‘লাগাইয়া পিরিতের ডুরি’ গানের স্রষ্টা খোয়াজ মিয়া আর নেই
Published: 27th, June 2025 GMT
‘লাগাইয়া পিরিতের ডুরি, আলগা থাকি টানেরে, আমার বন্ধু মহা জাদু জানে’ শ্রোতাপ্রিয় এ গানের স্রষ্টা বাউল খোয়াজ মিয়া আর নেই। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টায় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
খোয়াজ মিয়া অনেকদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। এ বাউল সাধক ফকির দুর্বিন শাহর শিষ্য ছিলেন। আজ ২৭ জুন সকাল ১০টায় দৌলতপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলেজ মাঠে প্রয়াত বাউল খোয়াজ মিয়ার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। খোয়াজ মিয়া রচিত আরও জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে, ‘আমার ভয় লাগিল মনেরে, ভয় লাগিল মনে, আমায় কোনদিন ধরিয়া নিবো যম’, ‘যাইও না যাইও না কন্যাগো, কইন্যা যাইও না নাইওর, তুমি বিনে কেমনে থাকি একেলা বাসর কন্যাগো’, ‘ভুবন-মোহন রূপ তোমারই, দেখলে প্রাণ জুড়ায়, আমার বাড়ি আয়রে বন্ধু, আমার বাড়ি আয়’ প্রভৃতি।
বাউল খোয়াজ মিয়া ১৯৪২ সালের ১২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মৌলভি আজিজুর রহমান ও মা আছতুরা বিবি। খোয়াজ শৈশব থেকেই ছিলেন সংগীতপ্রেমী মানুষ। পড়াশোনার চেয়ে বাঁশি বাজানো ও গান গাওয়ার প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল প্রবল। অভিভাবকদের কথা অমান্য করে তিনি গ্রামগঞ্জে গান-বাজনা করে বেড়াতেন। ১৯৬২ সালে তিনি মরমি সাধক দুর্বিন শাহর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে গানের মধ্যে আধ্যাত্মিক দর্শন ও মানবতাবাদী বার্তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নিজেকে নিবেদন করেন এই গুণী।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন
সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।
স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, “নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”
মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”
মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”
ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ