সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ফের উত্তাল কেনিয়া, নিহত ৮
Published: 26th, June 2025 GMT
কেনিয়াজুড়ে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর সরকারের বিরুদ্ধে এক দিনের বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসার পর, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে আটজন নিহত এবং ৪০০ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে কেনিয়ায় মারাত্মক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের ঢেউয়ের ঠিক এক বছর পর, গতকাল বুধবার (২৪ জুন) রাজধানী নাইরোবি ও অন্যান্য শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের অনেকেই ‘রুটোকে যেতে হবে’ বলে স্লোগান দেন এবং তার শাসনের শান্তিপূর্ণ বিরোধিতার প্রতীক হিসেবে পাম গাছের পাতা নিয়ে মিছিল করেন।
সরকার বিক্ষোভের সরাসরি টিভি ও রেডিও সম্প্রচার নিষিদ্ধ করেছিল, কিন্তু রাজধানী নাইরোবির হাইকোর্ট সেই ডিক্রি বাতিল করে দেয়।
রুটো বিক্ষোভকারীদের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি না দেওয়ার আহ্বান জানান, কারণ জনতা তার সরকারি বাসভবনে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু পুলিশ তাদের পিছু হটিয়ে দেয়।
রুটো উপকূলীয় কাউন্টি কিলিফিতে একটি অনুষ্ঠানে বলেন, “কেনিয়ায় শান্তি নষ্ট করার জন্য বিক্ষোভ করা উচিত নয়। যখন কিছু ভুল হয় তখন আমাদের অন্য কোনো দেশে যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের দেশকে নিরাপদ রাখা আমাদের দায়িত্ব।”
রুটো বুধবার তার সরকারি বাসভবন স্টেট হাউসে ছিলেন না। কারণ বিক্ষোভকারীরা সেখানে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছিল।
বিক্ষোভকারীদের আটকাতেই খণ্ডযুদ্ধ বাধে পুলিশের সঙ্গে। তাদের আটকাতে জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। চালানো হয় গুলিও। নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় পার্লামেন্টের সঙ্গে মূল সড়কের সংযোগকারী রাস্তা। বন্ধ করে দেওয়া আশপাশের সব রাস্তা, ব্যাংক এবং দোকান।
বুধবারের বিক্ষোভে হতাহতের কোনো পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ এখনও দেয়নি, তবে কেনিয়া মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, ল সোসাইটি অব কেনিয়া এবং পুলিশ রিফর্মস ওয়ার্কিং গ্রুপ এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, কমপক্ষে আটজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।
আহত ৪০০ জনের মধ্যে ৮৩ জনের ‘বিশেষ চিকিৎসা’ প্রয়োজন এবং আটজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, আহতদের মধ্যে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি কেনিয়া নিহতের সংখ্যা ১৬ জন বলে জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ২৫ জুন কর বাড়ানোর বিতর্কিত আর্থিক বিল পাসের প্রতিবাদে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি হয় কেনিয়ায়। রাজধানী নাইরোবি-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জন নিহত হওয়ার খবর জানা গিয়েছিল। ঠিক এক বছর পর ফের উত্তপ্ত হলো কেনিয়া।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও যৌথ বাহিনীর বেতন বাড়ছে কমপক্ষে ১৫০০ টাকা
আগামী জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ন্যূনতম বিশেষ সুবিধা ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং পেনশনভোগীদের জন্য ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন সংশোধন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এমপিওভু্ক্ত শিক্ষক–কর্মচারী, যৌথ বাহিনীর নির্দেশনাবলীর আওতায় বেতন–ভাতা ও পেনশনভোগী এবং জুডিশিয়াল সার্ভিসকে বিশেষ সুবিধার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করে পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এসব প্রজ্ঞাপন জারি করে। আগামী ১ জুলাই থেকে যা কার্যকর হবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট ঘোষণার পরদিন ৩ জুন সরকারি চাকরিজীবীদে জন্য বিশেষ সুবিধার প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ বিভাগ।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৯ পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং গ্রেড-১০ থেকে গ্রেড-২০ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে।
এতে আরও বলা হয়, জাতীয় বেতনকাঠামোর আওতাভুক্ত সরকারি (বেসামরিক), স্ব-শাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও পুলিশ বাহিনীতে নিয়োজিত কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের (পুনঃস্থাপনকৃত) জন্য এ বিশেষ সুবিধা কার্যকর হবে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়ানো হলে ১১তম গ্রেডের বেতন বাড়ে ৮৭৫ টাকা। ১২তম গ্রেডের বাড়ে ৬৯৫ টাকা। এভাবে ১৩তম গ্রেডের ৬৫০ টাকা, ১৪তম গ্রেডের ৫৩০ টাকা, ১৫তম গ্রেডের ৪৫৫ টাকা, ১৬তম গ্রেডের ৩৯৫ টাকা, ১৭তম গ্রেডের ৩৫০ টাকা, ১৮তম গ্রেডের ৩২০ টাকা, ১৯ তম গ্রেডের ২৭৫ টাকা ও ২০ তম গ্রেডের ২৩৭ টাকা বেতন বাড়ে। এসব কর্মচারীদের বেতন অনেক কম হওয়ায় সরকারের প্রজ্ঞাপনে সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা বেতন বাড়ানোর ঘোষণা ছিল।
তবে রোববার ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদনের সময় তা বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্তের আলোকেই আজ সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০০ টাকা বিশেষ সুবিধা বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা হয়।
এদিকে রোববার পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপন করে করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদেরও বিশেষ সুবিধার আওতায় আনা হয়। এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি মাদ্রাসা ও বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জাতীয় বেতনস্কেলের তুলনীয় গ্রেড-১ ও তদূর্ধ্ব থেকে গ্রেড-৯ পর্যন্ত গ্রেডভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের আগামী ১ জুলাই থেকে মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং গ্রেড-১০ থেকে গ্রেড-২০ পর্যন্ত গ্রেডভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের ১৫ শতাংশ বেতন বাড়বে। তবে বিশেষ সুবিধা সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকা হবে।
আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যৌথ বাহিনী নির্দেশাবলীর (জেএসআই) আওতায় বেতন–ভাতা গ্রহণকারী এবং পেনশনভোগীরা এ সুবিধা পাবেন। এ সুবিধা হবে জেএসআই–১/২০১৬ অনুযায়ী ওয়ারেন্ট অফিসার বা সমতূল্য পদবী হতে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের সব সদস্য ও ‘ধর্মীয় পরামর্শদানকারী কর্মকর্তারা মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং সার্জেন্ট ও সমতুল্য পদবীর ও তদনিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীরা মূল বেতনের ১৫ শতাংশ। তবে বিশেষ সুবিধা সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকা হবে। পেনশন পুনঃস্থাপনকৃত কর্মচারীরা সরকার হতে পেনশন গ্রহণকারী যাদের মাসিক পেনশন ১৭ হাজার ৩৮৯ টাকা ও তদূর্ধ্ব তাদের ১০ শতাংশ এবং যাদের মাসিক পেনশন ১৭ হাজার ৩৮৮ টাকা বা এর কম তাদের ১৫ শতাংশ বাড়বে। তবে বিশেষ এ সুবিধা সর্বনিম্ন ৭৫০ টাকা হবে।
এছাড়া জুজিশিয়াল সার্ভিসকে ও সুবিধার আওতায় এনে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৬ এর আওতায় বেতন–ভাতা গ্রহণকারী এবং পেনশনভোগকারীরা মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে বিশেষ সুবিধা পাবেন।