দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ আজ বৃহস্পতিবার দিন শেষে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল। আজ রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। আর ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রবাসীরা বৈধ পথে আয় পাঠানো বাড়িয়েছেন। এই বাড়তি প্রবাসী আয় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সরে এসেছে। ১০ মাস ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে না। এর মধ্যে দেশের ব্যাংক ও রাজস্ব খাত সংস্কার, বাজেট সহায়তা ও ঋণ হিসেবে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ দেশে আসছে। এর ফলে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ বেড়েছে।
জানা গেছে, দেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বিবেচনায় আইএমএফ আরও ৯০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), জাপান ও ওপেক ফান্ড থেকে আরও দেড় শ কোটি ডলার ঋণ আসবে, যা চলতি মাসের মধ্যে রিজার্ভের হিসাবে যুক্ত হবে। এতে চলতি মাস শেষে মোট রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রিজার্ভ স্বাভাবিকভাবে না বেড়ে ঋণের অর্থে বাড়ছে। তবে এসব ঋণ দীর্ঘমেয়াদি ও কম সুদের, যা নিকট ভবিষ্যতে রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি করবে না। এসব অর্থে দেশের বাজেট বাস্তবায়ন, ব্যাংক ও রাজস্ব খাত সংস্কার করা হবে। এসব সংস্কার হলে অর্থনীতি চাঙা হবে, রপ্তানি আয় ও রাজস্ব আয় দুটোই বাড়বে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এসব ঋণ দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় পরিশোধে তেমন চাপ তৈরি করবে না।
এদিকে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ২৯ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। ফলে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার আয় বেশি এসেছে। এদিকে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি রয়েছে ৯ শতাংশ। ফলে আমদানি ৫ শতাংশের মতো বাড়লেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।
২০২৪ সালের ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। তখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিপির সঙ্গে আইএমএফের বৈঠক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এনসিপির সঙ্গে আইএমএ এর মিশন টিমের সঙ্গে বৈঠক হয়।
আরো পড়ুন:
এনসিপিকে নিয়ে প্রথম বই ‘এনসিপির যাত্রা`
এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, যুবক আটক
বৈঠকে এনসিপি প্রতিনিধি দল দেশের সংকটময় সময়ে বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান এবং জরুরি সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়ার প্রতি আইএমএফ-এর ধারাবাহিক সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে।
বৈঠকে উপস্থিত (আইএমএফ) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব আহরণ, রাজস্ব–জিডিপি অনুপাত, ডিস্ট্রেসড অ্যাসেট এবং যুব কর্মসংস্থান বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এনসিপি প্রতিনিধিরা এসব চ্যালেঞ্জ স্বীকার করে বলেন, যে তারা রাজস্ব ডিজিটালাইজেশন, আর্থিক খাতের চলমান সংস্কারকে সমর্থন এবং সংস্কার বাস্তবায়নের ধীরগতির বিষয়ে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতি সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সভায় আরো আলোচ্য ছিল পূর্ববর্তী সরকারের ‘ক্লেপ্টোক্রেসি’ কীভাবে শুরু হয়েছিল, জাতীয় অর্থনীতি ও প্রশাসনে এর প্রভাব কী ছিল এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্নীতিকে রোধ করতে কী ধরনের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে ছিল, অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি কমানো, সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং অন্তর্বর্তী সরকার থেকে নির্বাচিত সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ক্ষমতা হস্তান্তর। উভয়পক্ষই আশা প্রকাশ করে যে বাংলাদেশের কঠোর পরিশ্রমী জনগণই উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি এবং জনগণের সম্মিলিত মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে দেশ আরো সহনশীল ও স্থিতিশীল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাবে।
বৈঠকে আইএমএফ-এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ক্রিস পাপাজর্জিউ, বাংলাদেশ মিশন চিফ, ম্যাক্সিম ক্রিশকো, ঢাকা রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং তৌহিদ এলাহি, ডেপুটি সেক্রেটারি ও ইকোনমিক এনালিস্ট ।
এনসিপি এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জাবেদ রাসিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রধান, শিল্প ও বাণিজ্য সেল, মো. সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রধান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সেল, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, যুগ্ম সদস্য সচিব ও কো-লিড, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সেল, আব্দুল্লাহ আল মামুন ফয়সাল, সংগঠক ও কো-লিড, শিল্প ও বাণিজ্য সেল এবং মো. আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও সদস্য, শিল্প ও বাণিজ্য সেল।
ঢাকা/রায়হান/এসবি