‘দুপুরে আমি নামাজ পড়ছিলাম। ছেলে আমাকে ফোন করে বলল, “আব্বু, আমি বন্ধুদের সঙ্গে নদীর পাড়ে ঘুরতে যাচ্ছি।” সেই যে গেল, আর ফিরে এল না। ছেলের কথাগুলো সারাক্ষণ কানে বাজছে আমার। কত স্বপ্ন ছিল ওকে নিয়ে, সব শেষ হয়ে গেল। আল্লাহ তাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছেন।’

ছেলের কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসছিল মোজাম্মেল হকের (৫৫)। আগের দিন পদ্মা নদীতে ডুবে মারা গেছেন তাঁর বড় ছেলে আবদুল্লাহ মারুফ (২১)। গতকাল বুধবার ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এই শিক্ষার্থী নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হন। পরে ফায়ার সার্ভিস তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে। ফরিদপুর সদরের শহরতলির ডিক্রীর চর ইউনিয়নের ধলার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে নোয়াখালী সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের উত্তর শরিফপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে কথা হয় মোজাম্মেল হকের সঙ্গে।

মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মারুফ ছিল বড়। জন্ম গ্রামে হলেও বেড়ে উঠেছে ঢাকায়। তিনি গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। মেয়ে মাইশা মালিহা এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। ছোট ছেলে স্কুলে পড়ে।

তিনি জানান, মারুফ ফরিদপুরে একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করতেন। পরীক্ষা সামনে থাকায় ঈদের তিন–চার দিন পর মেসে ফিরে যান। গতকাল কলেজে পরীক্ষা থাকলেও সিলেবাসসংক্রান্ত জটিলতার কারণে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেননি। পরে মারুফ বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলেন। খেলা শেষে ঘুরতে যান নদীর পাড়ে।

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘দুপুরে নামাজ পড়ছিলাম। এমন সময় মারুফ ফোন করে জানায়, সে নদীর পাড়ে যাচ্ছে। বন্ধুদের সঙ্গে যাচ্ছে শুনে কিছু বলিনি। ওর চলাফেরা ছিল খুব গোছানো। বাজে আড্ডা বা খারাপ কোনো অভ্যাস ছিল না। স্মার্টফোনও ব্যবহার করত না—একটি সাধারণ ফোনই ছিল।’

তিনি আরও জানান, ‘মারুফ প্রথমে বন্ধুদের সঙ্গে একবার নদীতে নেমে উঠে আসে। পরে দ্বিতীয়বার আবার নামে। এ সময় আনন্দ করতে করতে সে ও এক সহপাঠী ড্রেজিংয়ের কারণে নদীতে সৃষ্ট গভীর গর্তে পড়ে যায়। পানির ঘূর্ণিস্রোতে দুজনই তলিয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।’

ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না মা রাবেয়া বেগম। আজ দুপুরে তিনি বলেন, ‘সব শেষ হয়ে গেছে। বুকের ধন চলে গেছে। আমি মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষার কারণে ঢাকায় ছিলাম। সন্ধ্যায় খবর পেলাম, আমার ছেলে আর নেই। শুরুতে আমাকে কিছু জানায়নি।’

মরদেহ ফরিদপুর থেকে আনার পর তা একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে রাখা হয়। গ্রামের লোকজন, আত্মীয়স্বজন ভিড় করেন ছেলেটিকে শেষবারের মতো দেখতে। গাড়ির কাচের ভেতর তাকিয়ে অনেককেই চোখ মুছতে দেখা গেছে।

আবদুল্লাহর চাচা আবদুর রহিম বলেন, ‘ঈদের পরদিন আমাদের বাসায় এসেছিল মারুফ। খুব শান্ত, ভদ্র ছেলে ছিল। কে জানত এভাবে হঠাৎ সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে।’ তিনি জানান, আজ সন্ধ্যায় জানাজা শেষে মারুফকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আরও পড়ুনপদ্মায় গোসলে নেমে ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু২০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ ম ম ল হক নদ র প ড় পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন

সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।

স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, ‍“নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”

মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।” 

পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”

কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”

মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”

ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ