ভোগান্তির অপর নাম সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল
Published: 26th, June 2025 GMT
সাতক্ষীরার আধুনিক সদর হাসপাতালটি জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট নেই, নেই কোনো প্যাথলজিস্ট ও রেডিওলোজিস্ট। জনবল সংকটে হাসপাতালটিতে ভোগান্তির সীমা নেই রোগী ও স্বজনদের।
চিকিৎসক স্বল্পতার কথা স্বীকার করেই সিভিল সার্জন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার চাহিদাপত্র দিয়েও সমাধান হয়নি।
রোগীদের অভিযোগ, ইনডোরে চিকিৎসক রোগী পরিদর্শনে আসেন ২৪ ঘণ্টায় একবার। আউটডোরেও বেহাল অবস্থা। অনেক রোগীই চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাতক্ষীরার ২২ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত জেলা সদরে গড়ে তোলা হয় আধুনিক সদর হাসপাতাল। ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে ১৩টি কনসালটেন্ট পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৫ জন জুনিয়র। জরুরি বিভাগে তিনজন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে সবকটি পদই শূন্য। নেই কোনো প্যাথলজিস্ট ও রেডিওলোজিস্ট। নেই অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট।
অথচ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে ইনডোরে রোগী ভর্তি থাকে প্রায় দ্বিগুণ। আর আউটডোরে প্রতিদিন ৩/৪০০ রোগী স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসেন।
তালা উপজেলার শফিকুল ইসলাম বলেন, “ছেলেকে নিয়ে সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসে সারাদিন বসে ছিলাম। ডাক্তার না পেয়ে পরে ফিরে আসি।”
সদর উপজেলার সাতানি এলাকার জরিনা বেগম, কলারোয়ার সদরে এলাকার রুপবানসহ একাধিক রোগীদের অভিযোগ, ইনডোরে চিকিৎসক রোগী পরিদর্শনে আসেন ২৪ ঘণ্টায় একবার। সারা দিন আর ডাক্তার মেলে না। আউটডোরেও বেহাল অবস্থা। অনেক রোগীই চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, ইনডোরে ঠিকমত চিকিৎসক পাওয়া যায় না। নার্স দিয়েই সেবা পেতে হচ্ছে। আর আউটডোরে রোগীর চাপে অনেককেই ফিরেও যেতে হয়। দীর্ঘদিন সিটিস্ক্যান মেশিন নষ্ট পড়ে রয়েছে। হাসপাতালে গরীব দুঃস্থ মানুষ আসেন কম পয়সায় ডাক্তার দেখাতে। অথচ দামি ওষুধ কিনতে যেতে হয় বাইরে। সিটি-স্ক্যান আল্ট্রাসনোগ্রামসহ দামি দামি টেস্ট করতে হয় বাইরে থেকে। এতে চিকিৎসা খরচের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ভোগান্তিও।
সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপার ভাইজার গৌরী রানী মন্ডল বলেন, “১০০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে ইনডোরে রোগী ভর্তি থাকে প্রায় দ্বিগুণ। আর আউটডোরে প্রতিদিন ৩০০/৪০০ রোগী স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসেন। একদিকে রোগীর চাপ অনেক বেশি, অপর দিকে ডাক্তার নেই। সবমিলিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা শেখ ফয়সাল আহমেদ বলেন, “২৭টি পদের মধ্যে প্রধান ১২টি পদসহ ১৪টি পদই শূন্য রয়েছে। বিশেষ করে কনসালটেন্ট ডাক্তারসহ অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট, প্যাথলজিস্ট ও রেডিওলোজিস্টসহ শূন্য রয়েছে।”
ডাক্তার স্বল্পতার কথা স্বীকার করেই সিভিল সার্জন ডা.
তিনি বলেন, “বিশেষ করে সার্জারি কনসালটেন্ট, মেডিসিন ও গাইনি কনসালটেন্টসহ অ্যানেসথেসিয়া কনসাল্টেন্ট ও প্যাথলজিস্ট ও রেডিওলোজিস্ট না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”
ঢাকা/শাহীন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ক ৎসক আউটড র কনস ল ইনড র
এছাড়াও পড়ুন:
রুনা লায়লার জন্মদিন: সংগীতজীবনের বর্ণময় ৬ দশকের উদ্যাপন
উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ৭৩ বছর পূর্ণ করলেন। একইসঙ্গে পূর্ণ করলেন তার গৌরবময় সংগীত-জীবনের ৬০ বছর। উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সমানতালে গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন রুনা লায়লা। ১৮টি ভাষায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ফলে তিনি যে উপমহাদেশের শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের একজন—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অনন্য। দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অগণিত স্বীকৃতির মাঝে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তার অর্জনকে আরো মহিমান্বিত করেছে।
আরো পড়ুন:
কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি
চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি
ভক্তদের কাছে রুনা লায়লার এবারের জন্মদিনটি বিশেষ। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের শেষ গানটি প্রকাশ পেয়েছে তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে—যে গানটি বহু বছর আগে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।
তবে জন্মদিন নিয়ে শিল্পীর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পরিবারকে সময় দিয়েই কাটাবেন দিনটি। ঘরোয়া পরিবেশেই উদ্যাপিত হবে জন্মদিন।
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। সংগীতজীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে। শিল্পী আহমেদ রুশদির গায়কিতে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করা এই কণ্ঠশিল্পী দ্রুতই উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’—এর মতো গান তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
এরপর ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে তার কণ্ঠের জাদু। ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে পরিচিত করে তোলে সাদাকালো যুগেই। পরে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম তাকে বিশ্বব্যাপী নতুন আরেক পরিচিতির শিখরে পৌঁছে দেয়।
যদিও তিন দেশে সাফল্য পেয়েছেন, রুনা লায়লার সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ। ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪)—সহ মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এর মতো বাংলা লোকগান তার কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেয়েছে।
দীর্ঘ ও সফল এই যাত্রায় মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি—এ কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। ছোটবেলায় গান গাইতে গেলে মা সবসময় সঙ্গে যেতেন।”
ঢাকা/রাহাত/শান্ত