সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী কদমতলী এলাকার বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও আদমজী টাওয়ারের মালিক মো. ফিরোজ মিয়া (৬০) বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল ৯টায় নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। 

সম্প্রতি তিনি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, পরবর্তীতে ভর্তি ছিলেন ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। হাসপাতালে কিছুটা সুস্থতার পর তাঁকে বাসায় ফেরত আনা হয়, তবে তার দুই দিন পর সকালেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

ফিরোজ মিয়া সিদ্ধিরগঞ্জে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে সিদ্ধিরগঞ্জবাসী, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন শোকাহত।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

বিহারে মুসলিম ভোটার বাদ পড়েছে গড়পড়তা, তালিকায় ভুল ছবি ও মৃত ব্যক্তি

কয়েক দিন আগে ভারতের নির্বাচন কমিশন বিহার রাজ্যের জন্য সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রায় এক মাসব্যাপী ভোটার তালিকা পর্যালোচনার পর এই তালিকা প্রকাশিত হয়। আগামী নভেম্বর মাসে সেখানে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

বিরোধী দল ও নির্বাচনসংক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, তাড়াহুড়ো করে এই তালিকা তৈরি করা হয়ে। অনেকে বিবিসিকে   জানিয়েছেন, তালিকায় ভুল ছবি ও মৃত ব্যক্তিদের নামও রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২৫ জুন থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত তাদের কর্মকর্তারা রাজ্যের তালিকাভুক্ত ৭৮.৯ মিলিয়ন ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের তথ্য যাচাই করেছেন। কমিশনের মতে, এর আগের এই ধরনের পুনঃনিরীক্ষণ ২০০৩ সালে হয়েছিলো এবং এবার আপডেট করা অত্যাবশ্যক ছিল।

নতুন এ তালিকায় ৭২.৪ মিলিয়ন ভোটারের নাম রয়েছে, যা আগের তুলনায় ৬.৫ মিলিয়ন কম। কমিশন জানায়, এই নাম কমার কারণ হচ্ছে ২.২ মিলিয়ন ব্যক্তি মৃত এবং ৭০ লাখ ভোটার একাধিকবার তালিকায় থাকা এবং ৩.৬ মিলিয়ন ভোটার রাজ্য ত্যাগ করেছেন।

ভুল ঠিক করার জন্য আবেদন করার সময়সীমা ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। 

খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে সমালোচনা, বিক্ষোভ করেন বিরোধীরা।

 

বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন অনেক ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে, বিশেষ করে চারটি সীমান্তবর্তী জেলার মুসলিম ভোটারদের। তাদের দাবি, এর ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আসন্ন রাজ্য নির্বাচনে সুবিধা পাবে।

নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিবিসির প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন তাদের ২৪ জুনের বিশেষ নিবিড় পুনঃনিরীক্ষণ (এসআইআর) পরিচালনার আদেশ এবং ২৭ জুলাইয়ের প্রেস নোট শেয়ার করেছে। যেখানে উল্লেখ আছে যেকোনো যোগ্য ভোটার যেন তালিকা থেকে বাদ না পড়ে সে বিষয়ে যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। 

তবে কমিশন এখন পর্যন্ত বাদ দেওয়া ভোটারদের নামের তালিকা প্রকাশ করেনি বা ধর্মভিত্তিক কোনো তথ্য দেয়নি, তাই বিরোধীদের অভিযোগ বিবিসি যাচাই করতে পারেনি। 

‘হিন্দুস্তান টাইমস’ পত্রিকার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিহারের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিশানগঞ্জ জেলায় ভোটারদের তালিকা থেকে বেশিরভাগ ভোটার বাদ পড়েছে, কিন্তু অন্য মুসলিমপ্রাধান এলাকার ক্ষেত্রে তা হয়নি।

বিহার ভারতের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য, যেখানে সেবা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত।

বিরোধী সংসদ সদস্যরা এটিকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করে আলোচনা দাবি জানান। ফলে সংসদে বারবার অধিবেশন স্থগিত হয়েছে। এছাড়া, প্রতিবাদকারীরা ‘ডাউন ডাউন মোদি, ‘এসআইআর প্রত্যাহার কর’ এবং ‘ভোট চুরি বন্ধ কর’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন। নির্বাচনি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা  ওয়াচডগ সংস্থা এডিআর তালিকা তৈরির সময় সম্পর্কে প্রশ্ন তোলায় সুপ্রিম কোর্টও এই উদ্যোগ নিয়ে পর্যালোচনা করছেন।

এডিআরের জগদীপ চোখার বিবিসিকে বলেন, “এটি বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক তিন মাস আগে এসেছে এবং এই কাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি।”

তিনি আরো বলেন, “মাঠ থেকে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়া চলাকালে অনিয়ম ছিল এবং তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক ভুল-ত্রুটি ছিল।” 

এডিআর জানায়, এসআইআর প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব প্রমাণ করার দায়িত্ব মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিজের এবং তাদের পিতামাতার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানোর দাবি করা হয়। এটা লাখ লাখ দরিদ্র শ্রমিকের জন্য অসম্ভব একটি কাজ।

“খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় আমরা পাটনা ও আশেপাশের গ্রামে গিয়ে জানলাম, ভোটাররা এসআইআর বিষয়ে কী ভাবছেন।”

রেখা দেবী (বাঁ দিকে) বলেন, ভোটাধিকার হারানো আমাদের আরো দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেবে।

এডিআর আদালতে যুক্তি দেখিয়েছে, এই উদ্যোগ ‘মিলিয়ন মিলিয়ন প্রকৃত ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নেবে’। ভারতের সবচেয়ে গরিব রাজ্যগুলোর মধ্যে এটি অন্যতাম। এখানে অনেকগুলো উপেক্ষিত সম্প্রদায়ের বাস।”

দানারা গ্রামে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র মহাদলিত সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন। সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা উচ্চবর্ণের মানুষের জমিতে কাজ করেন কিংবা বেকার। গ্রামের ঘরগুলো ভাঙাচোরা, সংকীর্ণ রাস্তায় খোলা নালা। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এসআইআর বা এর প্রভাব সম্পর্কে খুব কম বা মোটেও জানতেন না। অনেকেই নিশ্চিত করতে পারেননি যে সরকারি লোকজন তাদের বাড়ি পর্যন্ত গেছেন। 

তবে তারা তাদের ভোটকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করেন। রেখা দেবী বলেন, “ভোট হারালে আমরা আরো বেশি দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যাব। এটা আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হবে।”

খারিকা গ্রামের অনেক পুরুষ বলেছেন, তারা এসআইআর সম্পর্কে শুনেছেন এবং ফর্ম জমা দিয়েছেন, নতুন ছবি তুলতে ৩০০ রুপি খরচ করেছেন। 

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তর্কেশ্বর সিং বলেন, “এটা বিশাল বিশৃঙ্খলা।” তিনি তার পরিবারের তথ্যসহ পৃষ্ঠাগুলো দেখিয়ে ভুলগুলো তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে তার নামের পাশে ভুল ছবি।

তিনি বলেন, “আমার জানা নেই ছবিটি কার।” তার স্ত্রী সুর্যকলা দেবী এবং ছেলে রাজীবের ছবিও ভুল আছে। 

তিনি আরো বলেন, “সবচেয়ে খারাপ হলো আমার অন্য ছেলে অজীবের ক্ষেত্রে— তার ওখানে একটি অজ্ঞাত নারীর ছবি রয়েছে।”

তর্কেশ্বর সিং আরো কিছু ভুলের কথা উল্লেখ করেন—তার পুত্রবধূ জুহি কুমারির নথিতে ভুলবশত তার নাম স্বামীর জায়গায় উল্লেখ রয়েছে, যা আসলে তার পুত্রের হওয়া উচিত ছিল। এছাড়া, একই ঠিকানায় আরেক পুত্রবধূ সঙ্গীতা সিং দুইবার তালিকাভুক্ত রয়েছেন, যার মধ্যে মাত্র একটিতে তার সঠিক ছবি ও জন্মতারিখ দেওয়া হয়েছে।

তার অনেক আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীর কাছ থেকেও একই ধরনের অভিযোগ তিনি শুনেছেন। তিনি এমন একজন কাজিনের নাম উল্লেখ করেন যিনি পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন, তবুও তালিকায় আছেন, এবং এমন দুজন ব্যক্তির নাম রয়েছে যারা দুইবার তালিকায় রয়েছে।

তিনি বলেন, “সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই হয়নি। তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম, নকল ও যারা ফর্মও দেয়নি তাদের নাম রয়েছে। এটা সরকারের যন্ত্রপাতির অপব্যবহার এবং এই কাজে কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে।”

এডিআরের জগদীপ চোখার জানান, তারা এই সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে এসব বিষয় উত্থাপন করবেন। জুলাই মাসে আদালত জানিয়েছিল, যদি পিটিশনকারীরা খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া ১৫ জন প্রকৃত ভোটারের বিষয়ে প্রমাণ দিতে পারে তবে আদালত খসড়া তালিকা স্থগিত করবেন।  

তার প্রশ্ন, “কমিশন যে সাড়ে ৬ লাখ নাম বাদ দিয়েছে তাদের তালিকা না পেলে আমার সেটা কীভাবে করব?”

তিনি বলেন, “দুই বিচারকের বেঞ্চের একজন বিচারক এই কার্যক্রমকে আসন্ন নির্বাচনের সঙ্গে সংযুক্ত না করার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে সঠিকভাবে পর্যালোচনার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।” 

বিহার রাজ্যের ভোটার তালিকা পুনর্মূল্যায়ন ও স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বিপরীত অবস্থানে রয়েছে।  বিরোধী দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এই কার্যক্রমের উপর সন্দেহ প্রকাশ করেছে, তবে শাসক জোট জনতা ও বিজেপি এই উদ্যোগের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

আরজেডির সাধারণ সম্পাদক শিবানন্দ তিওয়ারি বলেন, “এই পুনর্মূল্যায়নের জটিলতা অনেক ভোটারদের বিভ্রান্ত করেছে।”

অনেক গ্রামবাসীরই এসআইআর সম্পর্কে ধারণা সামান্য, আবার কারও কারও কোনো ধারণাই ছিল না।

 তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের দাবি যে ৯৮.৩ শতাংশ ভোটার ফরম পূরণ করেছে, তা বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না। অধিকাংশ গ্রামে ব্লক লেভেল অফিসার ভোটারদের কাছে যাননি। অনেকেই প্রশিক্ষণহীন এবং ফরম আপলোডের পদ্ধতি জানেন না।”

তিনি আরো অভিযোগ করেন, “কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মনিপুলেশন হচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায়, যেখানে মুসলিম জনগোষ্ঠী অনেক, তাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা কখনো বিজেপির পক্ষে ভোট দেয় না।” 

বিজেপি ও জনতা দল এই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, “এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক।”

বিহারের বিজেপি সাংসদ ভীম সিংহ বলেন, “মাত্র ভারতীয় নাগরিকদের ভোট দেওয়ার অধিকার আছে এবং আমরা বিশ্বাস করি যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্ত এলাকার অনেক রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বসতি গড়েছে। তাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “এসআইআর কারো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বিরোধীরা এই বিষয়টিকে তুলে ধরছে, কারণ তারা জানে তারা আসন্ন নির্বাচনে হারবে এবং তাদের হারানোর জন্য কোনো লোককে দায়ী করতে হবে।”

জনতা দলের প্রধান মুখপাত্র এবং রাজ্য বিধায়ক নীরজ কুমার সিং বলেন, “নির্বাচন কমিশন শুধু তাদের কাজ করছে।”

তিনি প্রশ্ন করেন, “তালিকায় অনেক ভোটার দুই বা তিন বার নাম এসেছে। তাহলে এটা কি ঠিকমতো সংশোধন করা উচিত নয়?”

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ