দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করার পর মেয়াদোত্তীর্ণ চাল, মসুর ডাল ও ধানসহ ৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মূল্যের খাদ্যশস্য অবৈধভাবে মজুতের অভিযোগে গুদাম মালিক ও ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত) সোহেল আহমেদ বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাইক্রো গ্রেইন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুল হাকিম মণ্ডল (৬২) ও প্রতিষ্ঠানটির খাদ্যগুদামের ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির। তাঁদের মধ্যে হাকিম জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুর মহল্লার বাসিন্দা এবং হুমায়ুন হাকিমপুর পৌরসভার উত্তর বাসুদেবপুর মহল্লার বাসিন্দা।

এর আগে গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায় ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহমেদের উপস্থিতিতে ওই ব্যবসায়ীর খাদ্যগুদাম থেকে ২ হাজার ২৫১ টন চাল, মসুর ডাল ও ধান জব্দ করা হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার থানায় করা মামলায় জব্দের পরিমাণে ৯১৩ টনের গরমিল পাওয়া যায়।

মামলার এজাহার ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২৫ জুন সকালে হাকিমপুর পৌরশহরের উত্তর বাসুদেবপুর এলাকায় মেসার্স মাইক্রো গ্রিন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ব্যবসায়িক খাদ্যগুদামে অবৈধভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ চাল, মসুর ডাল ও ধান মজুত আছে, এমন তথ্য পায় উপজেলা প্রশাসন। পরে ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ইউএনও অমিত রায় ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহমেদ থানা-পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তিনটি খাদ্যগুদামে অভিযান চালান। এ সময় ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির পর অবৈধভাবে মজুদ রাখা মেয়াদোত্তীর্ণ সেদ্ধ চাল, মসুর ডাল ও ধান মজুতের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে খাদ্যগুদাম থেকে ৫ হাজার ২৫৮ বস্তায় ১৪৯ দশমিক ৭৭৬ টন সেদ্ধ চাল, ৬৭০টি বস্তায় ৩২ দশমিক ৮৩০ টন মসুর ডাল এবং ১৮ হাজার ১৯৪টি বস্তায় ১ হাজার ১৫৫ দশমিক ৭৭৯ টন ধান জব্দ করা হয়। জব্দ করা খাদ্যশস্যের মোট মূল্য ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৭ হাজার ২৪৮ টাকা টাকা বলে উপজেলা খাদ্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়। ব্যবসায়িক গুদামে অবৈধভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যশস্য মজুতের অভিযোগে তিনটি গুদাম সিলগালা করে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় বাদী হয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার হাকিমপুর থানায় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন ২০২৩ এর ৪ ধারায় একটি মামলা করেন।

খাদ্যশস্য জব্দের হিসাবে গরমিলের বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধভাবে মজুতের অভিযোগে ওই দিন তাৎক্ষণিক যে গণনা করা হয়েছিল, সেটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। পরে আবার গণনার জন্য ইউএনওর কাছে আবেদন করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে থানার ওসি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতিতে গুদামের সিলগালা খুলে আবার গণনা করা হয় এবং সংখ্যা আবার নির্ধারণ করা হয়।

হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, হিলিতে একটি ব্যবসায়িক খাদ্যগুদামে অবৈধভাবে চাল, মসুর ডাল ও ধান মজুতের অভিযোগে হাকিমপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহমেদ থানায় একটি মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ দ যশস য ব যবস য় ও উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না: শেখ বশিরউদ্দীন

ভারত আরও চারটি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, এমন কোনো বিষয়ে ছাড় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়নি। দুই দেশের মধ্যে খাদ্য ও কৃষিপণ্যের আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি মেটানো হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে দর–কষাকষি চালিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে ১৫ শতাংশের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ।

আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা থাকলেও এতটা অস্থিতিশীল নয় যে ব্যবসা–বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। তাই রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে তাতে সমস্যা হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের নতুন বিধিনিষেধের আওতায় সে দেশের ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটের পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারবেন না। শুধু দেশটির মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানির সুযোগ আছে। এমন বিধিনিষেধ দিয়ে গতকাল সোমবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালকের কার্যালয় (ডিজিএফটি) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে গত কয়েক মাসে কয়েক দফায় অশুল্ক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। এর আগে গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দেয় দেশটি। তার আগে ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করে দেশটি।

এদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভারত বাতিল করার এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করেছে। এর আগে বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ মাস পর হিলি বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু
  • ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের উদ্বেগজনক ধারা চলছে
  • ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না: শেখ বশিরউদ্দীন
  • বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানিতে নতুন বিধিনিষেধ ভারতের