বাংলাদেশ: ২৪৭ ও ওভারে ১১৫/৬। শ্রীলঙ্কা: ১১৬.৫ ওভারে ৪৫৮।

শ্রীলঙ্কা কেন যে আগের সেই ক্রিকেটটা খেলল না! আগের ক্রিকেট মানে কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, থিলান সামারাবীরারা যে ক্রিকেট খেলতেন সেটা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, সেশনের পর সেশন ধরে ব্যাটিং করে ক্লান্ত করে তুলতেন বাংলাদেশের বোলারদের। তাতেও হয়তো বাংলাদেশ হারত, তবু টেস্টে কিছু সময় তো গড়াত!

এই শ্রীলঙ্কা দলের গেমপ্ল্যান মনে হচ্ছে ভিন্ন ছিল। কলম্বো টেস্টের তৃতীয় দিনে তারা সম্ভবত চাইল দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে তাড়াতাড়ি খেলাটা শেষ করে দিতে। তাতে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই দিনের প্রথম সেশনটা দারুণ কাটল বাংলাদেশের। কিছুটা আক্রমণাত্মক খেলে শ্রীলঙ্কা এই সেশনে ১১১ রান তুলে দলের স্কোর ৬ উইকেটে ৪০১ করে ফেললেও হারিয়েছে ৪ উইকেট।

তাতে কী! লাঞ্চের পর বাকি ৪ উইকেটে আর মাত্র ৫৭ রান তুলে শ্রীলঙ্কার নেওয়া ২১১ রানের লিড অতিক্রম করাটাই তো এখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ নিয়ে ২৮টি টেস্ট খেলে একটি জয় আর ছয়টি ড্র বাদ দিলে বাকি ২১টিতেই বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে হেরেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার মাটিতে খেলা ১৬ টেস্টের একটিতেই কেবল একটু ছোট (৪ উইকেটে) হার। গলে ড্র করলেও কলম্বো টেস্ট হয়তো এই সফরেও আরেকবার সেই তেতো স্বাদ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশকে।

তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে ৩৮.

৪ ওভার খেলে ১১৫ রান করতে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর এটাই আসলে বাস্তবতা। শেষ বেলায় ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজের বিদায়ের পরই শেষ হয়ে যায় দিনের খেলা। শ্রীলঙ্কাকে আরেকবার ব্যাটিংয়ে নামাতে হলে বাকি ৪ উইকেটে করতে হবে আরও ৯৬ রান।

সিংহলিজে শ্রীলঙ্কার জয়টাকে এখন সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছে। সে আনুষ্ঠানিকতা সারতেও স্বাগতিকদের আজ খুব বেশ অপেক্ষা করতে হওয়ার কথা নয়। দিন শেষে ১৩ রানে অপরাজিত থাকা লিটন দাস ছাড়া স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে যে আর কেউ নেই! সে জন্যই বলা, শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা একটু ধরে খেললে বাংলাদেশও আরেকটু পরে নামতে পারত ব্যাটিংয়ে। অবশ্যম্ভাবী হারের শঙ্কা হয়তো তখন তৃতীয় দিনের শেষ সেশনেই এতটা জীবন্ত হয়ে উঠত না।

দুপুরে লাঞ্চের পর আর ১৩.৫ ওভার ব্যাট করেই অলআউট হয়েছে শ্রীলঙ্কা। এরপরই যেন অলআউট হওয়ার দিকে ছুটতে শুরু করে বাংলাদেশও! ২১১ রানের লিড অতিক্রম করতে নেমে দলের ৩১ রানের মাথায় চার বলের ব্যবধানে আউট দুই ওপেনার এনামুল হক ও সাদমান ইসলাম। মুমিনুল হকের আউটে অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের সঙ্গে ৩২ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি ভাঙার পর ৭০ রানে ফিরে যান নাজমুল নিজেও। দলের ১০০ রানের সময় লিটনের সঙ্গে ৩০ রানের জুটি ভেঙে প্রবাত জয়াসুরিয়ার বলে বোল্ড মুশফিক।

আবারও কেন বাংলাদেশের এমন ব্যাটিং বিপর্যয়, সেটির সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন। তৃতীয় দিনের উইকেট স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয় দিনের মতো হওয়ার কথা নয়। তবে সেটা আবার এতটাও ভিন্ন নয় যে খেলাই যাবে না। সিংহলিজের ইতিহাস বরং বলে এখানে দ্বিতীয় দিনের মতো তৃতীয় দিনেও ব্যাটিং করা সহজ। উইকেটে বাউন্স ছিল, স্পিনাররা মাঝেমধ্যে ভালো টার্ন পেয়েছেন; এগুলো খুব স্বাভাবিকই। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে জবাব ছিল না এই বোলিংয়েরও।

উইকেটের সুবিধা বাংলাদেশের বোলাররা যে পাননি, তা–ও নয়। তাইজুল যে বলে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে এলবিডব্লু করলেন, অনেকটাই বাঁক খেয়ে ঢুকেছিল সেটি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি লঙ্কান অধিনায়ক। কিছুটা মেরে খেলে ৪১ বলে ৩৩ রান করা কামিন্দু মেন্ডিসকেও বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের বোলার–ফিল্ডারদের আপিলের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

সকালে বাংলাদেশের ভয়টা বেশি ছিল পাথুম নিশাঙ্কাকে নিয়ে। কিন্তু নিশাঙ্কা নন, শ্রীলঙ্কার দ্রুত রান তোলার কাজটা করেন কুশল মেন্ডিস। দ্বিতীয় দিন শেষে ১৪৬ রানে অপরাজিত থাকা নিশাঙ্কা আর মাত্র ১২ রান করে দিনের ষষ্ঠ ওভারে তাইজুলের ঝুলিয়ে দেওয়া প্রথম বলেই আউট। পরপর দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করা লঙ্কান ওপেনার সামনে এগিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন শর্ট কাভারে এনামুল হকের হাতে।

তৃতীয় দিন সকাল সকালই নতুন বল নেওয়ার সুযোগ আসে বাংলাদেশের। উইকেট তখনো অতটা না ভাঙলেও নতুন বলে ভালো বাউন্স, কখনো কখনো টার্নও পাচ্ছিলেন স্পিনাররা। তাইজুলের বাঁহাতি স্পিন খেলতেই বেশি কষ্ট হচ্ছিল শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের। পরে এসে অফ স্পিনার নাঈম হাসানও ভালো বোলিং করেছেন। একটা সময়ে তো দুজনই তিনটি করে উইকেট নিয়ে ৫ উইকেট নেওয়ার অলিখিত প্রতিযোগিতায়ও নেমেছিলেন।

তাতে বিজয়ী তাইজুলই। আগের দিন ওপেনার লাহিরু উদারার উইকেট নেওয়া বাঁহাতি স্পিনার আজ নিশাঙ্কার পর ফেরান ধনাঞ্জয়া, থারিন্দু রত্নায়েকে আর আসিতা ফার্নান্দোকেও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটি তাঁর দ্বিতীয় ৫ উইকেট, টেস্টে ক্যারিয়ারে ১৭তম, আর দেশের বাইরে পঞ্চম।

নাঈম উইকেট নিয়েছেন ৮৭ রানে ৩টি। বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল কামিন্দুকে ফেরানো। কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে তাঁর জমে যাওয়া ৪৯ রানের জুটিটা ভেঙেছে তাতে। পেসার নাহিদ রানার নেওয়া প্রবাত জয়াসুরিয়ার উইকেটটি সিরিজেই তাঁর প্রথম। নাহিদ রানা অবশ্য নিজেকে কিছুটা দুর্ভাগাও ভাবতে পারেন। স্টাম্প স্পর্শ করে যাওয়া একটি বলে বেল পড়েনি, নইলে কামিন্দুর উইকেটটিও হতে পারত তাঁর।

তবে কুশল মেন্ডিস এর মধ্যেই খেলেছেন ওয়ানডে সুলভ এক ইনিংস। দলের ৩৩৫ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে নাইটওয়াচম্যান প্রবাত জয়াসুরিয়া আউট হওয়ার পর উইকেটে আসেন, রান আউট হয়ে ফেরেন নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে। এই সময়ের মধ্যে কামিন্দু, সোনাল দিনুশা, থারিন্দু রত্নায়েকে আর বিশ্ব ফার্নান্দোর সঙ্গে তাঁর জুটিগুলোতে সব মিলিয়ে যোগ হয় ১২৩ রান, যার ৮৪–ই কুশলের ব্যাট থেকে আসা। ৮৭ বলের ইনিংসে বাউন্ডারি আটটি, নাঈমকে তাঁর পরপর দুই ওভারে স্কয়ার লেগ আর লং অন দিয়ে মেরেছেন দুটি ছক্কাও।

বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আসা সুন্দর সকালের পরও কলম্বোয় কাল দিন শেষ হলো হারের সামনে দাঁড়িয়ে। চতুর্থ দিনের জন্য পড়ে থাকল কেবল সিরিজ হারের আনুষ্ঠানিকতা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন ৪ উইক ট র উইক ট উইক ট ন ত ইজ ল হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি

পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।

মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।

এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।

মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।

পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।

ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ