‘লাগাইয়া পিরিতের ডুরি, আলগা থাকি টানেরে, আমার বন্ধু মহা জাদু জানে’ শ্রোতাপ্রিয় এ গানের স্রষ্টা বাউল খোয়াজ মিয়া আর নেই। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টায় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

খোয়াজ মিয়া অনেকদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। এ বাউল সাধক ফকির দুর্বিন শাহর শিষ্য ছিলেন। আজ ২৭ জুন সকাল ১০টায় দৌলতপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলেজ মাঠে প্রয়াত বাউল খোয়াজ মিয়ার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। খোয়াজ মিয়া রচিত আরও জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে, ‘আমার ভয় লাগিল মনেরে, ভয় লাগিল মনে, আমায় কোনদিন ধরিয়া নিবো যম’, ‘যাইও না যাইও না কন্যাগো, কইন্যা যাইও না নাইওর, তুমি বিনে কেমনে থাকি একেলা বাসর কন্যাগো’, ‘ভুবন-মোহন রূপ তোমারই, দেখলে প্রাণ জুড়ায়, আমার বাড়ি আয়রে বন্ধু, আমার বাড়ি আয়’ প্রভৃতি।

বাউল খোয়াজ মিয়া ১৯৪২ সালের ১২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মৌলভি আজিজুর রহমান ও মা আছতুরা বিবি। খোয়াজ শৈশব থেকেই ছিলেন সংগীতপ্রেমী মানুষ। পড়াশোনার চেয়ে বাঁশি বাজানো ও গান গাওয়ার প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল প্রবল। অভিভাবকদের কথা অমান্য করে তিনি গ্রামগঞ্জে গান-বাজনা করে বেড়াতেন। ১৯৬২ সালে তিনি মরমি সাধক দুর্বিন শাহর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে গানের মধ্যে আধ্যাত্মিক দর্শন ও মানবতাবাদী বার্তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নিজেকে নিবেদন করেন এই গুণী।   
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি

পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।

মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।

এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।

মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।

পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।

ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ