনি দু’বার নিজ এলাকা পাথরঘাটায় গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর মনির অনুসারীরা তৎপর হলে তা ভালোভাবে নেয়নি জেলা সদরে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দেওয়া মোল্লা পরিবার।
মোল্লা পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ
অন্যদিকে, বছরের পর বছর জেলা সদরে নেতৃত্বে থাকা মোল্লা পরিবার দলকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে; বরং দলকে পারিবারিককরণের অভিযোগ রয়েছে। বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা ও তাঁর আগের সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা পরস্পরের চাচাতো ভাই। ফারুকের স্ত্রী আফরোজা বুলবুল জেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি। নজরুলের ভাই জাহিদ মোল্লা জেলা যুবদলের এবং চাচাতো ভাই নাসির মোল্লা শ্রমিক দলের সভাপতি। আরও দুই চাচাতো ভাই ফিরোজ্জামান মামুন মোল্লা কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ও বাবুল মোল্লা কাঁঠালতলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি।
আবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে মোল্লা পরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। নজরুল মোল্লার জামাতা হলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাসেল। চাচাতো ভাই লাভলু মোল্লা কাঁঠালতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয় নেতা মামুন মোল্লার দুই খালাতো ভাইয়ের একজন মনিরুল ইসলাম মনির সর্বশেষ পরিষদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আরেকজন তানভীর আহমেদ সিদ্দিক জেলা যুবলীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। মামুনের মামা মন্টু মোল্লা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক।
সংশ্লিষ্ট নেতাদের বক্তব্য
জেলা বিএনপির দুরবস্থার জন্য সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মনিকে দায়ী করেছেন সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মোল্লা। তিনি বলেন, ‘মনি স্বতন্ত্র এমপি অবস্থায় ১৯৯৩ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। বলয় তৈরির জন্য প্রকৃত নেতাকর্মীকে বাদ দিয়ে সুবিধাবাদীদের স্থান দিয়েছেন। মনিসহ তাঁর অনুসারীরা দলের খারাপ সময়ে কেটে পড়েন।’ কমিটিতে মোল্লা পরিবারের আধিক্য ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আত্মীয়তা প্রসঙ্গে নজরুল বলেন, ‘মোল্লা বংশ অনেক বড়। প্রায় সবাই প্রত্যক্ষভাবে বিএনপি করেন। অনেক রাজনীতিবিদ অন্য দলের নেতাদের আত্মীয়।’ তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে মেয়ে প্রেমের সম্পর্কে তাঁর অমতে বিয়ে করেছেন বলে জানান নজরুল।
কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুরুল ইসলাম মনি কারও নামোল্লেখ না করে বলেন, ‘জেলা সদরে বিএনপি একটি পরিবারের বৃত্তে বন্দি। এ পরিবারটির সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। তারা দিনে বিএনপি, রাতে আওয়ামী লীগ। শুধু এই পরিবারটির জন্য বরগুনায় বিএনপি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে পারেনি।’ এলাকায় অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে মনি জানান, যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। আওয়ামী লীগ আমলে পাথরঘাটায় গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। সংবাদপত্রে এর ছবিও ছাপা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘২০২৩ সালে অল্প সময়ে দুটি কমিটি করেছি। দুটিই ফ্লপ। একটির বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্য, আরেকটি সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ। এ কারণে কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। এরপর আন্দোলন-সংগ্রাম, সরকার পতন নানা কারণে এগোনো যায়নি। এখন কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন।’ কোন্দলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মতো বড় দলে অনেক যোগ্য নেতা আছেন। এদের মধ্যে পদের প্রতিযোগিতা আছে। এটা কোন্দল না।’