শিশুর পুষ্টি দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার ভিত্তি
Published: 27th, June 2025 GMT
শিশুদের পুষ্টিমান উন্নয়ন তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা হলে শিশুদের উচ্চতা ও ওজন বয়স অনুযায়ী ঠিক থাকে। তাদের শেখার ক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। এ কারণে বলা যায় শিশুপুষ্টির উন্নয়ন দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনের অন্যতম ভিত্তি। এ জন্য পুষ্টিবান্ধব বার্ষিক পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় পরিচালিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর শিশুপুষ্টি বিষয়ক কনসোর্টিয়াম ‘রাইট টু গ্রো’ ও প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকের মূল ধারণাপত্রে এ মন্তব্য করা হয়। রাইট টু গ্রো প্রকল্প শিশুদের পুষ্টিমান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কাজ করছে। তাদের লক্ষ্য প্রতিটি শিশু যেন তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। সকালে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে ‘শিশুপুষ্টি উন্নয়নে স্থানীয় সরকার, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ।
বৈঠকের শুরুতেই রাইট টু গ্রো কনসোর্টিয়ামের টিম লিড ইকবাল আজাদ পাওয়ার পয়েন্টে শিশুপুষ্টি নিয়ে তাঁদের কার্যক্রমের পরিচিতি তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক ছয়টি সংস্থা—অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গার, সেন্টার ফর ইকোনমিক গভর্ন্যান্স অ্যান্ড কাউন্সেলিং ইন আফ্রিকা, ম্যাক্স ফাউন্ডেশন, সেভ দ্য চিলড্রেন, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট ও ওয়ার্ল্ডভিশন এবং তিনটি দেশি সংস্থা এইচএলপিএফ, জাগরণী ও এডিএ কাজ করছে রাইট টু গ্রো প্রকল্পে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছে ম্যাক্স ফাউন্ডেশন। রাইট টু গ্রো দেশের খুলনা, বরগুনা, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালী জেলার পাঁচটি উপজেলা ডুমুরিয়া, তালতলী, দেবহাটা, পটুয়াখালী সদর ও গলাচিপার ৪০টি ইউনিয়নে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুদের পুষ্টিমান নিশ্চিত করা নিয়ে কাজ করছে। তারা দুই শতাধিক গ্রামে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী ৩০ হাজার ৭৪৫ শিশুর পুষ্টিমান নিশ্চিত করা নিয়ে কাজ করছে। রাইট টু গ্রো জনসচেতনতা সৃষ্টি, মাঠপর্যায়ে গবেষণাসহ বিভিন্ন কাজ করছে। শিশুদের পুষ্টিমান উন্নয়নে সরকারি–বেসরকারি উদ্যোক্তা ও নাগরিকদের নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করার প্রতি তারা গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
আলোচনা পর্বে সুজনের সম্পাদক ও দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের দেশে শিশুদের অপুষ্টির একটি প্রধান কারণ নারীদের অধস্তন অবস্থা। নারী স্বাস্থ্যবান হলে সন্তান স্বাস্থ্যবান হবে। নারী শিক্ষিত হলে সন্তান শিক্ষিত হবে। নারী উপার্জনক্ষম হলে সেই উপার্জন তিনি সন্তানের জন্য ব্যয় করেন, ফলে সন্তানের ভবিষ্যৎ উন্নত হয়। জাতির উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা এর সঙ্গে জড়িত; কিন্তু সন্তান গর্ভে থাকার সময়ই মা যদি অপুষ্টিতে ভোগেন, তবে তার প্রভাব পড়ে সন্তানের ক্ষেত্রে। এসব অপুষ্টিজনিত শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মায়। ভবিষ্যতে তারা ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে থাকে। মায়ের অপুষ্টি থেকে শিশুর অপুষ্টি, সেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মে নেতিবাচক প্রভাব অপুষ্টির এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। এ জন্য এখন জনসচেতনতা ও গণজাগরণের প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, পুষ্টি নিয়ে ২২টি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম আছে। তাদের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনায় পুষ্টির বিষয়টি থাকে। এই মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়। সার্বিকভাবে দেশের পুষ্টিমানের পরিস্থিতি হতাশাজনক নয়। শিশু পুষ্টিমান উন্নয়নের জন্য সরকারের সঙ্গে নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি খাত সমন্বিতভাবে কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো.
স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ইউনিয়ন পরিষদ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফজলে আজিম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে শিশুপুষ্টি খাতে সরাসরি কোনো বরাদ্দ না থাকলেও বার্ষিক মোট বরাদ্দের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে। ইউপি চেয়ারম্যানরা নিজ বিবেচনা ও পরিবেশ–পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিশুপুষ্টির উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ করতে পারেন। তিনি বলেন, এ খাতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এলে সরকার তা বাস্তবায়নের বিবেচনা করতে পারে।
নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা, বাণিজ্য ও ব্যবসায় উন্নয়নবিষয়ক জ্যেষ্ঠ নীতি উপদেষ্টা ওসমান হারুনি বলেন, সরকারের নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থা ও উদ্যোক্তাদের ভূমিকা আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্ম, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ক্লাব ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের পরামর্শক এ এফ এম ইকবাল কবির বলেন, সামগ্রিক বাজেটে বরাদ্দ থাকলেও সেখানে শিশুপুষ্টি খাত সুনির্দিষ্ট করা নেই। ফলে অনেক সময় এই খাত উপেক্ষিত থাকে।
নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের এ দেশীয় পরিচালক সায়কা সিরাজ শিশুখাদ্য হিসেবে বাজারে যেসব মানহীন বা কুখাদ্য বিক্রি করা হচ্ছে এবং সেগুলোর আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রতি গুরুত্ব দেন। প্রয়োজনে আইন করে এসব প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সাইফুর রহমান বলেন, জনস্বাস্থ্য বিভাগ এখন পুষ্টির সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান স্কুল পর্যায়ে শিশুদের ওজন ও উচ্চতা নির্ণয় করার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ম্যাক্স ফাউন্ডেশনের এদেশীয় পরিচালক তারিকুল ইসলাম অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা অনেক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেন। এর মধ্য থেকে সম্ভাব্যতা যাচাই করে অনেক দৃষ্টান্ত সরকারিভাবে সারা দেশে বাস্তবায়ন করা যায়।
গোলটেবিলে আরও বক্তব্য দেন ইউনিসেফের পুষ্টিবিজ্ঞানী গেলাম মহিউদ্দিন খান সাদী, ওয়ার্ল্ডভিশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক চন্দন জেড গমেজ, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের এদেশীয় পরিচালক (ইনচার্জ) এ এস এম রহমত উল্লাহ ভূঁইয়া, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের এদেশীয় পরিচালক প্রশান্ত ত্রিপুরা, খুলনার ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, লাল তীর সিডস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক এম আবদুর রশিদ, এসএমসির অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক সালাহ উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আলী আব্বাস মোহাম্মদ খোরশেদ।
গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর ক জ করছ ব সরক র বর দ দ ক জ কর র জন য র ইট ট সমন ব
এছাড়াও পড়ুন:
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা: বিদেশি শিক্ষার্থীদের ২২৪ আসন বরাদ্দ
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসন পুনর্বিন্যাস করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এ বছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ২২৪টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ ২২৪ আসনের মধ্যে এমবিবিএস কোর্সে ১৮৪ এবং বিডিএস কোর্সের জন্য ৪০টি আসন নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২২৪ আসনের মধ্যে ১২৫টি সার্ক দেশগুলোর জন্য এবং ৯৯টি আসন নন-সার্ক দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত। সার্ক ও নন-সার্ক কোটা সম্পূর্ণ আলাদা রাখা হয়েছে। নন-সার্ক কোটা সংরক্ষিত আসনে কোনো সার্ক দেশের শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে না।
আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস ফেলোশিপ, ৬ খাতে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের সুযোগ৪ ঘণ্টা আগেসার্ক দেশের আসন বণ্টনে ভারতের জন্য এমবিবিএসে ২২ ও বিডিএসে ২টি, পাকিস্তানের জন্য এমবিবিএসে ২১টি ও বিডিএসে ২টি, নেপালের জন্য এমবিবিএসে ১৯ ও বিডিএসে ৩টি, শ্রীলঙ্কার জন্য এমবিবিএসে ১৩ ও বিডিএসে ২টি, ভুটানের জন্য এমবিবিএসে ৩টি ও বিডিএসে ১টি, মালদ্বীপের জন্য এমবিবিএসে ৬টি ও বিডিএসে ১টি এবং আফগানিস্তানের জন্য এমবিবিএসে ৩টি ও বিডিএসে ১টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে সার্ক দেশের জন্য এমবিবিএসে মোট ১১২ ও বিডিএসে ১৩, অর্থাৎ সর্বমোট ১২৫টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুনমেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা : দেখে নিন আবেদনের নিয়মাবলি১৩ নভেম্বর ২০২৫নন-সার্ক দেশের আসন বণ্টনে সার্ক দেশের মতো একই বৃত্তির আওতায় মিয়ানমারের জন্য এমবিবিএসে ৫টি ও বিডিএসে ২টি, ফিলিস্তিনের জন্য এমবিবিএসে ১৮ ও বিডিএসে ৩টি এবং অন্য সব দেশের জন্য এমবিবিএসে ৪৯ ও বিডিএসে ২২টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। সব মিলিয়ে নন-সার্ক দেশের জন্য এমবিবিএসে ৭২ ও বিডিএসে ২৭টি, অর্থাৎ মোট ৯৯টি আসন রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুননিউজিল্যান্ড আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যে নতুন সুযোগ দিল ১৬ নভেম্বর ২০২৫